ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের সরকারি প্রকল্পই ঝরে পড়ার উপক্রম

কুড়িগ্রামঃ ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর অধীনে ‘আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে এ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বেসরকারি সংস্থা সোসাইটি ফর পিপলস্ ইনিশিয়েটিভসের (এসপিআই) বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শিখন কেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ না করা, পরিচ্ছন্নতার বরাদ্দ না দেওয়া, শিখন কেন্দ্রের ভাড়া বরাদ্দের অর্ধেক দেওয়া ও শিক্ষকদের উৎসব ভাতা দিয়ে তা ফেরত নেওয়ার মতো অভিযোগ উঠেছে।

এসপিআইয়ের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করে শিক্ষকেরা জানান, এসপিআইয়ের ৭০টি উপানুষ্ঠানিক শিখন কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে শিক্ষক ও ৩০ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছে। এ ছাড়া ছয়জন সুপারভাইজার রয়েছেন। শিখন কেন্দ্রগুলোর ২ হাজার ১০০ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেকে প্রতি মাসে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত খাতা পাওয়ার কথা। গত এক বছরে শিক্ষার্থীদের মাত্র দুইবার খাতা দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১০ মাস যাবৎ খাতা দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া পেনসিল, শার্পনার ও ইরেজার দেওয়ার কথা থাকলেও সেগুলো নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে না।

এমনকি প্রতিটি শিখন কেন্দ্র পরিষ্কার রাখার জন্য প্রতি মাসে ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু গত এক বছরে শিখন কেন্দ্রগুলোর কোনো কেন্দ্রই এই বরাদ্দ পায়নি। প্রতিটি শিখন কেন্দ্রের ভাড়া বাবদ বরাদ্দ ১ হাজার ২০০ টাকা। শিখন কেন্দ্রের ভাড়া বাবদ দেওয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা। শিক্ষকদের অনেক সময় নিজের টাকায় শিখন কেন্দ্রের ভাড়া পরিশোধ করতে হয়।

শিক্ষকেরা আরও অভিযোগ করেন, গত ঈদুল আজহায় শিখন কেন্দ্রের ৭০ জন শিক্ষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে উৎসব ভাতা বাবদ ৫ হাজার করে টাকা পাঠিয়ে তা আবার ফেরত নেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সুপারভাইজার ও শিক্ষক নিয়োগে অর্থ গ্রহণ করাসহ এক অফিস সহকারীকে এক বছরের বেতন না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রামের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, গত ঈদে বোনাস বাবদ ৫ হাজার টাকা দিয়েছিল। পরে তা ফেরত নিয়েছে। কেন্দ্র ভাড়া বাবদ মাসে ৬০০ টাকা দেওয়া হয়। পরিচ্ছন্নতার জন্য কোনো টাকা পাওয়া যায়নি। শিক্ষক নিয়োগের সময় কিছু টাকা খরচ করতে হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা দুই থেকে তিনবার তিনটি করে খাতা পেয়েছে। এরপর আর খাতা পায়নি। শিখন কেন্দ্রগুলো সবাই মিলে পরিষ্কার করে।

নির্বাহী পরিচালক তানিয়া মোর্শেদ বলেন, কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে নিয়মিত শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ সম্ভব হয়নি। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রোগ্রাম ম্যানেজার আদনান মোর্শেদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

প্রোগ্রাম ম্যানেজার আদনান মোর্শেদের বক্তব্য জানতে তাঁর মোবাইল ফোনের নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কুড়িগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক মোশফিকুর রহমান বলেন, অনিয়মের অভিযোগ সরেজমিনে তদন্ত করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৮/১০/২০২৩   

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়