ক্লাস নিতে বলায় তিন শিক্ষক মিলে পেটালেন প্রধান শিক্ষককে

বরিশালঃ বরিশাল সদর উপজেলার কাগাশুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে সহকারী তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ সময় প্রধান শিক্ষকের মোবাইল ফোনটিও ভেঙে ফেলা হয়।

আহত প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামকে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী।

অভিযুক্ত শিক্ষকরা হচ্ছেন- ধর্মের শিক্ষক মাওলানা শহীদুল্লাহ, ক্রীড়া শিক্ষক মোখলেচুর রহমান ও কৃষি শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রধানশিক্ষক বলেন, গত ১৫ দিন তিনি ছুটিতে ছিলেন। ছুটি কাটিয়ে মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) তিনি যোগদান করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পরপরই শিক্ষার্থীরা ছুটে এসে তার কাছে ক্লাস হয় না বলে অভিযোগ করেন। অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি বিদ্যালয় মিলনায়তনে যান।

তিনি বলেন, সেখানে গিয়ে হামলাকারীদের মোবাইল চালানো অবস্থায় দেখতে পান। তখন প্রধান শিক্ষক ধর্মের শিক্ষক মাওলানা শহীদুল্লাহকে সপ্তম শ্রেণিতে ক্লাস নেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু ক্লাস নিতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি। এ সময় প্রধানশিক্ষক তার না সূচক কথাবার্তা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেন। বিষয়টি দেখতে পেয়ে ক্ষুব্ধ হন ওই শিক্ষক। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হন।

আহত শিক্ষক জানান, তাদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বিদ্যালয় মিলনায়তন থেকে বের হয়ে বারান্দায় যান। এ সময় ওই তিন শিক্ষক একত্রিত হয়ে হামলা চালায়। ছাত্রদের সামনে মারধর করে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এরপর মোবাইলটি আছাড় দিয়ে ও পা দিয়ে চাপা দেয়। যাতে ভিডিওটি মোবাইলে না পাওয়া যায়। এরপর প্রধান শিক্ষককে টেনেহিঁচড়ে আবারও বিদ্যালয় মিলনায়তনে নেওয়া হয়। সেখানে দরজা আটকে একযোগে ওই তিন শিক্ষক তাকে মারধর করেন। এতে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

প্রধান শিক্ষক জানান, দরজা আটকানোর পর অপর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দরজা খোলার জন্য চিৎকার করলে খুলে দেন হামলাকারীরা। এরপর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একটি টেবিলে তুলে মাথায় পানি দেন। জ্ঞান ফিরলে প্রধান শিক্ষক তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য বলেন। এ খবর পেয়ে আবারও ওই তিন শিক্ষক এসে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। তারা বলেন, কিছুই হয়নি বাড়ি চলে যান। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী জানায়, মারধর থেকে রক্ষা পেতে প্রধান শিক্ষক বারান্দায় চলে এলে সেখান থেকে তাকে জোরপূর্বক আবারও মিলনায়তনে নিয়ে বেদম মারধর করেন সহকারী শিক্ষকরা। এ সময় দরজা আটকে দেওয়া হয়। তখন অপর শিক্ষকরা গেলে দরজা খুলে দেন। ওই সময় প্রধান শিক্ষক ফ্লোরে অচেতন অবস্থায় পড়া ছিল। তাকে একটি টেবিলে তুলে সেবা দেওয়ার পর জ্ঞান ফেরে। পরে পুলিশ এসে প্রধান শিক্ষককে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

একই কথা বলেন সেখানকার সহকারী শিক্ষকরাও। তাদের দাবি, বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকটি গ্রুপে রয়েছে। এ কারণে কেউ কাউকে মানে না। আর যারা এখানকার স্থানীয় তাদের প্রভাব বেশি। এ কারণে তারা তাদের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।

শিক্ষক মাওলানা শহীদুল্লাহ ও মোখলেচুর রহমান তাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারা দাবি করেন, প্রধান শিক্ষক তাদের গায়ে হাত দিয়েছেন। যা সবাই দেখেছে। তার অন্যায় ঢাকার জন্য তিনি ‍এখন হামলার শিকার নাটক সাজিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মারধর করা হচ্ছে বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। হামলায় আহত শিক্ষক শফিকুল ইসলামকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। এ ঘটনায় লিখিত কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২০/০৯/২০২৩

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়