এমপিওভুক্তি, সংশোধনী, বি.এড/উচ্চতর স্কেলের আবেদনে দিতে হয় ২০-২৫ হাজার টাকা
মির্জাগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের হিসাবরক্ষক মো. জাকির হোসেনকে
পটুয়াখালীঃ জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের হিসাবরক্ষক মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ব্যাপক অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভুক্তভোগী শিক্ষকরা সম্মিলিতভাবে গত ১৩ই আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এবং ১৭ই আগস্ট বরিশাল অঞ্চলের উপ-পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযুক্ত জাকির হোসেন উপজেলার মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের পিঁপড়াখালী গ্রামের মো. আশ্রাব আলী বেপারির ছেলে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত জাকির হোসেন ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে মির্জাগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে অফিস সহকারী (কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর) পদে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে হিসাবরক্ষক পদে পদোন্নতি পান। এরপর থেকেই তার ঘুষ ও দুর্নীতির অত্যাচারে উপজেলার মাধ্যমিক স্কুল ও দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষকরা অতিষ্ঠ। ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া ছাড়াও হিসাবরক্ষক জাকিরের জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ডে (জিপিএফ) রয়েছে প্রায় ৩১ লাখ টাকা। নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে রয়েছে কোটি কোটি টাকা। সম্প্রতি হিসাবরক্ষক মো. জাকির হোসেন পারফরমেন্স বেজড গ্রান্টস ফর সেকেন্ডারি ইনস্টিটিউশন (এসইডিপি) এসএমএজি’র আওতায় ৫ লাখ টাকা পাইয়ে দেয়ার জন্য সুবিধাভোগী প্রতি প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। বিনামূেল্য বই বিতরণের জন্য পরিবহন খরচ বাবদ প্রতি প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারি অর্থ বরাদ্দ থাকলেও তা ২০১৭ সাল থেকে হিসাবরক্ষক জাকির হোসেন কোনো প্রতিষ্ঠানকে না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি বই বিতরণের সময় প্রতি প্রতিষ্ঠান থেকে কুলি খরচ বাবদ ১-৩ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রতি শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডি বাবদ ৩০ টাকা হারে সরকারি অর্থ বরাদ্দ থাকলেও তিনি তা কোনো প্রতিষ্ঠানে না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির জন্য বরাদ্দের তালিকার হার্ডকপি তার আফিসে জমা নেয়ার সময় তাকে প্রতি শিক্ষার্থী বাবদ ৫০ টাকা হারে ঘুষ দিতে হয়। এ ছাড়াও তিনি জাতীয় কারিকুলামের রূপরেখাসহ বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের সময় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ভাতা থেকে প্রকাশ্যে ৩০০-৫০০ টাকা হারে ঘুষ গ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন স্কুলের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীকে শিক্ষক দেখিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের সময় প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সম্মানীসহ অফিসের বিভিন্ন খরচের নামে প্রতি প্রতিষ্ঠান থেকে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জোরপূর্বক আদায় করেন। অভিযোগে আরও বলা হয়, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সহায়তায় প্রধান শিক্ষক ও মাদ্রাসার সুপার নিয়োগের প্রশ্ন ফাঁস করে মেধা তালিকায় প্রথম বানিয়ে নিয়োগ পাইয়ে দেয়া বাবদ ১৫-২০ লাখ, সহ-প্রধান শিক্ষক/সহ-সুপার নিয়োগের জন্য ১০-১২ লাখ, ল্যাব এসিস্ট্যান্ট ও অফিস সহকারী নিয়োগে ৮-১০ লাখ এবং ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে ৭-৮ লাখ টাকা ঘুষ নেন জাকির।
শিক্ষকদের নতুন এমপিওভুক্তি, যেকোনো সংশোধনী, বি.এড স্কেল ও উচ্চতর স্কেলের অনলাইনে আবেদন ফরোয়ার্ড করতেও ২০-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন এই হিসাবরক্ষক। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জাকির হোসেনের মুঠোফোন কল করলে তিনি বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে তার বসের (উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা) সঙ্গে কথা বলতে বলেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, বরিশাল অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, অভিযোগের ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৯/০৮/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়