জুতা না পরায় শিক্ষার্থীকে পেটালেন প্রধান শিক্ষক

ফরিদপুরঃ জেলার ভাঙ্গায উপজেলায় স্কুলে জুতা না পরে আসায় মো. তাসফিম আলী (১৩) নামে এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করেছেন প্রধান শিক্ষক। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন ওই স্কুলছাত্রের অভিভাবক।

রবিবার (১৫ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহত ওই শিক্ষার্থী ভাঙ্গা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে রাস্তা সংস্কারের কারণে রাস্তার পাশে থাকা ভাঙ্গা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি (স্কুল বোডিং) পরিত্যক্ত টিনের ঘর ভেঙে ফেলতে গেলে ওই প্রধান শিক্ষক সরকারি কাজে বাধা দেন। পরবর্তীতে ভাঙ্গা পৌরসভার ১নং প্যানেল মেয়র তাকে জানান এটা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে ভাঙ্গা হচ্ছে। আপনার যদি কিছু বলার থাকে তো বিদ্যালয়ের সভাপতি উপজেলার নির্বাহী অফিসারকে জানান। এর জের ধরে আমার অসুস্থ (স্কিন এলার্জি) ছেলেকে স্কুলে জুতা না পরে আসার কারণে মারধর করেন। পরবর্তীতে ওই শিক্ষার্থীর মা স্কুলে প্রধান শিক্ষকের কাছে গেলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও খারাপ আচরণ করেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তাসফিম আলী বলে, ‘রোববার স্কুলে যাবার পর তৃতীয় বেলের সময় হেড স্যার রুমে আসেন যারা জুতা পরে আসে নাই তাদের বাইরে আসতে বলেন। আমার পায়ে জুতা না থাকায় সেখানে তিনি আমাকে বিদ্যুতের ক্যাবল দিয়ে পেটান আর বলেন মাস্তান হয়ে গেছিস। পরে বাসায় আসলে অসুস্থ হয়ে গেলে আম্মু জিজ্ঞেস করলে বলি আমাকে হেড স্যার মেরেছে।’

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা ভাঙ্গা পৌরসভার ১ প্যানেল মেয়র মো. আইয়ুব আলী বলেন, ‘আমার সঙ্গে বিরোধের জের ধরে আমার ছেলেকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর পৈশাচিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমার ছেলেকে বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি আমার ছেলে অসুস্থ তাই জুতা ব্যবহারে ডাক্তার নিষেধ করেছেন। আমার ছেলে যেন স্কুলে জুতা ছাড়া আসতে পারে তার জন্য মৌখিক অনুমতি নিয়েছি। এছাড়াও এই অসুস্থতার জন্য আমরা বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে ভারতের চেন্নাইতে চিকিৎসার জন্য যাই। এরকম অনেক শিক্ষার্থীকেই বেধড়ক মারধরের অভিযোগ রয়েছে এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তাই আমার দাবি যথাযথ কর্তৃপক্ষ যেন এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা তানিয়া খানম বলেন, ‘আমার ছেলেটার স্কিন এলার্জি থাকার কারণে জুতা ব্যবহার করতে পারেন না। জুতা পরলে ঘা হয়ে যায়। তাই আমার ছেলে স্কুলে জুতা পরে যায় না। এর জন্য কি আমার ছেলের ওপর এমন অমানবিক নির্যাতন! এরকম অনেক শিক্ষার্থীকেই তিনি মারধর করেন। তাহলে একটা অসুস্থ বা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী কি স্কুলে পড়ালেখা করবে না? আর আমাকে বলে আপনার ছেলেকে ছুটিতে নেন। এ রকম চিকিৎসা তো দীর্ঘমেয়াদী। এর জন্য যদি বছরের পর বছর ছুটিতে থাকে তাহলে তো পড়াশোনা করতে পারবে না। স্কুল শেষে আমার ছেলেটা বাসায় আসলে অসুস্থ হয়ে যায়। পরে তাকে নিয়ে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসক দেখাই। এছাড়াও আমি স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।’

ভাঙ্গা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার হোসেন জানান, তার বিদ্যালয়ে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম। আমি আগামীকাল সোমবার স্কুলে গিয়ে বিষয়টি জানব। যদি অভিযোগের সত্যতা পাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য চিঠি পাঠাব।’

ভাঙ্গার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমি যতটুকু শুনেছি স্কুল ড্রেস না পরার কারণে প্রধান শিক্ষক বাচ্চাদের শাসন করছে। তবে মারধরের বিষয়টি জানি না। যদি এরকম কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৬/১০/২০২৩    

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়