নিজস্ব প্রতিবেদক।।
দেশে চিনির সঙ্কট ও চলমান অস্থিরতার মধ্যেই আবার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআরএ)। খোলা চিনির দাম প্রতি কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ১০৭ টাকা। আর প্যাকেটজাত চিনির দাম প্রতি কেজি ১১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিন মাস আগে গত বছরের নভেম্বরে খুচরা পর্যায়ে চিনির দাম বাড়িয়ে প্যাকেটজাত চিনির দাম ১০৭ টাকা এবং খোলা চিনির কেজি ১০২ টাকা করা হয়েছিল। নতুন এ দাম আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাম বাড়ানোর এ ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআরএ)।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির ঊর্ধ্বমুখী দাম, ডলারের বাড়তি বিনিময় হার এবং স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলগুলোর উৎপাদন ব্যয় বিবেচনা করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন দামে বিক্রি হবে চিনি। খুচরা পর্যায়ে কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনি। প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনি বিক্রি হবে ১০৭ টাকায়; আর পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হবে প্রতি কেজি ১১২ টাকায়।
দেশের চিনির বাজার এখনো অস্থির। বাজারে প্যাকেটজাত চিনি নেই বললেই চলে। এমনকি ডিলার পর্যায়েও মিলছে না কাক্সিক্ষত চিনি। আবার যাও পাওয়া যাচ্ছে, তাও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
এদিকে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রাজ্যেভেদে কেজি প্রতি খোলা চিনি ৩৬ রুপি থেকে ৪৪ রুপি করে বিক্রি হয়েছে গতকাল। বাংলাদেশী টাকায় যা ৪৭ থেকে ৫৭ টাকা। কলকাতায় প্যাকেটজাত সবচেয়ে ভালো মানের চিনির দর হচ্ছে ৪৯ টাকা। বাংলাদেশী টাকায় যা ৬৫ টাকা। পাকিস্তানে প্রতি কেজি চিনির দর ১৫৫ পাকিস্তানি রুপি, বাংলাদেশী টাকায় যা ৭১ টাকা ৩৩ পয়সা। নেপালে প্রতি কেজি চিনি দাম ১০০ টাকা বাংলাদেশী টাকায় যা ৮১ টাকা ২৬ পয়সা।
এদিকে চিনির ওপর মূল্যসংযোজন কর বা ভ্যাট কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, দেশে উৎপাদিত চিনির পরিমাণ ৫০ হাজার টন, যা চাহিদার মাত্র ১ শতাংশ। বিশ্ববাজারে পণ্যটির দাম বেড়েছে। দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। এর ফলে আমরা ভ্যাট কমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি।
মতিঝিল এমসিসিআই’য়ে গতকাল বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, যখন প্রয়োজন হয় তখনই মূল্যবৃদ্ধি করা হয়। বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ করেই চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে। তাই দর সমন্বয় না করা হলে ফলাফল ভিন্ন হতে পারে। মিল থেকে চিনি বের করতে হলে ১৬ থেকে ১৭ দিন লেগে যায়। আর এর জন্য প্রতিদিন ২ বা ৩ হাজার টাকা করে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, এই ব্যাপারে শুনেছি। আমরা চেষ্টা করছি এটা যেন না হয়।
এ ছাড়া ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো এলসি খুলতে পারছে না। সাংবাদিকদের এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, জাহাজে যে পণ্য ছিল সেগুলো গত পরশু থেকে খালাস শুরু হয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে যাতে তারা এলসি খোলে। ব্যাংক তাদের আস্থার ভিত্তিতে পণ্য আমদানিতে এলসি খুলে থাকে। সে আস্থার জায়গা থেকেই ব্যাংকগুলো বড় বড় প্রতিষ্ঠানের এলসি খুলছে। ছোট গ্রুপগুলোরও ব্যাংক টু গ্রাহক আস্থার ভিত্তিতে এলসি খুলে থাকে। ব্যাংকগুলোতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে রমজানের পণ্য যেন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে খোলা হয়।
গ্যাসের দাম নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নিয়ে উদ্যোক্তারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলতে চায়। গ্যাসের দাম অ্যাডজাস্ট করার জন্য যখন নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তখন তারা বলেছিলেন যাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ হয়। কিন্তু যখন গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো, তখন তারা বলছেন, দাম একটু বেশি হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে তারা কথা বলবেন বলে আমাদের বলেছে। আমরাও আমাদের মতো করে রিপোর্টটা করছি যেটা ভাল হয় সেটা করব। দেখব গ্যাসের দাম কমানো যায় কি না।