এমপিওভুক্ত শিক্ষক হাসান, একাই একাধিক পদের অধিকারী

আল আমিন হোসেন মৃধা, নির্বাহী সম্পাদকঃ মোঃ হাসানুজ্জামান হাসান, শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও একই জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার গোজাকুড়া নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক (যার ইনডেস্ক নম্বর N56807648)। একই সাথে তিনি ঝিনাইগাতী উপজেলার পানবর ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির (এডহক কমিটি) সভাপতি  এবং মাদ্রাসাটির পর পর দুই বারের সাবেক সভাপতি (সব মিলিয়ে একই প্রতিষ্ঠানে টানা তিন মেয়াদের সভাপতি)।

শুধু একজন যুবলীগ নেতা কিংবা শিক্ষক বা মাদারাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিই নন, তিনি ঝিনাগাতীর কাংশা ইউনিয়নের আয়নাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির (এডহক কমিটি) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত সভাপতি যা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ময়মনসিংহ এ অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।

তিনি যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অর্থ্যাৎ নালিতাবাড়ি উপজেলার গোজাকুড়া নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ঝিনাইগাতীর পানবর ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসার দুরুত্ব ৩৭ কিলোমিটার এবং আয়নাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দুরুত্ব ৪০ কিলোমিটার। একক ব্যক্তি একই সাথে এত দুরুত্ব অতিক্রম করে কিভাবে পাঠদান এবং একই সাথে দুইটি ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্ব ও যুবলীগের দায়িত্ব পালন করছেন তা কারও বোধ্যগম্য নয়।

পানবর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটিতে ৩য় দফায় সভাপতি হতে হাসানুজ্জামানের তোড়জোড় 

মোঃ হাসানুজ্জামান ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখে প্রথমবারের মত পানবর দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের ৩০ তারিখে দ্বিতীয়বার সভাপতি নির্বাচিত হন। পর পর দুইবার নির্বাচিত হবার পর ২০২২ সালের নভেম্বরের ১৪ তারিখ তিনি মাদ্রাসাটির ম্যানেজিং কমিটির (এডহক কমিটি) সভাপতি হন। বর্তমানে এডহক কমিটির সভাপতি পদে বলবৎ থেকে পুনরায় সভাপতি নির্বাচনের জন্য তিনি তোড়জোড় শুরু করেছেন।

পানবর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা । ছবিঃ সংগৃহীত

স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা সদস্য পদে কোন ব্যক্তি পর পর দুইবারের বেশি থাকতে পারবে না মর্মে ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে একটি রায় দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট এ বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরির বিষয়ে নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডকে। ইতিমধ্যে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড একটি প্রোবিধানমালা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি নীতিমালা তৈরি করেছে যদিও সেটি এখনও প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। বিষয়টি শিক্ষাবার্তা ডট কমকে নিশ্চিত করেছেন আন্তঃ শিক্ষা বোর্ডের আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের  বেসরকারি মাধ্যমিক অধিশাখার যুগ্ম সচিব সোনা মনি চাকমা। তাঁরা বলছেন হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী কোন ব্যক্তিই স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটিতে পর পর দুইবারের বেশি সভাপতি হতে পারবে না। খসড়া নীতিমালাতেও সেটা স্পষ্ট করা হয়েছে। যদি কেউ এ রায়কে অম্যান্য করে তাহলে আদালত অবমাননা হবে।

পর পর দুই বারের বেশি সময় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি থাকতে পারবেন কি’না এমন কোন নির্দেশনার কথা জানেন না পানবর ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসার সুপার আবুল কালাম। তিনি শিক্ষাবার্তা ডট কমকে বলেন, জনাব হাসানুজ্জামান পর পর দুই বার সভাপতি থাকার পর এখন এডহক কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এর পরেও কমিটিতেও তিনি আসতে পারেন।

মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রার মােঃ সিদ্দিকুর রহমান শিক্ষাবার্তা ডট কম’কে বলেন, একই ব্যক্তি দুই বারের অধিক থাকতে পারবে না আমরা নতুন প্রোবিধানমালায় সেটা স্পষ্ট করেছি (প্রজ্ঞাপন দিলে ক্লিয়ার হবে)। এখন পর্যন্ত আমরা দুই বারের বেশি দিয়েছি। হাইকোর্টের রায়ে পর পর দুইবারের বেশি কোন ম্যানেজিং কমিটিতে একই ব্যক্তি সভাপতি থাকতে পারবে না মর্মে যে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে যে বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে আপনি যেটা জানতে চাচ্ছেন বুঝতে পেরেছি। এই বিষয়টা চেয়ারম্যান মহোদয় ভালো বলতে পারবেন।

তবে এ বিষয়ে মাদারাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর কায়সার আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়ন এমনকি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন সাড়া মেলেনি।

আয়নাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন নিয়ে হাসানুজ্জামানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ 

২০২১ সালের সেপ্টম্বর মাসে আয়নাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হলে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চানক্য সরকার তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে এক নম্বর দিয়ে ও আরও দুই জনের নাম সংযজন করে এডহক কমিটি গঠনের জন্য ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠায়। এই তিন জনের মধ্যে হাসানুজ্জামানের নাম উল্লেখ ছিল না। প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাসানুজ্জামানের নাম উল্লেখ না করলেও যুবলীগ নেতা হওয়ায় স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব একেএম ইঞ্জিনিয়ার ফজলুল হক চাঁন এর কাছ থেকে একটি ডিও লেটার ব্যবস্থা করে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে জমা দেন । ঐ ডিও লেটারের উপর ভিত্তি করে হাসানুজ্জামানকে এডহক কমিটির সভাপতি করে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। এডহক কমিটির সভাপতির মেয়াদ শেষ হলে পুনরায় ডিও লেটার দিয়ে হাসানুজ্জামান এডহক কমিটির মেয়াদ চার মাস বৃদ্ধি করেন। এই চার মাস অতিবাহিত হলে তিনি ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী হন সেখানেও এমপির ডিও লেটার বোর্ডে জমা দেন। অর্থ্যাৎ এক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি থাকতে তিনি তিন তিন বার ডিও লেটার ব্যবহার করেন।

এডহক কমিটির সদস্য ৪ জন। এরা হলেন-অভিভাবক সদস্য, শিক্ষক প্রতিনিধি, সভাপতি এবং পদাধিকারবলে সদস্য-সচিব পদে প্রতিষ্ঠান প্রধান। অভিভাবক সদস্য পদে মনোনয়ন দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আর শিক্ষক প্রতিনিধি পদে মনোনয়ন দেন জেলা শিক্ষা অফিসার। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষকমণ্ডলী এবং প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে পরামর্শক্রমে ৩ জন করে প্রতিনিধির নামের তালিকা দেন। প্রস্তাবিত এ তালিকা থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং জেলা শিক্ষা অফিসার প্রতিনিধি মনোনয়ন দেন। প্রবিধানমালা ২০০৯-এর ৩৯ ধারা মোতাবেক সভাপতি মনোনয়ন সম্পূর্ণরূপে বোর্ডের চেয়ারম্যানের এখতিয়ার। এডহক কমিটি গঠনের জন্য কাগজপত্র অনলাইনে সাবমিট করতে হয়। স্ক্যান করে দেওয়া কাগজপত্রের ভেতর রয়েছে- আবেদনপত্র, অভিভাবক প্রতিনিধির কপি, শিক্ষক প্রতিনিধির কপি, বিগত কমিটির প্রথম সভার রেজুলেশন এবং বিগত কমিটির কপি। এর ভেতর এমপি সাহেবের ডিও লেটার সাবমিট করার অপশন নেই। তবুও এমপি সাহেবের ডিও লেটারে এডহক কমিটিতে দুই বার সভাপতি এবং নির্বাচন করে একবার সভাপতি (প্রস্তাবিত) হলেন হাসানুজ্জামান।

