শেরপুরঃ চলতি মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা বকেয়া থাকায় শামীম মিয়া নামের এক পরীক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক নুরুল হকের বিরুদ্ধে।
জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার ঘাগড়া দক্ষিণপাড়া ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই প্রধান শিক্ষকের বিচার দাবি ও ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার (৩ মে) মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয় জনগণ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার কর্মীরা।
শিক্ষার্থী শামীম মিয়ার অভিযোগ, ফরম পূরণের কিছু টাকা বকেয়া থাকায় পরীক্ষার আগে প্রবেশপত্র আনতে গেলেও তা দেননি প্রধান শিক্ষক। পরে প্রধান শিক্ষক তাকে পরীক্ষা দিতে যেতে বলেন এবং পরীক্ষা শুরুর আগে কেন্দ্রে গিয়ে তাকে প্রবেশপত্র সংগ্রহের কথা বলেন। তবে প্রথম দিনের বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা দিতে গিয়ে প্রধান শিক্ষককের দেখা পায়নি সে। এমনকি তার স্কুলের কোনো শিক্ষককেই খুঁজে পায়নি পরীক্ষা কেন্দ্রে। ফলে পরীক্ষার হলেও বসা হয়নি তার।
শামীম মিয়া শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার জুলগাঁও গ্রামের মৃত আব্বাস আলীর ছেলে। উপজেলার ঘাগড়া দক্ষিণপাড়া ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের চলতি এসএসসি পরীক্ষার্থী সে।
শামীম মিয়া বলে, “আমার বাবা নাই। খুব কষ্ট করে টাকা-পয়সা জোগাড় করে পড়ালেখা চালিয়ে আসছি। অভাব-অনটনের কারণে ফরম পূরণের সময় এক হাজার টাকা কম দিছিলাম। কিন্তু স্যার কম নিতে রাজি হয়নি। স্যারকে বারবার অনুরোধ করেছি, বাকি টাকাটা পরে দিয়ে দেবো। এরপর সময়মতো অ্যাডমিট কার্ড নিতে গেছি। স্যার ওইদিন বলছে, টাকা আনসস? আমি স্যারকে বলেছি, ‘স্যার, টাকাটা জোগাড় করতে পারিনি। তবে টাকাটা আমি পরে দিয়ে দেবো, স্যার।’ তখন স্যার বললো, ‘তুই পরীক্ষা দিবার যাইস, তখন অ্যাডমিট দিমুনি’। কিন্তু পরীক্ষা দিতে যাইয়া দেখি স্যার আসে নাই। এমনকি আমাদের স্কুলের কোনো স্যারকেই খুঁজে পাইনি।”
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শামীম বলে, ‘অ্যাডমিট কার্ড না পাওয়ায় আমার পরীক্ষায় বসার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলো। হেড স্যার আমার জীবনডা শেষ করে দিলো।’
শামীমের মামা আজাদ মিয়া বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের জন্য তিন হাজার টাকা করে নেন প্রধান শিক্ষক নুরুল হক। তখন শামীম দুই হাজার টাকা দিয়েছিল। সে পরে আরও এক হাজার টাকা দিতেও চেয়েছিল।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার আগে সব পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দিয়ে দিলেও মাত্র এক হাজার টাকার জন্য শামীমের প্রবেশপত্র দেননি প্রধান শিক্ষক। এতে শামীমের ১০ বছরের স্বপ্ন ধুলোয় মিশে গেলো। এমন শিক্ষকদের জন্য একজন ছাত্রের ভবিষ্যৎ খুইয়ে যাবে! এর বিচার চাই।’
এ ঘটনার বিচার চেয়ে শামীমের মা শিরিনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী মারা গেছে। আমি অনেক কষ্ট করে ভাইয়ের বাড়িতে থেকে পোলাডারে পড়াইতাছিলাম। কিন্তু স্যার আমার পোলাডার সর্বনাশ করে দিছে। আমি ওই শিক্ষকের বিচার চাই।’
এ ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় কোয়ারীরোড এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তারা বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই শিক্ষককে আইনের মুখোমুখি করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে ঘাগড়া দক্ষিণপাড়া ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘শুনেছি প্রধান শিক্ষক অসুস্থ তাই স্কুলে আসেননি। আমি নিজেও বারবার ফোন দিয়েছি, কিন্তু ফোনে পাইনি।’
মালিঝিকান্দা ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, শামীম নামের ছেলেটার ফরম পূরণের বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। আমি বিষয়টা জানলে পরিষদ থেকে বা ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করতাম।
বিষয়টিকে মর্মান্তিক উল্লেখ করে এর উপযুক্ত বিচার চেয়েছেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শেরপুর জেলা শাখার সভাপতি মেরাজ উদ্দিন। তিনি বলেন, কেবল টাকার জন্য যদি পরীক্ষার হলে বসতে না পারে, তাহলে প্রধান শিক্ষকের এমন কাণ্ডে সচেতন সবাই বিব্রত। এমন দরিদ্র ও এতিম শিক্ষার্থীর শিক্ষার ব্যয়ভার প্রতিষ্ঠান থেকেই চালিয়ে নিতে পারে। ওই শিক্ষকের উপযুক্ত বিচার চাই।
ঝিনাইগাতী ইউএনও ফারুক আল মাসুদ বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারকে উপজেলায় এসে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এখনো তারা কোনো অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেজুয়ান আহম্মেদ বলেন, বিষয়টি জেনে আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে খোঁজ নিতে বলেছি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৩/০৫/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তা