চান্দিনায় স্কুল ছাত্রকে বেধড়ক পেটালেন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লাঃ জেলার চান্দিনা উপজেলার বরকরই ইউনিয়নের কাদুটি উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে প্রধান শিক্ষকের রুমে নিয়ে বেধড়ক মারধর ও স্কুল রুমে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির বিদ্যুৎসাহী সদস্যের বিরুদ্ধে।  মারধরের শিকার ঐ শিক্ষার্থীর নাম সাব্বির হোসেন। সে বিদ্যালয়টির দশম শ্রেণির বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী এবং পার্শ্ববর্তী বরুড়া উপজেলার মোহাম্মদপুরের আমির হোসের এর পুত্র। আর অভিযুক্ত বিদ্যুৎসাহী ঐ সদস্যের নাম মোস্তফা কামাল।

গত সোমবার (৬ অক্টোবর) এই ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়, শিক্ষক ও ভুক্তোভুগী শিক্ষার্থীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সাব্বির হাসান স্কুলে যাবার পথে একই ক্লাসের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে এই স্কুলেরই এক ছাত্রী দেখিয়ে দিতে বলে এবং বাসা দেখিয়ে দেবার পর তাকে দিয়ে ঐ ছাত্রীর কাছে প্রেম পত্র পৌঁছে দিতে বলে। সাব্বির সেই প্রেমপত্র স্কুল ছাত্রীর  বাড়িতে পৌঁছে দেয়। আর এই বিষয়টি বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির বিদ্যুৎসাহী সদস্য মোস্তফা কামাল জেনে ফেলায় বিদ্যালয়ে এসে সাব্বিরকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ডেকে নিয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের সম্মুখেই বেধড়ক মারধর করে। মারধর শেষে তাকে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে। পরে খবর পেয়ে সাব্বিরের মা বিদ্যালয়ে এলে তার সামনেও মোস্তফা কামাল দ্বিতীয় দফায় মারধর করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে তাকে তার মায়ের কাছে ছেড়ে দেয়। পরে সাব্বিরকে বাসায় নিয়ে গেলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তাকে চিকিৎসা করানো হয়।

এ বিষয়ে সাব্বিরের চাচা শরিফুল ইসলাম বলেন, আমার ভাতিজা যদি কোন অন্যায় করে থাকে তাহলে আমাদের ডেকে বলতে পারতেন। প্রয়োজনে টিসি দিতেন। আর তাও যদি না হয় তাহলে পুলিশে দিতেন। একজন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতিতে প্রধান শিক্ষকের রুমে নিয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের সামনে এভাবে অমানুষিক নির্যাতন কিভাবে করে? আমার বাবা ছিলেন এই স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠাতার নাতি হয়েও তার উপর এমন অমানুষিক নির্যাতন মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এই সুষ্ঠ বিচার চাই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, সাব্বির হোসেনের বিরুদ্ধে আগে কোন ধরনের অভিযোগ ছিল না।  মোবাইল সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিষয়টি এতদূর গড়াবে বুঝতে পারিনি। সে ইভটিজিংয়ের সাথে জড়িত নয়। এর আগেও কখনও সে কোন ধরণের ইভটিজিংয়ের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কেন এমন করলেন আমি বলতে পারব না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাদুটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সফিকুল ইসলাম বলেন, ঐ শিক্ষার্থী মেয়েদেরকে ইভটিজিং করত। আমরা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্যরা বসে তাকে পুলিশের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। এর মধ্যে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোস্তফা কামাল দুই একটা চর থাপ্পড় দিয়ে শাসন করেছে। পরে তার মা এরকম আর কোন কর্মকান্ড তার ছেলে করবে না মর্মে লিখিত দিলে আমরা তাকে তার মায়ের নিকট দিয়ে দেই।

কাদুটি উচ্চ বিদ্যালয়, চান্দিনা. ছবিঃ সংগৃহীত

কোন শিক্ষার্থী অন্যায় করলে তাকে টিসি কিংবা প্রশাসনের হাতে তুলে না দিয়ে আপনার কক্ষে নিয়ে একজন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কিভাবে মারধর করেন এবং কক্ষে আটকিয়ে রাখেন জিজ্ঞসে করলে তিনি বলেন, এটা মিথ্যা কথা। এমন কিছু হয়নি। শুধু দুই একটা চর থাপ্পড় দিয়েছেন।

অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, আমার বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ইভটিজিং করেছে সে। মোবাইল নিষিদ্ধ থাকলেও সে বার বার স্কুলে মোবাইল নিয়ে এসেছে। মেয়েদের ছবি মুঠোফোনে ধারণ করত। টিসি বা পুলিশে দিলে এই বয়সি এক শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট হবে ভেবে আমি শুধু শাসন করেছি এই আরকি। ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হয়ে শিক্ষার্থীকে কিভাবে শাসন করেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটি না একজন অভিভাবক হিসেবে ধরেন না। একজন ছাত্র বকে গেলে এতটূকু শাসন করতে পারব না। বেধড়ক মারধর ও স্কুলে আটকিয়ে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, এমন কিছু ঘটেনি। ম্যানেজিং কমিটিতে অনেকে আসতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে প্রোপ্যাগান্ডা চালাচ্ছে। এই ছেলের বিরুদ্ধে এর আগেও অনেক অভিযোগ ছিল।

বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ডা: বিধান চন্ড দাস শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। আমাকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

চান্দিনা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কানিজ আফরোজ শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, ঘটনাটি আমি উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে শুনেছি। আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। শিক্ষার্থীদের মানসিক শারীরিক কোন ধরনের নির্যাতন না চালাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে। সেখানে একজন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কর্তৃক নির্যাতন কোনভাবেই কাম্য নয়। আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন বিষয়টি মিটে গেছে। আমি আগামী রবিবার বিদ্যালয়টিতে যাব। বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৯/০২/২৩