দেওয়ান সামছুর রহমানঃ শিক্ষা যদি হয় জাতির মেরুদণ্ড, তবে শিক্ষককে বলা হবে শিক্ষার মেরুদণ্ড। শিক্ষক হলেন ন্যায়-নীতি আর আদর্শের প্রতীক। এরই বাস্তব প্রমাণ বাতেন স্যার। স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষায় অবদান রেখেও যে আঞ্চলিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা যায়, বাতেন স্যার তেমনই একজন ব্যক্তি। নানা প্রতিকূল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ের অনগ্রসর অঞ্চলে শিক্ষার হার কম হওয়ার কারণ ছিল সচেতনতা ও সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব। এরই মাঝে এ এলাকায় শিক্ষার বিস্তারে যে কয়েকজন ব্যক্তির অবদান অনস্বীকার্য, তাদের অন্যতম বাতেন স্যার। তার জন্ম ১৩৩৬ বঙ্গাব্দের ১৯ আশ্বিন, ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ৪ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের বৈদ্যেরবাজারের বারদী ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামে।
সেসময় শিক্ষা গ্রহণ সহজ ছিল না। তা সত্ত্বেও তিনি ভালো ফলাফল করে মেধার স্বাক্ষর রেখে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি বার্ষিক পরীক্ষায় ১ম স্থান অধিকার করতেন। ঢাকা বোর্ডের অধীনে ১৯৪৯ সালে অনুষ্ঠিত মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় গণিত ও ঐচ্ছিক বিষয় ফারসিতে লেটার মার্কসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সচিবালয়ে ইন্টারভিউর মাধ্যমে সরকারি চাকরি লাভ করেছিলেন। ১৯৫০ সালে পাকিস্তান নৌ-বাহিনীতে অফিসার পদে আবেদন করে মেট্রিকের ভালো ফলাফলের কারণে সরাসরি নিয়োগপত্র লাভ করেছিলেন। কিন্তু নিয়োগের কঠিন শর্ত ও পিতামাতার অনীহার কারণে কোনোটিতেই যোগদান করা হয়নি। অবশেষে ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি স্থানীয় শম্ভূপুরা মাইনর স্কুলে গণিতের শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন এবং শিক্ষকতাকে পেশা নির্বাচন করে জীবনের পথচলা শুরু করেন। প্রায় দুই বছর শিক্ষকতা করার পর ১৯৫১ সালের ২৩ নভেম্বর জুনিয়র শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন বারদী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে। এরপর ১৯৭২ সাল থেকে সিনিয়র শিক্ষক, ১৯৮২ সাল থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং ১৯৯২ সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে দীর্ঘ প্রায় ৪৩ বছর শিক্ষকতা করে ১৯৯৩ সালে অবসর নেন।
দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে নীতির প্রশ্নে তিনি অটল ছিলেন। ফলে তার সব ছাত্রছাত্রীর কাছে ছিলেন আদর্শ ও নীতির মূর্তপ্রতীক। বিদ্যালয়ের নিয়মশৃঙ্খলা থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মকাণ্ডে তার ওপর বিদ্যালয় প্রশাসনের ছিল গভীর আস্থা ও নির্ভরতা। ছাত্রছাত্রীদের ছিল অগাধ ভক্তি ও শ্রদ্ধা। শিক্ষকতা জীবনে তিনি এ অঞ্চলের গরিব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্নভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছেন।
শিক্ষকতা থেকে অবসর নেওয়ার পর ১৯৯৬ সালে গোয়ালপাড়া জুনিয়র হাইস্কুলে প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক (অবৈতনিক) হিসাবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ১৯৯৮ সালের পর থেকে আমৃত্যু তিনি গোয়ালপাড়া জুনিয়র হাই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন।
চিন্তায় ও মননে তিনি ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। তিনি ছিলেন রাজনৈতিক বা আঞ্চলিক দলাদলির ঊর্ধ্বে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। যে জ্ঞানের প্রদীপশিখা তিনি এ অঞ্চলে প্রজ্বলিত করে গেছেন, তার ঋণ শোধ করার মতো নয়।
দেওয়ান সামছুর রহমান : শিক্ষক, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৯/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়