এটিইও নিয়োগে কাটছে জটিলতা

আদালতের নির্দেশে পিএসসির নড়চড়

ঢাকাঃ উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পর সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) নিয়োগ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে বৈঠকে বসছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এতে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে ১৫৯ এটিইও নিয়োগ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। বুধবার (৮ নভেম্বর) কমিশন কার্যালয়ে এ বৈঠক হবে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া নতুন শিক্ষকরা এটিইও পদে আবেদন করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে এক দফা জটিলতার নিরসন হলেও পরে ফের জটিলতা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এ বিষয়ে উচ্চপর্যায় থেকে মতামত পাওয়ায় এটিও পদে নিয়োগ নিয়ে আলোচনা করতে সভা ডেকেছে পিএসসি।

পিএসসির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাধারণ নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী—দশম গ্রেডের এটিইও পদে বিভাগীয় প্রার্থীর ক্ষেত্রে দুই বছরের অভিজ্ঞতা প্রযোজ্য। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য এটা প্রযোজ্য নয় বলে বলা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় আবেদন প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, এটিইও পদে আবেদন নিয়ে প্রার্থীরা আদালতে রিট করেছিলেন। এ বিষয়ে উচ্চপর্যায় থেকে কিছু মতামত পাওয়া গেছে। আমরা পর্যবেক্ষণগুলো পর্যালোচনা করবো। নতুন করে নির্দেশনা দেওয়ার পর আবারও অনলাইনে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হতে পারে।

রিটকারী প্রার্থী গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর সুলতানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. রাফিউল ইসলাম রাফি বলেন, ‘পিএসসি আমাদের কিছুই জানাচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে আমরা রিট করেছিলাম। আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন এক মাসের মধ্যে বিষয়টি স্পষ্ট করতে। এর মধ্যে পিএসসি বিষয়টি বৈঠক করতে বসছে। আশা করি সেখানে আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া হবে।’

জানা গেছে, চলতি বছরের ২৬ জুন সমন্বিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। সেখানে ৪০ নম্বর ক্রমিকে ১৫৯ জন এটিইও পদে নিয়োগের জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন চাওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বিভাগীয় প্রার্থী বলতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষক (অনূর্ধ্ব ৪৫ বছর) এটিইও পদে আবেদন করতে পারবেন। তবে নিচে আবেদন নির্দেশিকায় বলা হয়—এ পদে আবেদনের জন্য প্রাথমিকের শিক্ষকের কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকা লাগবে।

পরে নতুন যোগদান করা শিক্ষকরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় যোগাযোগ করতে থাকেন। মন্ত্রণালয় থেকে স্পষ্টভাবে শিক্ষকদের জানানো হয়, নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরাও এটিইও পদে আবেদন করতে পারবেন। পরে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে লিখিত আবেদন করেন।

১৭ জুলাই মন্ত্রণালয় পিএসসিকে এ বিষয়ে চিঠি দেয়। সেখানে বিদ্যমান বিধিমালা (তৎকালীন বিধিমালা) উল্লেখ করে এটিইও পদে নিয়োগ যোগ্যতার শর্ত সংক্রান্ত জটিলতা অবসান ও বিজ্ঞপ্তি সংশোধনের প্রয়োজন হলে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ করা হয়।

এরপর আবেদন নির্দেশিকা থেকে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকার বাধ্যবাধকতা তুলে দেয় পিএসসি। ফলে বিভাগীয় কোটায় পূরণযোগ্য ১৫৯ পদে এটিইও নিয়োগে ১ জুলাই থেকে অনলাইনে যে আবেদন শুরু হয়েছিল, তাতে নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরাও আবেদন করার সুযোগ পান।

৩১ জুলাই পর্যন্ত এ পদে আবেদন প্রক্রিয়া চলার কথা ছিল। কিন্তু আবেদন চলাকালে ২৪ জুলাই আবারও নিয়মে পরিবর্তন আনে পিএসসি। কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতার ঘর হঠাৎ যুক্ত করা হয়। এতে ফের জটিলতায় পড়েন নতুন শিক্ষকরা। তারা পিএসসি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে আবারও যোগাযোগ করে অভিযোগ জানাতে থাকেন।

পিএসসির কোনো সাড়া না পেয়ে প্রার্থীরা রিট আবেদন করেন। গত ১৯ অক্টোবর বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর বেঞ্চে ওই রিটের ওপর সর্বশেষ শুনানি হয়। শুনানি শেষে এটিইও নিয়োগে জটিলতা নিরসনে পিএসসিকে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। আদালত এক মাসের মধ্যে প্রার্থীরা পিএসসিতে যে আবেদন করেছেন, তা নিষ্পত্তি করে বিষয়টি স্পষ্ট করতে বলেছিলেন।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৭/১১/২০২৩ 

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়