চেয়ার নিয়ে লড়াই: দুশ্চিন্তায় ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ প্রধানের চেয়ার দখল নিয়ে রাজধানীর মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে লড়াই চলছে। নানান অভিযোগে অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেনকে সরিয়ে সম্প্রতি মো. জাকির হোসেন নামে এক শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের পদে পদায়নের নির্দেশ দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির (জিবি) এই নির্দেশ তামিল করার কথা। কিন্তু ওই শিক্ষককে পদায়ন করা হয়নি। পরে সোমবার দলবল নিয়ে চেয়ার দখল করেন মাউশি নিযুক্ত ওই শিক্ষক। অন্যদিকে তাকে সরিয়ে দিতে বিভিন্ন চাপ তৈরি করেছেন অধ্যক্ষ ফরহাদ। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। শিক্ষক-কর্মচারীরা পদের দাবিদার উভয় শিক্ষকের পক্ষাবলম্বন করে এক প্রকার মুখোমুখি হয়ে পড়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পালটাপালটি স্কুল ছুটি ঘোষণার ঘটনা ঘটেছে। প্রথম সভাপতি আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত স্কুল ছুটি ঘোষণা করেন। পরে মাউশি নিযুক্ত প্রধান শিক্ষক কেবল একদিনের জন্য স্কুল ছুটি দেন। সেই হিসাবে কেবল আজ স্কুলটিতে কোনো ক্লাস হবে না।

মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মনিপুর স্কুল। প্রতিষ্ঠানটির ৬টি শাখায় মোট ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী আছে। তাদের লেখাপড়াসহ অন্যান্য কাজে সহযোগিতার জন্য আছে পৌনে ৯শ শিক্ষক-কর্মচারী। অভিভাবকরা জানান, শিক্ষকদের দুপক্ষের পালটাপালটি অবস্থানে তারা শঙ্কিত ও লজ্জিত। বিশেষ করে পালটাপালটি ছুটি ঘোষণায় সন্তানের লেখাপড়া ও শিক্ষাজীবন নিয়ে তারা দারুণ উদ্বিগ্ন। তারা প্রতিষ্ঠানটিতে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কাও করছেন।

জানা গেছে, মাউশি ২৭ ফেব্রুয়ারি জাকির হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদে দায়িত্ব হস্তান্তরে স্কুলের জিবিকে নির্দেশ দেয়। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) এসএম জিয়াউল হায়দার হেনরী স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়, উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে ঢাকা মহানগরীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে আরও বলা হয়, জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক মো. আব্দুর রশিদ পদত্যাগ করেছেন। এ কারণে পরবর্তী জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক মো. জাকির হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হলো। নির্দেশনা জারির পরবর্তী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাকে যোগদান দিয়ে অধিদপ্তরকে অবহিত করতে গভর্নিং বডির সভাপতিকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

জানা গেছে, ৫ মার্চ পর্যন্ত সভাপতিসহ জিবি এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এর যুক্তি হিসাবে উল্লেখ করা হয়, মাউশি নির্দেশিত মো. জাকির হোসেন একজন বরখাস্ত শিক্ষক। তাছাড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রধান শিক্ষকের পদ নেই। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ থাকে। এরই মধ্যে মাউশির এই চিঠির কার্যকারিতা স্থগিতাদেশ চেয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন অধ্যক্ষ ফরহাদ এবং তার অনুসারীরা। ওই রিট মামলার আজ শুনানি আছে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জাকির হোসেন বলেন, কখনোই জিবি কর্তৃক তিনি বরখাস্ত হননি। এখন আগের তারিখে তাকে বরখাস্ত দেখানো হলে সেটা কার্যকর ও বৈধ কোনো সিদ্ধান্ত নয়। তাছাড়া সরকারি দৃষ্টিতে মনিপুর একটি স্কুল। স্কুল ও কলেজ নয়। তাই মাউশি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, কয়েকশ শিক্ষক-কর্মচারী অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। তবে অধ্যক্ষ ফরহাদ এবং জাকির হোসেন উভয়ে বিক্ষোভকারীদের নিজ পক্ষের লোক বলে দাবি করেন। এ সময় দেখা যায়, কিছু বহিরাগত লোক শিক্ষক-কর্মচারীদের শাসাচ্ছেন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে জাকির হোসেন ও তার সমর্থকরা প্রতিষ্ঠানটির মূল বালিকা শাখায় যান ও সেখানে ৭ মার্চের মাউশি ঘোষিত কর্মসূচি পালন করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন বলেন, বিধি মোতাবেক গভর্নিং বডি তাকে চুক্তিভিত্তিক দুই বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছে। তার নিয়োগই সম্পূর্ণ বৈধ। এ বিষয়ে আদালতে একটি মামলা চলমান আছে। আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় চাকরিচ্যুত একজন শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে মাউশি। এ বিষয়ে মাউশিকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৯/০৩/২০২৩   

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়