মৌলভীবাজারঃ শিক্ষক সংকটে জেলার কমলগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার ১৫২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫২টিতেই প্রধান শিক্ষক নেই। ভারপ্রাপ্ত প্রধান (সহকারী শিক্ষক) শিক্ষক দিয়ে চলছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। একইসঙ্গে সহকারী শিক্ষকেরও ৩৬টি পদ শূন্য হয়ে আছে।
দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়গুলো অনেকটাই অভিভাবকশূন্য হয়ে আছে। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। মানসম্মত পাঠদান না হওয়ায় অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংকটে পড়েছে। প্রধান শিক্ষক না থাকার কারণে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব শূন্য পদ পূরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলায় নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলিয়ে ১৫২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে ১৫২জন প্রধান শিক্ষকের এবং ৭৭৪ জন সহকারী শিক্ষকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ৫২টি বিদ্যালয় চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। এ ছাড়া উপজেলার মোট ১৫২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৪ জন সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য রয়েছে। ১৫২টি বিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্রী রয়েছে ২২ হাজার ৩৩৬জন। তাদের মধ্যে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী (প্রতিবন্ধী) রয়েছে ৫১জন।
উপজেলায় বেসরকারিভাবে ৭৬টি বিদ্যালয় রয়েছে। কেজি, এনজিও এবং চা বাগান পরিচালিত এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৯ হাজার ৬৮৭জন। তাদের মধ্যে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী ১১জন।
কেচুলুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক পপি আক্তার ডলি বলেন, ‘উপজেলায় প্রাথমিক পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষাদান ও সুষ্ঠু পাঠদানের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে প্রধান শিক্ষকবিহীন এসব বিদ্যালয়ে দ্রুত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন।
‘প্রধান শিক্ষক শূন্যতার কারণে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগতমান ধরে রাখা সম্ভব হয় না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের পাঠদানের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ, শ্রেণিকক্ষ পর্যবেক্ষণ, সভা-সেমিনারে অংশ নেয়াসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়। ফলে পাঠদানের জন্য বিদ্যালয়গুলোর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক সংকট লেগেই আছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানান, যখন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়, তখন শিক্ষক সংকট রেখেই কর্তৃপক্ষ নিয়োগ প্রদান করেন। আবার দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি বন্ধ থাকায় সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের কাঁধে বাড়তি দায়িত্ব চেপেছে। অথচ দায়িত্ব পালনকালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা সরকারি তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা পান না।
অন্যদিকে অফিসের বিভিন্ন নিদের্শনা অনুযায়ী ভারপ্রাপ্তদের অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হয়। এতে বিদ্যালয়ে পাঠদানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
কেছুলুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমেনা বেগম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছি। বিদ্যালয় ও অফিসের কাজের পাশাপাশি স্কুলে ক্লাসও নিতে হচ্ছে। শিক্ষার গুণগত মান অক্ষুণ্ন রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
‘আমার স্কুলে ২৬৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ৬ জন শিক্ষক দ্বারা প্রয়োজনীয় মানসম্মত পাঠদান সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাছাড়া সবাই মহিলা শিক্ষক। মহিলা শিক্ষকের অনেক সময় নানা সমস্যা থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে আরও দুজন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলে আমাদের জন্য ভালো হয়। বিদ্যালয়ে পাঠদানও গতিশীল হবে।’
কমলগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে সেগুলোর তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি প্রদানের জন্য সহকারী শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে কার্যক্রম চলমান। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব শূন্য পদ পূরণ করা হবে।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৭/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়