গাজীপুরঃ জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার ভাউমান টালাবহ এলাকার শিক্ষক মোজ্জামেল হক শাকিল মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল হাসপাতালে শয্যাশায়ী,বাঁচার আকুতি তার। কিন্তু অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না তার পরিবার। চিকিৎসক জানিয়েছেন,সে মরণব্যাধি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। তার পরিবার জানিয়েছে,শিক্ষক মোজ্জামেল হক শাকিল চিকিৎসায় ইতোমধ্যে অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। আরও চিকিৎসা করাতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। তবে তার পরিবারে এত টাকা যোগার করা সম্ভব নয়। সমাজে বিত্তশালী,ধনবান শুভাকাক্সক্ষীদের কাছে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করছেন।
উপজেলার ভাউমান টালাবহ এলাকার মৃত আব্দুর রহমান (সাবেক প্রধান শিক্ষক নয়ানগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়) মা বরিয়াবহ স্কুলের সহকারী শিক্ষক মনোয়ারা বেগম। তাদের ঘরে জন্ম নেয় মোজ্জামেল হক শাকিল। ছোটবেলা থেকে শাকিল লেখাপড়ায় ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র ছিল।
জানা যায়, শাকিল গত এক বছর আগে টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার থানার জালালীয়া গ্রামের আব্দুল সামাদের মেয়ে শিলা আকতার(২৬) সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের পর শাকিল ও শিলা আকতার সুখেই জীবন যাপন করছে। হঠাৎ করে গত ৩১ আগস্ট শাকিলের শরীরে প্রচণ্ড জ্বর আসে। পরে ডেঙ্গু জ্বর সন্দেহে ওই রাতে স্থানীয় একটি বে-সরকারী হাসপাতালে যান। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও কোনো রোগ ধরা পড়েনি। পরে সে বাড়িতে চলে যান। পরের দিন জ্বর নিয়ে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখানেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোনো রোগ শনাক্ত করতে পারেনি। সেখান থেকে ঢাকা উত্তরা একটি বে-সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেখানে ধরা পড়েন শাকিলের ব্লাড ক্যান্সার। শাকিল বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল হাসপাতালে মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী।
শাকিল ২০০৪ সালে রাজাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি,২০০৬ সালে গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে। পরে উপজেলার ৭০ নং কাঞ্চনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে। সেখানে দু‘বছর শিক্ষকতা করেন। পরে চাকুরী থেকে নিজে অব্যাহত দিয়ে চলে আসেন। এরপর ভৃঙ্গরাজ তালিবাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে বর্তমানে কর্মরত আছেন। কিশোর বয়স থেকেই শাকিল মানুষের জন্য সব সময় সেবামূলক কাজ করতেন। এরিমধ্যে ৩৫ জন মানুষকে সে রক্তদান, শতাধিক মানুষের জন্য জরুরী মুহূর্তে রক্ত সংগ্রহসহ ওই গ্রামের প্রায় ৭‘শ অধিক মানুষের ব্লাডগ্রুপ বিনামূল্যে পরীক্ষা,শিক্ষার-উন্নয়ন তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় অনেক ছেলেমেয়ে উচ্চশিক্ষার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছিয়েছে। এবং পড়াশোনা শেষ করে অনেকেই সরকারি-বেসরকারি চাকরি প্রাপ্তিসহ বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।তিনি ভাউমান টালাবহ ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট’স এ্যাসোসিয়েশন গঠন, প্রতি বছর কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান,এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ভর্তি সংক্রান্ত আলোচনা অনুষ্ঠান, বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশোনা মনিটরিংসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে শাকিল জড়িত ছিলেন।
এছাড়া সে কালিয়াকৈর উপজেলার ভার্সিটি সার্কেল, প্রগতিশীল ফোরাম, রক্তদান গ্রুপ সহ অনেক সংগঠনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিল। ছাত্র-ছাত্রীদের সরাসরি আর্থিক সহযোগিতা, পরীক্ষার ফরম ফিলাপ,বই কিনে,কোচিংয়ে ভর্তি করানোর ক্ষেত্রেও সহযোগিতা করেছে। শুধু ভাউমান টালাবহ গ্রাম নয়,এমন পরোপকারী,মানবিক,সাংগঠনিক একজন মানুষ গোটা কালিয়াকৈরেই বিরল! তাঁর অত্যন্ত বেদনাদায়ক এমন সদা পরোপকারী শিক্ষক শাকিল দুরারোগ্য ব্যাধি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। খুব দ্রুত তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হবে। ডাক্তার জানিয়েছেন এই রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল, আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। এ মুহূর্তে যা কোনভাবেই শাকিল ও তার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। কারণ তার স্বপ্নকে মরণব্যাধি ক্যান্সার থাবা দিয়েছে।
শাকিল সম্পর্কে প্রতিবেশীরা জানান,সে একজন মেধাবী ছাত্র। এক মাস আগে তার মরণব্যাধি ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। শাকিল অত্যন্ত বিনয়ী,ভালো ছেলে। হঠাৎ করে তার এমন রোগ ধরা পড়ল,যা সত্যিই দুঃখজনক। তার বাবা একজন প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তার পরিবারের সামর্থ্য নাই শাকিলের চিকিৎসা করার। সমাজের বিত্তবানদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোলাইমান মিন্টু বলেন, শাকিল একজন ভালো শিক্ষক বটে। সে এলাকার বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করে থাকেন। তার মত ভালো মানুষের এভাবে হঠাৎ করে ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়বে চিন্তা করা যায় না। তবে তার চিকিৎসার খরচ বাবদ আমার পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করবেন। সবাইকে তার পাশা থাকার আহবান জানান তিনি।
কালিয়াকৈর উপজেলা কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, আমাদের কাছে আবেদন করলে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ৫০ হাজার টাকা চিকিৎসা বাবদ অনুদান প্রদান করা হবে।
সাহায্য পাঠানোর জন্য : সোনালী ব্যাংক,আনসার ভিডিপি শাখা সফিপুর,অ্যাকাউন্ট নম্বর-০২১৬২০১০০৬৭৮০। বিকাশ নম্বর-০১৭৬০৫৮৮৭৬৩,নগদ-০১৮১৪০০০৭৬৩।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৯/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়