চকলেট খেলে পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ে

শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ চকলেট—এই লোভনীয় খাবার কে না পছন্দ করে। তবে ছোটবেলা থেকে নিশ্চয়ই তোমরা শুনে এসেছ যে অতিরিক্ত চকলেট খাওয়া যাবে না, দাঁতের ক্ষতি হবে। কথাগুলো সত্য হলেও একটু বুঝে-শুনে সঠিক পরিমাণে চকলেট খেলে কিন্তু একে উল্টো তোমার মস্তিষ্কের বন্ধু হিসেবে কাজে লাগাতে পারো, পড়াশোনার জন্য পেতে পারো অখণ্ড মনোযোগ। চকলেটের রাজা ডার্ক চকলেট ভাইয়া এসব নেতিবাচকতা দূর করতেই ডাক দিয়েছেন এক জরুরি সম্মেলনের।

ডার্ক চকলেট ভাইয়া, আমরা জানি চকলেট খেলে দাঁতের ক্ষতি হয়, অথচ আপনি বলছেন এটি খেয়ে উল্টো পড়ালেখায় ভালো করা যায়! ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলবেন?

দেখো, চকলেট সম্পর্কে মানুষের কাছে একটা ভুল বার্তা চলে গেছে। সবাই মনে করে, চকলেট খেলেই যেন বিপদ। অথচ সব ধরনের চকলেট খাওয়া মানেই বিপদ নয়। আমি ডার্ক চকলেট—এক বিশেষ ধরনের চকলেট। চকলেটের একটা অন্যতম উপাদান হলো কোকোয়া। কোকোয়া যত বেশি হবে, চকলেট হবে তত তেতো। কোকোয়ার পরিমাণ ৫০-৯০ শতাংশ হলেই সেটা পড়বে ডার্ক চকলেটের কাতারে। অন্যদিকে কোকোয়ার পরিমাণ ১০-৫০ শতাংশ হলে একে বলে মিল্ক চকলেট। কারণ, সেখানে কোকোয়া ছাড়াও দুধ এবং অন্যান্য উপাদান থাকে। এই ডার্ক চকলেট পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে পারলে তোমরা পাবে চমৎকার সব উপকার।

কী কী উপকার?

সেটা জানানোর জন্যই তোমাকে ডাকা। ডার্ক চকলেটে থাকা কোকোয়ার আছে জাদুকরী ক্ষমতা। এটি আঁশ, ভিটামিন এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থের প্রাকৃতিক উৎস। এ ছাড়াও এটি হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক, অন্ত্র এবং সর্বোপরি স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী।

৮৫ শতাংশ অথবা এর অধিক কোকোয়াসমৃদ্ধ ডার্ক চকলেট মস্তিষ্কের জন্য দারুণ। সহজ কথায় যত বেশি কোকোয়া, ততই ভালো। এ ছাড়াও আমাদের ডার্ক চকলেটে থাকা ফ্ল্যাভানল নামক এক ধরনের পলিফেনল মস্তিষ্কের অক্সিজেন সঞ্চালন, স্নায়ুর কার্যকারিতা এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়ান ম্যাকডোনাল্ড এবং তাঁর দল গবেষণা করে দেখেন যে কোকোয়াসমৃদ্ধ চকলেট খেলে মস্তিষ্কের চিন্তা করার অঞ্চলগুলোতে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়। মস্তিষ্কের এসব অঞ্চলে রক্ত সঞ্চালন বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে সহায়তা করে। ফলে আমাকে যারা খায় তাদের মস্তিষ্কও থাকে ক্ষুরধার ও তীক্ষ্ণ। এই ফ্ল্যাভানল স্নায়ুর সুস্থতা এবং মস্তিষ্কের চিন্তা করা, শেখা এবং স্মৃতি ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোকে সজাগ রাখার কাজ করে। এমনকি এই ফ্ল্যাভানল আলঝেইমারের মতো মস্তিষ্কের রোগ প্রতিরোধেও কাজ করে। আমাকে খেলে তোমাদের মনও থাকে চনমনে এবং সতেজ। ফ্রান্সের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল রিসার্চের গবেষণা পরিচালক এস্ট্রিড নেহলিগের একটি গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, ডার্ক চকলেটে থাকা ফ্ল্যাভানল খুশির হরমোন এন্ডরফিন এবং সেরোটোনিন উৎপাদনের মাধ্যমে তোমাদের মনকে ভালো রাখে। ফলে লেখাপড়া বা যেকোনো বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে পাওয়া যায় উৎসাহ।

অন্যান্য চকলেট খেলে কি কোনো উপকার পাওয়া যাবে না?

মিল্ক চকলেটে ফ্ল্যাভানল ডার্ক চকলেটের মতো এত বেশি না থাকলেও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে এরও ভূমিকা আছে। মিল্ক চকলেটের ক্যাফেইন মস্তিষ্ককে সজাগ রাখে এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করে। এ ছাড়াও বিভিন্ন চকলেটে থাকা শর্করা দেহে ক্ষণিকের জন্য দ্রুত শক্তির সঞ্চালন ঘটায়। ফলে তুমি যদি অনেকক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে চাও তবে একটা চকলেট খুব উপকারী হতে পারে। তবে অন্যান্য চকলেটের চেয়ে ডার্ক চকলেট বেশি স্বাস্থ্যকর; কারণ, এর মধ্যে থাকে কম শর্করা এবং বেশি কোকোয়া।

তাহলে তো চকলেট মস্তিষ্কের বন্ধু! আজ থেকেই বেশি বেশি চকলেট খেতে হবে।

আমরা মস্তিষ্কের বন্ধু, তা তুমি ঠিকই বলেছ। তবে অতিরিক্ত কোনো কিছুই কিন্তু ভালো নয়। তাই সংযমের সঙ্গে খাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। অতিরিক্ত মিল্ক চকলেট খেলে রক্তে চর্বি জমে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। অতিরিক্ত শর্করাও তোমার দেহের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। হটকেমিস্ট ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, দিনে ৩০-৬০ গ্রাম চকলেট খাওয়া নিরাপদ। এ ছাড়া চকলেট খাওয়ার পর দাঁত কিন্তু খুব ভালোমতো পরিষ্কার করতে হবে। মিল্ক চকলেটের শর্করা তোমার দাঁতের বারোটা বাজাতে পারে, যদি তুমি দাঁতে জমে থাকা চকলেট নিয়মিত পরিষ্কার না করো। তাই একটু নিয়ম মেনে পরিমিত চকলেট খেলে তুমি তোমার মস্তিষ্ককে দিতে পারো চিন্তা করার অমূল্য রসদ। আর লেখাপড়ায় হতে পারো সেরা।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৮/০৩/২০২৩

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়