জাতীয়করণ হলেও যুবলীগ নেতার উৎপাতে বেতন পাচ্ছেন না শিক্ষকরা!

গুরুদাসপুরের সরকারি বঙ্গবন্ধু টেকনিক্যাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ

ঢাকাঃ প্রতারণার মাধ্যমে শুরু। এরপর হামলা-মামলা। সবশেষ নিজেকে সরকারি কলেজের সভাপতি দাবি করে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগদান। মূলত গুরুদাসপুরের সরকারি বঙ্গবন্ধু টেকনিক্যাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজটি নিজের কব্জায় নিতে এতসব কাণ্ড ঘটিয়েছেন জালাল শাহ নামের এক যুবলীগ নেতা।

প্রতিষ্ঠানটিতে সাড়ে ৫শ‘র বেশি শিক্ষার্থী থাকলেও যুবলীগ নেতার এসব কাণ্ডে সরকারি এই কলেজটিতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন বন্ধ রয়েছে। জালাল শাহ উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি নিজেকে নাজিরপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দেন। তার বিরুদ্ধে ওএমএসের সরকারি চাল চুরির অভিযোগও রয়েছে।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ২০২০ সালে কলেজটি সরকারিকরণের ঘোষণা আসে। সেই থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন।

যেভাবে কলেজটি প্রতিষ্ঠা হলো গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর গ্রামে ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু টেকনিক্যাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে ১০৭ শতাংশ জমি দান করেন জালাল শাহের চাচা আব্দুর রাজ্জাক, লোকমান হোসেন, বারেক শাহ ও রবিউল শাহ। তখন গুরুদাসপুরের সরকারি সামসুজ্জোহা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ জালাল উদ্দিনকে পরিচালনা কমিটির সভাপতি দেওয়া হয়। অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয় সাইদুল ইসলাম সাঈদকে।

দানকরা জমি নিয়ে প্রতারণা ও কলেজ স্থানান্তর

বর্তমানে নিজেকে সভাপতি দাবি করা যুবলীগ নেতা জালাল শাহের পাঁচ চাচার দান করা ১০৭ শতাংশ জমি নামজারি করতে গিয়ে ২০১৫ সালে বেরিয়ে আসে আসল সত্যি। মূলত অন্যত্র বিক্রি করা জমি প্রতারণার মাধ্যমে কলেজে দান করেছিলেন তারা।

জমির প্রকৃত মালিক আতাহার আলী, ইউনুছ আলী, সোহরাব ও হবিবর রহমান জানান, দীর্ঘদিন আগে জালাল শাহদের কাছ থেকে তারা ১০৭ শতাংশ জমি কিনেছিলেন। তাদের নামে নামজারিও রয়েছে। কিনে নেওয়ার সত্তে তাদের ওই জমির ওপর কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। পরে জালাল শাহরা নিজেরা দাতা সেজে প্রতারণার মাধ্যমে জমিটি কলেজে দান করেছিলেন। তারা বাধা দেওয়ায় কলেজটি গুরুদাসপুর পৌর শহরে স্থানান্তর করেছেন অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলাম।

কলেজটি কব্জায় নিতে জালাল শাহের যত অপচেষ্টা

শিক্ষক জামাল উদ্দিন, জিল্লুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, কামরুন্নাহার লায়লা ও আজাদুল ইসলাম জানান, ২০২০ সালে কলেজটি সরকারিকরণের ঘোষণা আসার পর থেকে কলেজের ওপর নজর পড়ে জালাল শাহের। জালাল শাহ নিজেকে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দাবি করে ২০১৫ সালের তারিখে বাবুল আক্তার বাবুকে অধ্যক্ষ সাজিয়ে আব্দুল মতিন, জিয়াউর রহমান, জহুরুল হক, মিন্টু, আব্দুল মালেক, আনিসুর রহমানসহ অন্তত ৬১ জনকে শিক্ষক-কর্মচারী পদে নিয়োগ দেন। নিয়োগ দিয়েই ক্ষ্যান্ত হননি। কলেজটি কব্জায় নিতে ক্যাম্পাস স্থানান্তর চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন। আদালতের নোটিশ গোপন করে একতরফা রায়ও পেয়েছেন তিনি। পরে কলেজের পক্ষ থেকে আপিল করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ জালাল উদ্দিন বলেন, তিনি সভাপতি হলেও নামের মিল থাকায় জালাল শাহ অবৈধভাবে নিজেকে সভাপতি দাবি করে নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ।

যুবলীগ নেতা জালাল শাহ জানান, ২০১৫ সালে তিনি প্রয়াত সংসদ সদস্যের সহায়তায় বাবুল নামের একজনকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছেন। তারপর থেকেই তারা পুরনো ক্যাম্পাসে শিক্ষক-কর্মীচারী নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তা সঠিক নয়।

জালাল শাহের কাছ থেকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বাবুল আক্তার বাবুল বলেন, আদালতের রায় অনুযায়ী ক্যাম্পাস পূর্বের জায়গায় স্থানান্তরের নির্দেশনা দিলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তা মানছেন না।

কলেজের বর্তমান পরিস্থিতি

যুবলীগ নেতা জালাল শাহের দায়ের করা মামলার কারণে চারতলার ভবন বাতিল হয়ে গেছে। ফলে টিনের ছাউনি, টিনের বেড়ার ছয়টি জীর্ণ তিন কক্ষে এবং বাড়ান্দায় উচ্চ মাধ্যমিকের দুই বর্ষের ৫৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থীর পাঠদান চলে। একটি কক্ষে রয়েছে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব এবং দুটি কক্ষে চলে প্রশাসনিক কার্যক্রম।

অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলাম সাঈদ জানান, দীর্ঘদিন বিনা বেতনে শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেছেন তারা। অথচ সরকারিকরণের পর থেকে জালাল শাহ হামলা-মামলা করে চলেছেন। তাকে একাধিকবার মারধরও করেছেন জালাল শাহ। জালাল শাহের এমন উৎপাতে কলেজের অবকাঠামোগত উন্নয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। একইসঙ্গে পাঠদানেও ভোগান্তি বাড়ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি শ্রাবণী রায় বলেন, মামলা থাকায় প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা যাচ্ছে না। তাছাড়া জালাল শাহ নামের এক ব্যক্তি পৃথকভাবে একই কলেজের নামে বিকল্প জনবল দিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন তা বৈধ নয়।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২২/১০/২০২৩    

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়