কুমিল্লায় শিক্ষক সংকটে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা

কুমিল্লাঃ দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল কুমিল্লা। শিক্ষা ও মননে এগিয়ে আছেন কুমিল্লা, তবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক স্বল্পতার কারণে পিছিয়ে আছেন ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা । বছরের পর বছর সহকারী শিক্ষকও প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদগুলো পূরণ হচ্ছে না। যার ফলে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নিয়মিত শ্রেণি শিক্ষকরা।

শিক্ষক সংকটে থাকা বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও এ নিয়ে বিরক্ত। বারবার জেলা শিক্ষা অফিসে ধরনা দিলেও এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তাই ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা।
কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা জেলায় ২১০৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৮ লক্ষ ৫ হাজার ৩৩৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের পদ ২১০৭ টি থাকলেও বাস্তবে রয়েছে ১০১৮ জন, সহকারী শিক্ষক দিয়ে চলতি দায়িত্ব পালন করছে ৫১৭ জন। তবে ১০৮৯ জন প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এ দিকে সহকারী শিক্ষক এর পদ শূন্য রয়েছে ৫২৪ জন। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক শৃঙ্খলাও ভেঙে পড়েছে। শিক্ষক স্বল্পতায় মানসম্মত ফলাফলের দিক দিয়েও পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই অভিভাবকদের।

অভিভাবকদের মধ্যে অনেকেই বলেন, শিক্ষক স্বল্পতার কারণে নিয়মিত পাঠদান না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের খারাপ ফলাফল। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে আগামী দিনে জেলাসহ উপজেলায় বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ভালো ফলাফল আসবে না। ওই বিদ্যালয়গুলোতে সহকারী শিক্ষক দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব এবং চলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ও পাঠদান কার্যক্রম। শিক্ষক সংকটে পড়ে চরম ভোগান্তিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিনের পাঠদান কার্যক্রম চলছে কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে। উপজেলায় কিছু মহিলা শিক্ষক মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় ও বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষণে থাকায় চলমান সংকট আরও প্রকট হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মেধা, মনন ও প্রতিভা বিকাশের উপযুক্ত স্থান হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের শিক্ষক স্বল্পতায় হোঁচট খেতে হচ্ছে।

শিক্ষক স্বল্পতায় থাকা বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিজেদের ইচ্ছে মতো ক্লাস নিয়ে থাকেন। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে অফিসের কাজের পাশাপাশি এক শিক্ষককে দুটি ক্লাসে ও পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হয়। তাই শিক্ষকরা একদিকে অতিরিক্ত কাজ আর পাঠদান কার্যক্রমে ক্লান্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে এক বা দুটি বিষয় সারাদিন পড়া নিয়ে শিক্ষার্থীরাও বিরক্ত হচ্ছে। আর এ কারণেই অনেক বিদ্যালয় ক্ষুধে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় যেতে আগ্রহ হারাচ্ছে। ওইসব বিদ্যালয় সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল ও আশানুরূপ হচ্ছে না। যেসব বিদ্যালয়ের ফলাফল ভালো হয় তারাও আশানুরূপ ফলাফল অর্জন করতে না পারায় হতাশায় বাড়ছ।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মকিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী প্রধান শিক্ষক মো: এরশাদ মিয়া বলেন, উপজেলার অনেক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য। তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন পিটিআইতে। জরুরি ভিত্তিতে শূন্য পদগুলোতে শিক্ষক দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে কুমিল্লা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, শিক্ষক সংকটের বিষয়টি অবগত আছি। সহকারী শিক্ষক নেই সেগুলোতে শিগগিরই শূন্য পদে শিক্ষক দেওয়া হবে। সামনে নিয়োগ পরীক্ষা শেষ হলে আমরা শত ভাগ সহকারী শিক্ষক পাব। আর প্রধান শিক্ষক নিয়ে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী পদ উন্নত হবে । তবে শিক্ষক সংকটের কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়ার কিছুটা বিঘœ ঘটছে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৭/১০/২০২৩    

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়