চট্টগ্রামঃ একে একে দুইবার নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কেউ ৮ বিষয়ে অকৃতকার্য, আবার কেউ ১০ বিষয়ে। এভাবে ৮১ জন পরীক্ষার্থী নির্বাচনী পরীক্ষায় ফেল করে। দুই বার পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে ব্যর্থ হয়ে উল্টো প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে ৮১ জন পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। এমন অবাক করা ঘটনাটি বাঁশখালীর নাটমূড়া পুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের।
রবিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে অকৃতকার্য পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। এমনকি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ চেয়ে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন আক্তারের কাছে স্মারকলিপি দেয় ফেল করা শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, গত ১ অক্টোবর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত নাটমূড়া পুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০২৪ সালের এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী। এরমধ্যে কৃতকার্য হয় ২৩০ জন। আর অকৃতকার্য হয় ৮৬ জন শিক্ষার্থী। ফেল করা শিক্ষার্থীদের জন্য আবার নির্বাচনী পরীক্ষার আয়োজন করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুনরায় গত ৫ নভেম্বর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত সকাল-বিকাল দুটি পরীক্ষা নেয় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। কিন্তু তাতেও ফলাফল পরিবর্তন করতে পারেননি এসব শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ফরম পূরণের অনুমতি না দেওয়ায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে ৮১ জন শিক্ষার্থী।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিরিন, সাকিয়া, মাসুদ ও তারেকসহ কয়েকজন পরীক্ষার্থী বলেন, ‘এলাকার প্রভাবশালী অভিভাবকের সাথে স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ৮১ জন শিক্ষার্থী থেকে ৪ জনকে উত্তীর্ণ করে। দ্বিতীয় বার পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে একজন শিক্ষক এসে আমাদের এক সহপাঠীকে বলে, ‘এতো লিখে কি লাভ? ৪ জন এর বেশি কাউকে উত্তীর্ণ করবো না। পরবর্তীতে আমরা জানতে পারি আমাদের প্রধান শিক্ষক আমাদের পরীক্ষার খাতাগুলো মূল্যায়ন না করে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে চুক্তি হওয়া ৪ জনের খাতা মূল্যায়ন এবং তাদের ফরম পূরণের অনুমতি দেয়।’
জুবায়ের, লিজা ও দিলরুবা নামের তিন পরীক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের ৮১ জন সহপাঠীর মধ্যে ৮০ শতাংশ ছাত্রী। ফরম পূরণের অনুমতি না দেওয়ায় ইতোমধ্যে তাদের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে তাদের পরিবার। আবার ছেলেদের মধ্যে অনেকে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ও পরিবার এবং প্রতিবেশীদের খারাপ ব্যবহারের কারণে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাটমূড়া পুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, ‘যারা ফেল করছে তারা এমনভাবে ফেল করছে ; কোনো বিষয়ে ২ নম্বর, আবার কোনো বিষয়ে ৪-৬ নম্বর। এ জন্য আমার বিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা শেষে তাদেরকে পরীক্ষায় অংশ নিতে না দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটা আমার একক সিদ্ধান্ত নয়। স্বজনপ্রীতির কোনো প্রশ্নই আসে না। ম্যানেজিং কমিটির সবার সামনে খাতা মূল্যায়ন করা হয়েছে। কিছু বিপদগামী শিক্ষার্থী সারা বছর পড়ালেখা না করে এখন ফেল করার পর অপপ্রচার চালাচ্ছে, ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরা তো আমার ছাত্র-ছাত্রী। এরা যদি পাস করে, তাহলে কি জন্য আমি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবো? আমি তো আমার ম্যানেজম্যান্টের অধীনে চাকরি করি। আমি তাদের বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারি না।’
একই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাটমূড়া পুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাহাত আলম আনোয়ার বলেন, ‘গত বছর এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে পুরো উপজেলায় আমাদের বিদ্যালয় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। মানের দিক দিয়ে আমরা প্রথম স্থানে। একে একে দুইবার টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দানের পরেও ফেল করা শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিলে আমার বিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট হবে।’
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন আক্তার বলেন, ‘আজকেই এসএসসি ফরম পুরণের শেষ দিন। আগে জানলে কোন সুরাহা করতে পারতাম। তবুও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি দেখতে বলে দিয়েছি।’