কুমিল্লাঃ জেলার ব্রাহ্মণপাড়ায় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম সুজন জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বেড়াখলা আব্দুল মতিন খসরু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ পদে থেকে তিনি উপজেলা পরিষদ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। এ নিয়ে একজন সহকারী শিক্ষক জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একাধিক অভিযোগ করেছেন। এর প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক হিসাবে কিভাবে নিয়োগ পেলেন এর কোনো তথ্য প্রমাণ মেলেনি। এমপিও প্রত্যায়নে ২০০৪ সালে তার নিয়োগ দেখানো হয়েছে। ওই সময় ডিজির প্রতিনিধি হিসাবে একই উপজেলার ভগবান স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাহেরা বেগমের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তাহেরা বেগম প্রধান শিক্ষক হিসাবে ২০০৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি যোগ দিয়েছেন। আমিনুল ২০০৪ সালে তাহেরা বেগমকে ভগবান স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে উল্লেখ করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তথ্য গোপন এবং জালিয়াতি করেছেন। নিয়োগে তিনি আরেক শিক্ষকের স্বাক্ষরও জালিয়াতি করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুলের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগের মধ্যে দুটিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত বলে প্রতিবেদন দিয়েছেন। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ এবং স্বাক্ষর জাল করায় আমিনুলের এমপিও বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
এছাড়া ২০২১ সালের ৯ জুন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাছিনা ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, মফিজ উদ্দিনসহ ৯ প্রধান শিক্ষক আমিনুলের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। তৎকালীন ইউএনও ফৌজিয়া সিদ্দিকা এমন ১০টি অভিযোগের মধ্যে অধিকাংশের সত্যতা পান। তিনি উল্লেখ করেন প্রধান শিক্ষক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর পাঁচ বছরের ছুটি নিলেও তিনি বিদ্যালয়ের কাউকে জানাননি এবং কাউকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবেও দায়িত্ব দেননি। একই সঙ্গে তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত বেতন ও উপজেলা পরিষদের সম্মানি ভাতা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র লঙ্ঘন করেছেন। এসব কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ায় দ্রুত সভাপতি নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে তিনি প্রতিবেদন দাখিল করেন।
ভুক্তভোগী সহকারী শিক্ষক সাহিদা বেগম বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর বেতন পেয়ে না পেয়ে শিক্ষকতা করেছি। আমাদের পরিশ্রমের ফলে আজ যখন বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত হলো, তখন প্রধান শিক্ষক এমপিওভুক্তির কথা বলে দুই দফায় ৬৫ হাজার টাকা নিয়েও আমাকে এমপিওভুক্ত করেননি। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি এবং আমাকে এমপিওভুক্তকরণ করে পাঠদানের সুযোগ দিতে প্রশাসনসহ সবার কাছে আহ্বান জানাই।
তদন্তকারী কর্মকর্তা সমাজসেবা অফিসার মো. মঈন উদ্দিন হাসান বলেন, একাধিক অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় প্রধান শিক্ষক আমিনুলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছি। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, তদন্তে আমিনুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তার নিয়োগ বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করেছি। এখন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।
তবে, আমিনুল বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই আমি প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ পেয়েছি। কিন্তু তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে ব্যক্তিগত বিরোধ থাকায় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করেই আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/৩০/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়