খণ্ডকালীন শিক্ষককে জিম্মি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা!

শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়

ঢাকাঃ রাজধানীর ঐহিত্যবাহী শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ে মাস্টার রোলে নিয়োগপ্রাপ্ত খণ্ডকালীন কতিপয় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ওঠেছে। তাদের দাপটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। হাতেগোনা ৩/৪ জন শিক্ষক ষড়যন্ত্র করে বর্তমান গভর্নিং বডির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ এবং অধ্যক্ষসহ বেশিরভাগ শিক্ষকদের জিম্মি করে ইচ্ছেমতো কলেজ পরিচালনা করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই কলেজে কর্মরত একাধিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী- অভিভাবক ও গভর্নিং বডির সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাস্টার রোলে নিযুক্ত বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক হামিদা খাতুন, নাসরিন সুলতানা, আকলিমা আকতার, সৈয়দা মেহ্নাজ নাইয়ারা ও রেখা মন্ডল দীনা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। শিক্ষার্থীদের মারধর, সময়মতো স্কুলে না আসা, পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়াসহ নানা অনিয়মের কারণে বিভিন্ন সময়ে শাস্তির মুখোমুখি হওয়া এই শিক্ষকরা বেশ কিছুদিন ধরে গভর্নিং বডির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজসহ অন্য সদস্যদের সরিয়ে দিতে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।

তারা নামে বেনামে বিভিন্ন জায়গায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে ব্যর্থ হয়। পরে সরকারি এক কর্মকর্তাকে ব্যবহার করে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিকে ভুল বুঝিয়ে সভাপতির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আমলে নিতে বাধ্য করে। কথা বলে জানা গেছে, অভিযোগ জানার পর সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সভাপতি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। তিনি দাবি করেন, সঠিক তদন্ত হলে তার বিরুদ্ধে আনা কোনো অভিযোগই টিকবে না।

জানা যায়, সভাপতি ‘পদত্যাগ করেছেন’ এমন তথ্য পেয়ে ষড়যন্ত্রকারী শিক্ষকরা গত শুক্রবার ছুটির দিন কলেজে এসে উল্লাস করতে থাকে। তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুল বুঝিয়ে অন্য সাধারণ শিক্ষকদেরও ডেকে আনেন। তারা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে হেনস্তা এবং একজন সহকারী শিক্ষকের গায়ে হাত তুলেছেন। তারা অধ্যক্ষের মোবাইলও ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। অধ্যক্ষসহ ওই শিক্ষকরা বন্ধের দিন এইচএসসি পরীক্ষার আসনবন্টন কাজ করছিলেন বলে জানা গেছে।

প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর মধ্যে আকলিমা আকতার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণসহ নানা অনিয়মে বিভিন্ন সময় একাধিকবার শোকজের মুখোমুখি হয়েছেন। বিএড স্কেল পাওয়ার জন্য দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া বিএড সনদ দাখিল করেছিলেন। তবে, গভর্নিং বডির মিটিংয়ে তা অগ্রাহ্য হওয়ার পর থেকেই তিনি ক্ষুব্ধ হন।

মাস্টার রোলে নিয়োগপ্রাপ্ত খণ্ডকালীন শিক্ষক সৈয়দা মেহনাজ নাইয়ারার দায়িত্বপ্রাপ্ত শ্রেণিতে নিয়মিত ফলাফল খারাপ হচ্ছে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরাও অভিযোগ করেছে। কোচিং বাণিজ্যের কারণে ইংরেজি শিক্ষক না হয়েও তিনি জোর করে ইংরেজি বিষয়ে পাঠদান করান। কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী শেখ হাসিনাকে কটুক্তি করার প্রতিবাদে ২০২১ সালে শিক্ষক-শিক্ষর্থীরা মানববন্ধন করলেও মেহনাজ তাতে ইচ্ছাকৃতভাবে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের যোগফল ভুল করে গতবছর একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছেন।

খণ্ডকালীন শিক্ষক রেখা মন্ডল সরকারি নির্দেশ অমান্য করে শিক্ষার্থীদের প্রায়শই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। এজন্য একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে।

উল্লেখ্য রিয়াজউদ্দিন দায়িত্ব নেয়ার সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ছিল ২ হাজারের মত এখন প্রায় তিন হাজার। এছাড়া তিনি ডিবেটিং ক্লাব, কারাতে প্রশিক্ষণ, হ্যান্ডবলসহ নানা কর্মকাণ্ড চালু করেছেন। তার প্রচেষ্টায় কলেজের ফান্ড দেড় বছরে দেড় কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ৬ কোটি ছিল এখন সাড়ে ৭ কোটি। জাতির পিতার মুর‌্যাল স্থাপন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাথমিক শাখার একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, রিয়াজ উদ্দিন স্যার কেন পদত্যাগ করেছেন সেটা আমার জানা নেই। তবে তার বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগের কথা বলা হয় তাহলে বলব সবই মিথ্যাচার। একটা ভুতুড়ে পরিবেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানকে মাত্র দেড় বছরে আলোকোজ্জ্বল করেছেন তিনি। আমাদের কিছু শিক্ষক আছেন তারা বিদ্যালয় চলাকালে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কোচিং বাণিজ্য করতেন। স্কুল চলাকালে বিনানুমতিতে বাসায় চলে আসতেন। রিয়াজ স্যার এসব অনিয়ম বন্ধ করেছেন। এ কারণে শিক্ষকদের ওই অংশ ক্ষুব্ধ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে পারে। যদি কোনো অভিযোগ ওঠে তাহলে আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব সঠিক তদন্ত করুন। তদন্ত করলে সত্যটা বেরিয়ে আসবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যাপীঠ হিসেবে এর উন্নয়নে মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করেছি। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠসহ সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়ন করেছি। সুউচ্চ ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি এখানে এসএসসি ও এইচএসসি কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। ফলাফল আগের তুলনায় ভালো হয়েছে। শিক্ষকদের সময়মত উপস্থিতি ও সময়মত বিদ্যালয়ে ত্যাগ নিশ্চিতকরণসহ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে, কতিপয় শিক্ষক এই শৃঙ্খলা মানতে চায় না তারা ইচ্ছেমত আসে আবার চলে যায়। শিক্ষার্থীদের স্কুল সময়ে বাইরে কোচিং বাণিজ্য করে। এই কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার কারণে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে বাইরের কিছু লোকের প্ররোচনায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আমি স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছি। আমি অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত চাই। চাই প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৯/০৯/২০২৩

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়