জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকরা ২৩ দিন ধরে ফুটপাতে

গত ১৬ জুন থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাতে অবস্থান করছেন বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। রোদ-বৃষ্টিতে পুড়ে একই স্থানে রয়েছেন তাঁরা। কিন্তু এ ২৩ দিনেও সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। এর পরও তাঁরা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনড়।

জানা যায়, গত ১৬ থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন শিক্ষকরা। এরপর ২৯ জুন প্রতীকী অনশন, ৩০ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত তাঁরা অনশন পালন করেন। অবশেষে ৩ জুলাই থেকে আমরণ অনশন পালন করছেন শিক্ষকরা। তাঁরা প্রথমে প্রেস ক্লাবের সামনে বসতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে পরামর্শ করেই কদম ফোয়ারার আগ পর্যন্ত ফুটপাত দখল করে নেন তাঁরা।

শিক্ষকরা বলছেন, ২০১৩ সালে সাড়ে ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করার পরও চার হাজার ১৫৯টি স্কুল বেসরকারিই রয়ে গেছে। এতে চার হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যাও সাত লাখের কাছাকাছি।

তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, নতুন করে আর কোনো প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের সুযোগ নেই। এখন যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁরা মূলত জাতীয়করণের ঘোষণার পরই স্কুলগুলো গড়ে তুলেছেন। অনেকেই কিন্ডারগার্টেন হিসেবে চালাতেন। সেগুলো এখন জাতীয়করণের জন্য দাবি তুলেছেন। এরই মধ্যে প্রজ্ঞাপন করেও জানানো হয়েছে, আপাতত আর কোনো বিদ্যালয় জাতীয়করণ হবে না।

গত রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কখনো মুষলধারে আবার মাঝেমধ্যে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যেই ২৫০ থেকে ৩০০ শিক্ষক ফুটপাতে পলিথিন টাঙিয়ে এর নিচে অবস্থান করছিলেন। নিচেও পলিথিন ও কাগজ বিছানো। পাশ থেকে বৃষ্টি অনেককে ভিজিয়ে দিচ্ছিল। অনেকেই শুয়ে ছিলেন। আবার মাইকে জাতীয়করণের দাবিতে বক্তব্যও চলছিল।

একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনো কোনো স্কুল ২০১৩ সালে জাতীয়করণের ঘোষণার আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে তখন কত শিক্ষার্থী ছিল, সেটা জানা যায়নি। আবার কোনো কোনো স্কুল জাতীয়করণের ঘোষণা ঘিরেই গড়ে ওঠে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের নামটলা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুল্লাহ কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁর স্কুলে শিক্ষার্থী ১৭২ জন। সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে সরকারি স্কুল। ২০১০ সালে এইচএসসি পাস করার পর থেকে তিনি ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জেরই শেখ রাসেল বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল খালেক। তাঁর বিদ্যালয়ের আশপাশে সরকারি স্কুল আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি প্রথমে জানাতে পারেননি। পরে অবশ্য মনে করে একটি স্কুলের নাম বলেন। তিনি জানান, ২০১২ সাল থেকে তিনি ওই স্কুলে আছেন।

তবে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ধলা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শম্পা ঘোষ জানান, তাঁর স্কুলে ১২২ জন শিক্ষার্থী। তিন কিলোমিটারের মধ্যে আর কোনো সরকারি স্কুল নেই। ২০১২ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির যুগ্ম মহাসচিব বদরুল আমিন সরকার বলেন, ‘আমাদের সব স্কুলই ২০১২ সালের আগে প্রতিষ্ঠিত। অথচ ২০১৩ সালে জাতীয়করণের সময় আমাদের বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’