নওগাঁঃ ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তা না করেই নওগাঁর ছাতড়া বিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পাঁয়তারা করা হচ্ছে। ওই এলাকার পরিবেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত নয়। নিজেদের কিনে রাখা জমির দাম বাড়ানোসহ নিয়োগ-বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজির জন্য অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত না নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী যেন ওই বিলে হাঁসের খামার করেন।’
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নওগাঁ-দুবলহাটি আঞ্চলিক সড়কের নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস যৌক্তিক স্থানে স্থাপনের দাবিতে মানববন্ধন করে মুভমেন্ট ফর ডেভেলপমেন্ট অব নওগাঁ নামে একটি সংগঠন। মানববন্ধনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারকে উদ্দেশ্য করে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য শফিকুর রহমান মামুন। তিনি মুভমেন্ট ফর ডেভেলপমেন্ট অব নওগাঁর সভাপতি।
শফিকুর রহমান মামুন বলেন, ছাতড়া বিলের আবাসন ব্যবস্থা, চিকিৎসা ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সুষ্ঠু পরিবেশ কোনোটিই নেই। গুটিকয়েক ব্যক্তির স্বার্থের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কখনই অযৌক্তিক স্থানে হওয়া উচিত নয়। নীতিনির্ধারকরা জেনে বুঝে এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হওয়াতেই ছাত্র সমাজকে আজ রাজপথে নামতে হয়েছে। নীতি-নির্ধারকদের শুভ বুদ্ধির উদয় না হলে ছাত্র সমাজকে সঙ্গে নিয়ে তা শক্ত হাতে প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে নওগাঁ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আমানুজ্জামান সিউল, নওগাঁ সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও মুভমেন্ট ফর ডেভেলপমেন্ট অব নওগাঁর সদস্য মিজানুর রহমান, নওগাঁ সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য জিবরাইল রাকিব, নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের নেতা আব্দুল মালেক প্রমুখ বক্তব্য দেন। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন বর্ষের শতাধিক শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত ব্যানার নিয়ে এই মানববন্ধনে অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নওগাঁর কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্য নিজ নিজ এলাকায় অযৌক্তিক স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনের পাঁয়তারা করছেন। তারা শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনদের সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনা করছেন না। বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যই একটি যৌক্তিক স্থানে হতে হবে। শহরের খুব কাছাকাছি নয়, আবার শহর থেকে খুব দূরে নয় এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে। আবার জায়গা নির্বাচনে সড়ক ও রেলপথ যোগাযোগের কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্বাচনের ব্যাপারে এখনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পেলে ইউজিসির কমিটি গঠনের মাধ্যমে পরিত্যাক্ত অথবা এক ফসলি জমি নির্ধারণ করা হবে। নওগাঁবাসীর সার্বিক উন্নয়ন এবং শিক্ষা ও গবেষণার উপযোগী পরিবেশসহ সার্বিক বিষয় দেখেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্বাচন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, যতটুকু শুনেছি নওগাঁর স্থানীয় মন্ত্রী-এমপিরা তাদের পছন্দের জায়গা নির্বাচন করে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। তাদের মাঝে স্থান নির্বাচনের ব্যাপারে সমঝোতা না হলে সরকার স্থানীয় প্রশাসন অথবা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্থান নির্বাচনের দায়িত্ব দিতে পারে। শিক্ষার্থীদের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, খাদ্যদ্রব্য সব বিবেচনায় নিয়ে স্থান নির্বাচন করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে নওগাঁয় এক জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সেখানে একটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর চার বছর পর ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নওগাঁয় বঙ্গবন্ধুর নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের খসড়া অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। গত ৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁ বিল-২০২৩ সংসদে পাস হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর থেকেই নওগাঁর জনপ্রতিনিধিরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণের জন্য স্থান নির্বাচন করে প্রস্তাব পাঠাতে শুরু করেন। এর মধ্যে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের নির্বাচনী আসন নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়া বিলে স্থান চূড়ান্ত হওয়ার গুঞ্জন সবচেয়ে বেশি উঠে আসছে। তবে নওগাঁয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য এখনো কোনো স্থান নির্বাচন করা হয়নি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৪/০৯/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়