ছাত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক, সেই শিক্ষকের বিচারের দাবিতে ঘেরাও

নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, জোর করে দায়মুক্তিপত্র আদায়ের অভিযোগে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনির যথাযথ বিচার ও অপসারণ দাবিতে সিন্ডিকেট সভা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে সিন্ডিকেট সভা চলাকালে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা।

এসময় একটি সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায়ের উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘শিক্ষক জনি তার অপরাধ থেকে বাঁচতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জোর করে একটি দায়মুক্তিপত্র লিখিয়ে নিয়েছিল। পরে ভুক্তভোগী তা স্বীকার করেন এবং বলেন প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরের উপস্থিতিতে তা করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টর জড়িত থাকলে অবশ্যই তাদের বিচার করতে হবে। আমাদের না জানিয়ে অসময়ে যে সিন্ডিকেট সভার আয়োজন করা হয়েছে, তাতে জনির ঘটনার তদন্তের বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত না করে ধামাচাপার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’

সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী বলেন, ‘আপনার চোখ খুললেই দেখতে পাবেন জাবি একটি ব্যবসাকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনে যারা আছে তাদের কোনও বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তাদের কোনও বক্তব্য নেই। তাদের মুখ বন্ধ থাকার মাধ্যমে এটা স্পষ্ট যে তারাও এসব অন্যায়-অপকর্মের সুবিধাভোগী। আজকে একটি সিন্ডিকেট সভা হচ্ছে সেটি নিয়েও নানা লুকোচুরি। জনির সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আমরা একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি চাই। যেটি সত্য বের করবে, এক দলীয় কোনও তদন্ত কমিটি আমরা চাই না। ইতোমধ্যে সংবাদপত্রে যা প্রকাশিত হয়েছে তাতে জনির অপকর্ম প্রমাণিত হয়ে যায়। কিন্তু প্রশাসন চোখে কাঠের চশমা পরে আছে, তাই তারা এগুলো দেখতে পাচ্ছে না। তারা একটি শিশুতোষ কমিটি করে দিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢেকে রাখতে চায়। এটা মনে রাখা উচিত—সত্য চাপা থাকে না, তা বের হবেই।’

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি শাখার সভাপতি আবু সাঈদ বলেন, ‘যে অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে একটা সময়ে শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে, সেই অ্যাম্বুলেন্সে করে মদ বহন করার সময় তা ধরা পড়ছে। এই অ্যাম্বুলেন্সে মাদক আনতে গিয়ে সাধারণ মানুষ মেরে ফেলার মতো ঘটনা ঘটেছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা ধামাচাপার চেষ্টা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অপকর্ম ঘটছে তা নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই। মাহমুদুর রহমান জনির ঘটনার মতো এরকম আরও অনেক ঘটনা ঘটেছে। অনেক শিক্ষকের চাকরি গেছে। আমরা চাই সঠিক বিচারের মাধ্যমে জনিকে অপসারণ করা হোক।’

বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা সিন্ডিকেট সভা কক্ষের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয় ও জনির বিচার চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান এসে শিক্ষার্থীদের থামানোর চেষ্টা করেন। এসময় শিক্ষার্থীদের সাথে প্রক্টরের শিক্ষক জনির তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বাকবিতণ্ডা হয় ও শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করে। এক পর্যায়ে প্রক্টর সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপনের জন্য শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো কাগজে লিখে দিতে বলেন। পরে শিক্ষার্থীরা দাবিগুলো লিখে দিলে চলমান সিন্ডিকেট সভায় তা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে পৌঁছানো হয়।

দাবিগুলো হলো—অভিযুক্ত শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগে স্ট্রাকচারড কমিটি গঠন করতে হবে এবং তদন্ত কমিটি অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে, দায়মুক্তির ঘটনায় সংবাদপত্রের তথ্যের ভিত্তিতে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টতা যাচাই করতে হবে এবং শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি এক মাসের মধ্যে চালু করতে হবে।

উল্লেখ্য, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সিন্ডিকেট সভা এখনও চলমান। তবে একটি গোপন সূত্রে জানা যায়—আজকের সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক জনির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত করা হয়নি।