কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলা, ৬৪ শিক্ষার্থীর ভর্তি অনিশ্চিত

যশোরের মণিরামপুর মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ৬৪ শিক্ষার্থীর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

অভিযোগ করা হচ্ছে, কয়েক দফায় ভর্তির টাকা নিয়েও যথাযথভাবে কাজ না করে শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করেছেন কর্তৃপক্ষ। ফলে চলতি বছরে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ হারাতে বসেছে ৬৪ জন শিক্ষার্থী।

এদিকে সন্তানকে কাঙ্খিত কলেজে ভর্তি করাতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা।

বুধবার (২৬ জুন) সকালে কলেজ চত্বরে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা এই নিয়ে হইচই শুরু করেন। এসময় অনেককে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে।

চলতি বছরে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু হয় ১২ মে। তিন ধাপে আবেদনের মেয়াদ শেষ হয় ২৪ জুন। মণিরামপুর মহিলা কলেজে লেখাপড়ার মান ভাল হওয়ায় ৫৫০ আসনের বিপরীতে নির্ধারিত ফিস দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা কলেজে এসে আবেদন করে।

বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখায় তিনশ’ আসনে ভর্তিতে কোন অসুবিধা না হলেও মানবিক শাখায় ২৫০ আসনের বিপরীতে শিক্ষার্থী ভর্তিতে বিপত্তি দেখা দেয়। নির্ধারিত সময়ে আবেদন করেও ৬৪ জন শিক্ষার্থী ওই কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত কোন তথ্য পায়নি বলে অভিযোগ।

যার মধ্যে কোন তথ্য পাননি এমন শিক্ষার্থী রয়েছে সাতজন। কেউ কেউ ভর্তির ম্যাসেজ পেলেও সেটা আবার মহিলা কলেজ বাদে অন্য কলেজের। ফলে কাঙ্খিত কলেজে ভর্তি হতে না পেরে অথবা কোথাও ভর্তির সুযোগ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন এসব শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবকরা।

অভিযোগ করা হচ্ছে, সীমা, ইরিনা, মিতু, ফাতেমা, কানিজ ফাতেমা, রাবেয়া ও সুমাইয়া নামে সাত শিক্ষার্থী ভর্তি সংক্রান্ত কোন ম্যাসেজ পায়নি। এই সাত শিক্ষার্থীর চলতি বছরে কোথাও ভর্তি হওয়া সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছুক তমা চক্রবর্তী নামে এক শিক্ষার্থী কান্না জড়িত কন্ঠে জানায়, বারবার তাকে কলেজে ডেকে তিন ধাপেই আবেদন করিয়েছে মনিরুল (কম্পিউটার অপারেটর)। কিন্তু তার ভর্তি নিশ্চিত করতে পারেনি। পরে তার নাম বালিয়াডাঙ্গা কলেজের কোটায় অন্তর্ভুক্ত করিয়েছে অধ্যক্ষ। সেখানে ভর্তি হতে ইচ্ছুক নয় সে।

রীপা খাতুন নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, ঠিক সময়ে কলেজে এসে আবেদন করি। দ্বিতীয় পর্যায়ে ম্যাসেজ পাই রাজগঞ্জ কলেজের। এই (মহিলা) কলেজে এসে বিষয়টি জানালে স্যারেরা বলেন, কোন সমস্যা নেই। অপেক্ষা কর,এখানেই ভর্তি হওয়া যাবে। আজকে (২৬ জুন) আসার পর বলছে,মানবিক শাখায় ভর্তি হওয়া যাবে না। কারিগরি শাখায় ভর্তি হতে। কিন্তু কারিগরি শাখায় ভর্তি হতে অনিচ্ছুক রীপার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহিলা কলেজের একাধিক শিক্ষক জানান, বারবার টাকা নিয়ে আশা দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে হয়রানি করা হয়েছে। সর্বশেষ কোন সুযোগ না পেয়ে ২৪ জুন রাতে অধ্যক্ষ তড়িঘড়ি করে কিছু শিক্ষার্থীর নাম বালিয়াডাঙ্গা ও চেনাটোলা কলেজের কোটায় ঢুকিয়েছে। পরবর্তীতে এসব শিক্ষার্থীদের মহিলা কলেজে ফিরিয়ে আনা হবে, এমন শর্তে অধ্যক্ষ তাদের ওইসব কলেজে ভর্তি হতে বলছে। এটা অধ্যক্ষর একটা কৌশল। একবার ভর্তি হলে পরে আর তারা মহিলা কলেজে আসতে পারবে না।

মণিরামপুর মহিলা কলেজের কম্পিউটার অপারেটর (চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ) মনিরুল ইসলাম জানান, অন্যবার ভর্তিতে কোন সমস্যা হয়নি। এবার বুয়েটের (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়) তত্ত্বাবধানে ভর্তির কার্যক্রম চলায় এমন জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে।

মনিরুলের দাবি, যারা আবেদন করতে এসেছে তাদের সবার আবেদন অনলাইনে পাঠানো হয়েছে। অনেকের ম্যাসেজ না আসায় বারবার বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এছাড়া গত ২৩ জুন যশোর শিক্ষা বোর্ড অফিসে গিয়ে খবর নিয়ে দেখি মহিলা কলেজের কোটা পুরোণ হয়ে গেছে। আর কেউ ভর্তি হতে পরবে না। তখনও বিষয়টি অধ্যক্ষ স্যারকে জানিয়েছি। ওনারা ব্যবস্থা না নিলে আমার কি করার।

কলেজের অধ্যক্ষ নুরুজ্জামান বলেন, মনিরুল ভর্তির জটিলতা নিয়ে আমাকে কিছুই জানায়নি। সমস্যা হতে পারে এমনটি ভেবে গত ২৪ জুন আমি বোর্ডে গিয়ে মানবিক শাখায় ১০০ সিট বাড়ানোর আবেদন করেছি। অনুমতি পেলেই এসব শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হবে। কেউ বঞ্চিত হবে না।