বাগেরহাটঃ নানামুখি সংকটে বাগেরহাটের একমাত্র সরকারি কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। চরম শিক্ষক সংকটে দুই শিফটে কার্যক্রম পরিচালনার কথা থাকলেও এখন চলছে এক শিফট।
শ্রেণি কক্ষ ও ল্যাব সংকটে ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। সাত শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য নেই কোন ক্যান্টিন।
খেলার মাঠে পানি থাকে বছরের চার মাস। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন, শ্রেণীকক্ষ, আবাসন ও ল্যাব সংকট মেটাতে পাঁচতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজ চলছে।
এছাড়া অন্যান্য সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
কলেজ সূত্রে জানাযায়, ১৯৬৫ সালে ৩ দশমিক ৯০ একর জমির ওপর ভোকেশনাল ট্রেনিং ইন্সটিউিট (ভিটিআই) নামে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়।
১৯৯৫ সালে এসএসসি (ভোকেশনাল) এবং ১৯৯৭ সালে এইচএসসি(ভোকেশনাল) শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির নাম দেওয়া হয় বাগেরহাট সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ । তারপর থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে কিম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি, জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস, রেফ্রিজারেশন এ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং, ওয়েল্ডিং এ্যান্ড ফেব্রিকেশন এই চারটি ট্রেডে এসএসসি ও এইচএসসি(ভকেশনাল)বিষয়ে পড়ানো হত। সরকারি নির্দেশে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে চালু ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইনইলেক্ট্রিক্যাল কোর্স চালু করা হলেও ২০১৯ সালে তা আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কলেজটিতে একজন অধ্যক্ষ, ট্রেড কোর্সগুলোর জন্য ৮জন চিফ ইনস্ট্রাক্টর, ৭জন ইনস্ট্রাক্টর, ১৪ জন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর, ৮ জন ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর, ৪ জন ল্যাব এ্যাসিস্ট্যান্ট ও সাধারণ বিষয়ের জন্য ১৬ জন শিক্ষকসহ ৬৮টি পদ রয়েছে। যার মধ্যে ৪৫টি পদই শূন্য। শূন্য পদের মধ্যে রয়েছে অধ্যক্ষ, ৬ জন ইনস্ট্রাক্টর, ৫ জন ইনস্ট্রাক্টর, ১১জন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর, ৬ জন ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর, ৩ জন ল্যাব এ্যাসিস্ট্যান্ট ও ৯জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া, উচ্চমান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, উচ্চমান সহকারী স্টোর কিপার ও ২ জন অফিস সহায়কের পদ শূন্য রয়েছে। এতসব শূন্যতার মধ্যে চলতি বছর থেকে নতুন করে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। নতুন চালুকরা তিনটি শ্রেণীর জন্য কোন শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেয়নি সরকার। যার ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। দুই শিফটের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্রম চলছে এক শিফটে।
কলেজ কমপ্লেক্সের মধ্যে ৭ শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের জন্য কোন ক্যান্টিন নেই। বিশাল আয়োতনের একটি খেলার মাঠ থাকলেও, বছরের চারমাস জলমগ্ন থাকে মাঠটি। এক সময় শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল থাকলেও, বর্তমানে কোন আবাসন ব্যবস্থা নেই। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন দূরের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
ইলেক্ট্রিক্যাল ট্রেডের ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, শ্রেণীক্ষে পানির মেশিন থাকলেও, নিয়মিত পানি পাই না। এছাড়া আমাদের কলেজের অভ্যন্তরে ক্যান্টিনও নেই। কলেজে চাকরি করা একজন ভাইয়া কিছু ফাস্টফুড বিক্রি করেন, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, কারিগরি শিক্ষার মূল হল ব্যবহারিক ক্লাস। শিক্ষক না থাকায় আমাদের সব ব্যবহারিক ক্লাস হয় না। এছাড়া ব্যবহারিক ক্লাস করার সময় কোন উপাদান যদি ভেঙে যায় বা খোয়া যায় সে ক্ষেত্রে আমাদের সবাই মিলে টাকা দিয়ে কিনে দিতে হয়।
জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর মো. আতাউর রহমান বলেন, পদ অনুযায়ী শিক্ষক না থাকায় আমাদের ওপর অনেক চাপ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদেরও কিছু অসুবিধা হয়। আবাসিক সুবিধা থাকলে আমাদের জন্য অনেক ভাল হত।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ বাদশা মিয়া বলেন, নির্মানাধিন পাঁচতলা বিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবন সম্পন্ন হলে শ্রেনি কক্ষ ও ল্যাব সংকটের সমাধান হবে। এছাড়া শিক্ষক সংকট ও মাঠের সমস্যা বিষয়টি উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দুষ্টু শিক্ষার্থীরা যাতে ইচ্ছে করে ব্যবহারিক ক্লাসে ব্যবহৃত টুলস ইচ্ছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৬/০৯/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়