কোচিং ও গাইড ব্যবসায়ীদের ফাঁদে পা না দেয়ার আহ্বান

নিউজ ডেস্ক।।

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। তিনি বলেছেন একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী শুরু থেকেই নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।

বিশেষ করে কোচিং সেন্টার মালিক ও গাইড বই ব্যবসায়ীদের ফাঁদে পা না দেয়ার জন্যও অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক নিয়ে মিথ্যাচার চালাচ্ছে একটি মহল। তারা চায় না শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে শিখতে, চিন্তা করতে শিখুক, অনুসন্ধিৎসু হোক, মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করুক। ওরা চায় মগজ ধোলাইয়ের শিক্ষাই চালু থাকুক। তাই সংশ্লিষ্ট সব মহলকে সচেতন থাকতে অনুরোধ জানান তিনি।

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে নানা অপপ্রচারের জবাব দিতেই গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে শিক্ষামন্ত্রী নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ১৫টি ভুল ও অপপ্রচারের তথ্য তুলে ধরেন। শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক নিয়ে অপপ্রচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক ¦ নিয়ে মিথ্যাচার হচ্ছে। গত জানুয়ারিতে এরা সাম্প্রদায়িক উসকানি দেয়ার লক্ষ্যে বই নিয়ে মিথ্যাচার করেছিল।

অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে নিজে যাচাই করুন, সঠিক তথ্য জানার চেষ্টা করুন। স্বার্থান্বেষী কোনো মহলের ফাঁদে পা দেবেন না। সন্তানের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভাবুন। তাদের দক্ষ, যোগ্য মানুষ হওয়ার কথা ভাবুন। তাদের যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়ে উৎকর্ষ লাভের কথা ভাবুন। একবার ভীষণ প্রতিযোগিতার চিন্তা থেকে বেরিয়ে সহযোগিতার, সহমর্মিতার চর্চার মধ্য দিয়ে সন্তানের ভালো মানুষ হওয়ার কথা ভাবুন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থার রূপান্তরের জন্য নতুন কারিকুলাম গ্রহণ করা হয়। নতুন এই কারিকুলামে শিক্ষাব্যবস্থার রূপান্তরের মধ্য দিয়েই ভবিষ্যতের স্মার্ট শিক্ষার্থীর বুনিয়াদ রচিত হবে।

এরই ধারাবাহিকতায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের উদ্দেশে শিক্ষাব্যবস্থার সব ধারাকে বিবেচনা করে প্রথমবারের মতো জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই রূপরেখা প্রণয়ন এবং তার ভিত্তিতে বিস্তারিত শিক্ষাক্রম, শিখন শেখানো সামগ্রী এবং মূল্যায়ন প্রক্রিয়া প্রণয়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যা এর আগে কখনোই অনুসরণ করা হয়নি।

দীপু মনি বলেন, শিক্ষাক্রম প্রণয়নের আগে ২০১৭-২০১৮ সালে এনসিটিবির একটি গবেষণা পরিচালিত হয়, যার ভিত্তিতে এই রূপরেখা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় বিধায় সরকার নতুন কারিকুলাম গ্রহণ করেছে। শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে পৃথিবীর বাস্তবতা অনেকটাই পাল্টে যাচ্ছে। শ্রমনির্ভর অর্থনীতির মডেল সামনে হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তির প্রসারের ফলে ভবিষ্যতে নতুন অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, যার কারণে বর্তমান সময়ের অনেক পেশা ও শ্রম অচিরেই প্রাসঙ্গিকতা হারাবে। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশের সম্ভাবনার দিক হলো, এ দেশের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী, যার জনমিতিক সুফল পেতে হলে অনতিবিলম্বে আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করা প্রয়োজন ছিল। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল আহসান নওফেল, মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি ও চাকরির পরীক্ষায় আসবে পরিবর্তন
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে দেশে প্রচলিত শিক্ষা কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ বছর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে এবং পরে বছরানুক্রমে নতুন নতুন শ্রেণীতে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। এ ছাড়াও নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ও চাকরি নিয়োগের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন করা হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামীতে চাকরির ক্ষেত্রেও নিয়োগ হবে পারদর্শিতার মূল্যায়নের ভিত্তিতেই। নতুন শিক্ষাক্রম এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সাযুজ্যপূর্ণ করা হবে চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রও। এ ছাড়াও আমাদের সরকারি চাকরির পাশাপাশি বর্তমানে বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সনদের চেয়েও বেশি জোর দেয়া হচ্ছে দক্ষতার ওপর নতুন শিক্ষাক্রম আমাদের শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে।

বর্তমানে দেশের উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে আমাদের একক ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। সব বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে এনটিএ গঠনের জন্য আরো দুই-তিন বছর সময় লাগবে। নতুন শিক্ষাক্রমে যেসব শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন তারা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগেই আমরা এ পরিবর্তন আনতে পারব বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/৩১/১০/২০২৩

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়