এক সময় কুমার পাড়াগুলো মাটির কাঁচা গন্ধে থাকত মাতোয়ারা। ব্যাস্ত কুমাররা হিম- শিম খেতেন চাহিদা মেটাতে। হাট বাজারে মাটির তৈরী জিনিসপত্রের পসরা সাঁজিয়ে বসতেন মৃৎ শিল্পিরা। নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু ছাড়াও শিশুদের খেলনা, সৌন্দর্য বর্ধন সামগ্রীসহ বিভিন্ন বাহারি মাটির তৈরী জিনিসে পূর্ণ থাকত কুমারপাড়া।
তখনকার প্রতিযোগিতার বাজারে বস্তুকে আকর্ষিত করতে দৃষ্টিনন্দিত আলপনার ছোঁয়াও দেওয়া হত। কিন্তু আজ এসকল সব অতীত। গাঁয়ের কুমার পাড়ায় আর কাঁচা মাটির গন্ধ পাওয়া যায় না। আধুনিক সব প্রয়িক্রয়াজাত থালা বাসন আর প্রয়োজনীয় বস্তু হারিয়ে গেছে মাটির গন্ধ।
বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসবকে ঘিরে উচ্ছাস দেখা মিলতো মৃৎ শিল্পীদের মাঝে কিন্তু আধুনিকতার ছোয়ায় সেই উচ্ছাসও হারিয়ে গেছে তাদের মধ্যে হতে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা ইতিহাস ঐহিত্য নিয়ে গঠিত উপজেলা। এই উপজেলায় নানান ইতিহাস লুকিয়ে আছে। এদের মধ্যে মৃৎ শিল্পের অবদানও অন্যতম। সময়ের পরিক্রমায় মৃৎ শিল্পের অস্তিত্ব সংকটে পড়লেও প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার এখনো এই শিল্পের সাথে জড়িতে থেকে বাপ দাদার পেশা ধরে রেখে জীবিকা নির্বাহ করছে। এমনি পরিবার দেখা মিললো উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের ডুমুরিয়া, কাঠাল বাড়িয়া,খেতুরসহ কয়েকটি গ্রামে।
ডুমুরিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা মিললো শ্রী উত্তম কুমার পালের সঙ্গে । দুপুর গড়ালেও মাটির তৈজসপত্র তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চাকা ঘুরিয়ে শিল্পীর নিপুন হাতে তৈরী করছেন হরেক রকমের পাতিল।
উপজেলা প্রেমতুলি, ডুমিরিয়া, কাঁঠাল বাড়িয়া, কুমুরপুর, হরিসঙ্করপুর, কামারপাড়া, বালিয়ঘাটা, বাসুদেবপুর, কাঁঠাল বাড়িয়া প্রভূতি এলাকায় প্রায় ১ হাজার পরিবার কুমারের পেশায় জড়িত ছিল। কিন্ত নানা করণে পেশা ছেড়ে দিয়ে ভারতে চলে যাওয়া, পেশা বদলাতে বদলাতে প্রায় দেড় শতাধিক পরিবারে নেমে এসেছে। এ পেশার সাথে জড়িত শ্রী উত্তম কুমার পাল ও শ্রী সুক চাঁদ কুমার এ প্রতিবেদকে জানান, মৃৎ শিল্প তৈরীতে শ্রমিক, উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া এবং প্লাস্টিক, মেলামাইন ও সিরামিকের সাথে পাল্লা দিয়ে বাজারজাত ও চাহিদা সৃষ্টি করতে না পারায় আমরা এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছি। সরকারী যদি আমাদেরকে স্বল্প সুদে লোন কিংবা ভুর্তিকী দেন তা আমরা উপকৃত হব। এ জন্য সরকারের নিকট আকুল আবেদন।