জাতীয়করণ: বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা না হলে ১১ জুন থেকে লাগাতার ধর্মঘট

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের লক্ষ্যে আসন্ন বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা না হলে আগামী ১১ জুন, ২০২৩ থেকে অবিরাম ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)।

আজ শুক্রবার বিষয়টি শিক্ষাবার্তা’কে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) এর কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান।

সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের মাধ্যমিক শিক্ষার প্রায় ৯৫% পরিচালিত হয় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী দ্বারা। পরিতাপের বিষয় একই কারিকুলামের অধীন- একই সিলেবাস, একই একাডেমিক সময়সূচি, একই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ মাত্র ২৫% উৎসব ভাতা, ১,০০০ টাকা বাড়িভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানগণের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানগণের বেতন স্কেলের একধাপ নিচে প্রদান করা হয়। তাছাড়া সহকারি প্রধান শিক্ষকগণের উচ্চতর স্কেল প্রদান না করার ফলে উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকগণের বেতন স্কেল ও সহকারি প্রধান শিক্ষকগণের বেতন স্কেল সমান হওয়ায় সহকারি প্রধান শিক্ষকগণের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে।

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীগণ অবসরে যাবার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী টাকা পাওয়ার পূর্বেই অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন। তাছাড়াও কয়েক বছর যাবৎ কোন প্রকার সুবিধা না দিয়েই অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীগণের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪% কর্তন করা হচ্ছে যা অত্যন্ত অমানবিক।

ইউনেস্কো ও আইএলও’র সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষা খাতে বাজেটের ২০% অথবা জিডিপি’র ৬% বরাদ্দের কথা থাকলেও ২০২২-২৩ অর্থ বছরে জাতীয় বাজেটের ১১.৯২% অথবা জিডিপি’র ২% এরও কম বরাদ্দ রাখা হয়েছে।  জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে একটি যুদ্ধবিধস্ত দেশে প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছিলেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন। তাই মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ এখন সময়ের দাবি।

ধর্মঘটের বিষয়ে অধ্যক্ষ  বজলুর রহমান শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, আমরা সরকারকে অনেক সময় দিয়েছি। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে অনেকবার বৈঠকের চেষ্টা করেছি; কিন্তু তিনি সময় দেননি। তাই আমরা জাতীয়করণের এক দাবিতে আন্দোলনে নেমেছি। আগামী ১ বা ২ জুন বাজেট ঘোষণা করা হবে। এবারের বাজেটে যদি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের জন্য বরাদ্দ না রাখা হয়, তবে ১১ জুন থেকে আমরা ধর্মঘট শুরু করব। দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরব না।

অবিরাম ধর্মঘটের পূর্বে  শিক্ষক সংগঠনটি যেসব কর্মসূচী পালন করছে..

  • অবিরাম ধর্মঘট সফল করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সারাদেশে সাংগঠনিক সফর এবং মতবিনিময় সভা।
  • কেন্দ্র থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যন্ত সকল স্তরে “সংগ্রাম কমিটি” গঠন ও সংগ্রাম কমিটির আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মতবিনিময় সভা।
  • জাতীয়করণের সুফলভোগী- ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্যসহ সকল স্তরের অংশীজনের সাথে মতবিনিময়।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৬/০৫/২০২৩  

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তা’য়