আয়নাপুর উচ্চ বিদ্যালয়। ছবিঃ সংগৃহীত

এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হলে কমিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শেরপুর দায়রা জর্জ আদালতে দুইটি মামলা চলমান থাকলেও নির্বাচনের তফসীল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসীল অনুযায়ী ২ অক্টোবর ২০২২ তারিখে নির্বাচনের কথা থাকলেও পুনঃতফসীল না দিয়ে ৩ অক্টোবর ২০২২ তারিখে  অভিভাবক ক্যাটাগরির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং পরের দিন ৪ অক্টোবর ২০২২ তারিখে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কার্যালয়ে সভাপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যা ম্যানেজিং কমিটির প্রোবিধিমালার ২১ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। প্রোবিধিমালায় সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে ঘোষিত তফসীল অনুযায়ী নির্ধারিত দিনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে। কোন কারনে ঐদিন নির্বাচন করতে না পারলে পুনঃতফসীল ঘোষণা করতে হবে। প্রোবিধিমালার ২০০৯ এর ৩৫  (১) অনুযায়ী স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানেই অভিভাবক ক্যাটাগরি ও সভাপতি নির্বাচন করতে হবে।

আয়নাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চানক্য সরকার বলেন, আমরা নির্বাচন পরিচালনার জন্য কোর্ট (আদালত) থেকে অনুমতি নিয়েছিলাম । আদালতের জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার) নির্বাচন করার জন্য লিখিত দিয়েছিল। তবে তিনি সেই লিখিত দেখাতে পারেননি।  তফসীল ঘোষণার পরের দিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো, পুনঃতফসীল ঘোষণা করা হয়েছিল কি’না জানতে চাইলে তিনি বলেন না হয়নি। সভাপতির নির্বাচন কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল শিক্ষাবার্তা ডট কমকে বলেন, সভাপতি নির্বাচন আমার কার্যালয়ে হয়েছিল। ঘোষিত তফসীল অনুযায়ী নির্বাচন না করে পরের দিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো পুনঃতফসীল ঘোষণা করেছিলেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, করেছিলাম। তবে পুনঃতফসীলের সেই কাগজ চাইলে তিনি রাগান্বিত কন্ঠে বলেন, যে আপনাকে তথ্য দিয়েছে তার কাছ থেকে নেন বলে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরবর্তীতে আর কল ধরেননি।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ  শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান গাজী কামরুল হাসান শিক্ষাবার্তা ডট কম’কে বলেন, ময়মনসিংহ নতুন বোর্ড ফলে অনেক প্র্যাকটিসই এখনও পুরোপুরি হয়নি। আন্তঃবোর্ডে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আন্তঃবোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি তপন কুমার সরকার শিক্ষাবার্তা ডট কমকে বলেন, তফসীলে ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী নির্বাচন করতে না পারলে অবশ্যই পুনঃতফসীল ঘোষণা করতে হবে এবং অবশ্যই স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন করতে হবে। এর ব্যতয় হলে আমরা সেই কমিটি অনুমোদন দেই না।

একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক একই সাথে একাধিক পদে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর যা বলছে 

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, শিক্ষকদের কেবল শিক্ষকতা পেশার মধ্যেই থাকা উচিত। তারা যখন রাজনীতি কিংবা অন্য কোনো পদের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন তখন তাদের জন্য পাঠদান কষ্টকর হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন না।

তিনি জানান, এমপিও নীতিমালায় শিক্ষকদের একই সাথে দুটি পেশার সাথে সম্পৃক্ত থাকা যাবে না বলে বলা হয়েছে। তবে নীতিমালার বাস্তবায়ন নেই। আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ আসে। আমরা অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করি।  একজন শিক্ষক একই সাথে রাজনীতিবিদ, দুইটি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হলে সে কিভাবে পাঠদান করবে, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

এমপিওভুক্ত শিক্ষক অন্য এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভাপতি হবার বিধানে যা আছে

