জমিনেই যেন সাদা মেঘের ভেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

প্রকৃতি রূপে লাবণ্যে শ্যামল ছায়া বাংলাদেশে মাঠ-ঘাট, নদী-নালা ও বিলের পাড়ে বালুচরে পানির কলকলানিতে নীল আকাশে রুপালি তারায় ভরে উঠেছে কাশবন। ভাদ্র ও আশ্বিন মাস মিলে ‘শরৎকাল’; বাংলার ষড়ঋতুর তৃতীয় ঋতু। এই ঋতুতে বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপ ধারণ করে প্রকৃতি। নীল আকাশে ধবধবে পেঁজো তুলোর মতো মেঘ, আর মৃদু বাতাস। মেঘ মুছে যাওয়া বর্ষণ শেষের আকাশে হাজার হাজার তারা ঝিকমিক করে জ্বলছে। রোদে ঝল মল করছে চারিদিক। দেখা যাচ্ছে নীল আকাশ স্বচ্ছ সাদা মেঘ। আর সাদা মেঘের ভেলায় ভাসছে কাশফুলের ছোঁয়া। শরতের দিনে কখনো কাঠফাঁটা রোদ, আবার পরক্ষণেই ঝুম বৃষ্টি। এ বছর ভাদ্র মাসে শরতের এই চিরচেনা রূপ তেমন একটা দেখা মেলেনি। তবে আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহ পেরোতেই প্রকৃতি সাজিয়ে নিয়েছে নিজেকে। নদীর বাঁকে ফুটেছে সাদা ধবধবে কাশফুল। দৃষ্টিনন্দন এ কাশফুলের রাজ্য এখন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে পিরোজপুর ইউনিয়নের ভাটিবন্দর ও কান্দারগাঁওয়ে মধ্যবর্তী এলাকায় মেঘনা নদীর চরে। প্রায় ২০০ একর চরজুড়ে দেখা মেলে এমন কাশবনের। আর এ কাশবনের কাশফুলের ছোঁয়া নিতে এবং এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই ছুটে যান দর্শনার্থীরা। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ কাশবনে ছিল। এমন দৃশ্য অবশ্য প্রতিদিনের মানুষের আনাগোনা।

এখন প্রকৃতি হাওয়া বইছে শরৎকাল। আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘের ভেলা। নীল আকাশ জুড়ে অলস মেঘের অবাধ বিচরণ। খণ্ড খণ্ড মেঘের নিরুদ্দেশ যাত্রা। রোদের ঝলকানির পাশেই মেঘের ছায়া। মেঘ আর রোদের কানামাছি খেলার মাঝে বৃষ্টিও অংশ নিচ্ছে। এমন দিনে সোনারগাঁওয়ে দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাতে কাশফুলের ‘সাদা ডালি’ সাজিয়ে বসে থাকে কাশবন।

উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ভাটিবন্দর ও কান্দারগাঁওয়ে মধ্যবর্তী এলাকায় মেঘনা নদীর তীরে গেলে চোখে পড়বে কাশফুলের রাজ্য। নদীর ধার ধরে ভেতরের দিকে যত যাওয়া যাবে, ততই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। দু’পাশে কাশফুলগুলো মাথা নুয়ে আগতদের স্বাগত জানাচ্ছে। বালুর মধ্যে গুচ্ছ গুচ্ছ কাশফুল দেখে মনে হবে, প্রকৃতি আপনার মনের প্রশান্তির জন্য এ রূপে সেজেছে। যত দূর চোখ যায়, তত দূর বিস্তৃত কাশের শুভ্রতা।

গতকাল শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, মেঘনা নদীর ধারে ভাটিবন্দরের এ কাশফুলের বনে মানুষের ভিড়। কাশবনে এ সৌন্দর্য দেখতে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদীসহ আশপাশের জেলার ভ্রমণপ্রেমীরাও ভিড় করেছে। আর এ বছর এ কাশবনের পাশে গড়ে তুলেছে একটি আর্কষণীয় রেস্টুরেন্ট সূবর্ণ উইন্ড ক্যাফে। পর্যটকরা এ ক্যাফেতে এসে ক্যাফের দ্বিতীয় তলা উঠে কাশবন দেখছেন। অনেকে দলবেঁধে নৌকা বা ট্রলার নিয়েও বেড়াতে যান এ কাশফুলের রাজ্যে। নদীর পাশে ও কাশবনের ভেতরে কাশফুল কাছে পেলেই ছবি তোলার হিড়িক পড়ে যায়। কেউ সেলফি তুলছেন আবার কেউবা ভিডিও করছেন। আর একটু দূরেই মেঘনা নদীর ঢেউয়ের গর্জন। এক কোণে দাঁড়ালেই মেঘনা নদীর বিরামহীন সৌন্দর্য। সূর্যাস্তের সময় সাগর আর নদীতে গোধূলির লাল, একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকার মতো। যে কেউই এর অপার সৌর্ন্দযে নীরব সাক্ষী হতে চাইবে।

ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে এসেছেন শিমুল, রিয়াজ ও যুবায়ের। তারা তাৎক্ষণিক অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, কাশফুলের কাছে এসে খুবই আনন্দ পাচ্ছি। মনকে পরিষ্কারের জন্য এখানে আসি। কাশফুলের সান্নিধ্য পাওয়াটা একটু বাড়তি বিনোদন। অবসর সময়টা কাটানোর ভিন্ন একটা স্থান কাশফুলে ঘেরা এ প্রকৃতি। আরেকটা বিষয় আমাদের খুব ভালো লাগে। সেটা হচ্ছে, এই যে নদী আর পাশে কাশফুলের এ রাজ্য। বিষয়টা দেখতেও বেশ রোমাঞ্চকর।

নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান, সিমু, রাজু ও তনিমা জানান, তারা কয়েকজন বন্ধু মেলে এসেছেন বেড়াতে। মেঘনা নদীর চরের কাশবন অনেক সুন্দর। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। সব মিলিয়ে চমৎকার দৃশ্য। এবার এসে এখানে পেলাম একটি চমৎকার রেস্টুরেন্ট। দোতালা কাঠের তৈরি এ রেস্টুরেন্ট থেকে দেখা যায় কাশফুলের অপরূপ দৃশ্য।

সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম জানান, আমার ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পাড়ে শরতের কাশবন মাসের পর মাস ধরে দেখা যায়। এখানে এ সময়ে প্রতিদিনই অনেক লোকজন আসে। এ এলাকাটি এখন মৌসুমি পর্যটনকেন্দ্র হয়ে গেছে। এ মেঘনার বুকে একটি আধুনিক পর্যটন করা যেতে পারে। নৌযান ও নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ পর্যটন কর্তৃপক্ষের তত্ত্ববাবধান থাকলে মেঘনার এ তীরটি হয়ে উঠতে পারে ব্যতিক্রমী বিনোদন কেন্দ্র।

সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ এলাহী জানান, পিরোজপুর ইউনিয়নের ভাটিবন্দর মেঘনা নদীর পাড় একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা। আমরা চাই এ অঞ্চলের ব্যাপারে দেশ-বিদেশের পর্যটনপ্রেমীদের আগ্রহ বাড়–ক। এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।