ম্যানেজিং কমিটির প্রবিধানমালা ২০০৯ এর ৭ এর উপধারা ২ ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে, কোন শিক্ষক কিংবা শিক্ষক শ্রেণির কেঊ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হতে পারবেন না। প্রবিধানমালায় ‘শিক্ষক’ শ্রেণি বলতে অর্থ মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কোন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পূর্ণকালীন শিক্ষাদানের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি, এবং প্রদর্শক ও শরীরচর্চা শিক্ষকও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবেন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রোবিধিমালায় একই কথা উল্লেখ আছে।

প্রোবিধানমালায় সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও তাহলে কেন একজন শিক্ষক সমমনা অন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হচ্ছেন প্রশ্ন করলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঁঞা শিক্ষাবার্তা ডট কম’কে বলেন, একজন শিক্ষক বলতে নিজ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হতে পারবেন না। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক মাধ্যমিক স্তরের অন্য যে কোন দুইটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারবেন। তবে অবশ্যই কর্মরত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট থেকে প্রত্যয়ন পত্র নিতে হবে এই মর্মে যে অন্য প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হলে তার প্রতিষ্ঠানে পাঠদানে কোন অসুবিধা হবে না।

তবে এমপিওভুক্ত শিক্ষককে গভর্নিং বডির সভাপতি হতে নিরুৎসাহিত করে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে

 

একজন শিক্ষক অনেক সময় পার্শ্ববর্তী উপজেলা বা অন্য কোন জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকেন তিনি সেখান থেকে কিভাবে নিজের এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করবেন বলছিলেন দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল। তিনি শিক্ষাবার্তা ডট কমকে বলেন, একজন শিক্ষক এমপিওনীতিমালা অনুযায়ী তার প্রতিষ্ঠানে সঠিক দায়িত্ব পালন করবেন। তাহলে নিজের দায়িত্ব সঠিক পালন করতে গেলে তিনি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব কিভাবে পালন করবেন প্রশ্ন রাখেন তিনি। একই সাথে একই ব্যক্তি একাধিক পদে দায়িত্ব পালন করতে গেলে কোনটাই তিনি সঠিকভাবে পালন করতে পারেন না। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির উপর প্রতিষ্ঠানটির অনেক কিছুই নির্ভর করে।  মূলত এই কারণেই আমরা শিক্ষকদের নিরুৎসাহিত করি।

নালিতাবাড়ি উপজেলার গোজাকুড়া নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ লুৎফর রহমান শিক্ষাবার্তা ডট কমকে বলেন, তিনি আয়নাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির জন্য মৌখিকভাবে বলেছেন। আমার কাছ থেকে কোন প্রত্যয়ন পত্র নেননি এবং আমি কোন ধরনের প্রত্যয়ন পত্র দেইনি। তবে পানবর ইসলামীয়া মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটিতে পর পর তিন বার  সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন সে কথা তিনি জানেন না। তিনি বলেন, ঐ মাদ্রাসার বিষয়ে আমি আজই আপনার থেকে শুনলাম সহকারী শিক্ষক হাসানুজ্জামান আমাকে কখনও এই বিষয়ে কিছু বলেননি।

একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক অন্য এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হতে পারবেন কি’না বিস্তারিত পড়ুন এই প্রতিবেদনেঃ এমপিওভুক্ত শিক্ষক কী ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হতে পারবেন?

হাসানুজ্জামান হাসান যা বলছেন   

পর পর তিন বার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি থাকার বিধান আছেন কি’না জানেন না হাসানুজ্জামান। তিনি বলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বলেই আমি পানবর ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসার সভাপতি হয়েছি। তবে যেহেতু এরকম বিধান নেই আমি এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হলে আমি আর থাকব না। ৪০ কিলোমিটার দূর থেকে এসে কিভাবে দুই দুই টা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্ব পালন করেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি আমার প্রতিষ্ঠানে থাকি সকাল ৯ টাকা চার টা পর্যন্ত। দুই প্রতিষ্ঠানেই মূলত শুক্রবার শনিবার বৈঠক সভা করি। এলাকার মানুষের দাবির প্রেক্ষিত আমি আয়নাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির এডহক কমিটির  সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। এলাকার মানুষের চাওয়াতেই নির্বাচনে দাঁড়াই।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০২/০২/২৩