মো. সুজাউদ দৌলা, সহকারী অধ্যাপক, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা।।
বহু নির্বাচনীর জন্য পাঠ্য বই বেশি বেশি রিডিং পড়তে হবে
আগামী ১৭ আগস্ট ২০২৩ তোমাদের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। পরীক্ষা নিয়ে কোনো ভয়ভীতি বা সংশয় থাকার কোনো কারণ নেই। কিছু নিয়ম-কানুন অনুসরণ করলে দেখবে, বাংলা পরীক্ষাই তোমার সবচেয়ে ভালো হয়েছে। তোমরা এর আগেও সৃজনশীল পদ্ধতিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষায় (জেএসসি ও এসএসসি) অংশ নিয়েছ।
তাই বলা যায়, এ বিষয়ে তোমরা অনেকটাই অবগত।
তার পরও আমি তোমাদের নতুন করে বাংলা প্রথম পত্রের সৃজনশীল পদ্ধতি সম্বন্ধে একটু বলতে চাই।
বাংলা প্রথম পত্রে ‘ক’ বিভাগে (গদ্য) ৪টি, ‘খ’ বিভাগে (কবিতা) ৩টি, ‘গ’ বিভাগে (সহপাঠ-উপন্যাস) ২টি এবং ‘ঘ’ বিভাগে (সহপাঠ-নাটক) ২টি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে। তোমাদের ‘ক’ বিভাগ থেকে কমপক্ষে ২টি, ‘খ’ বিভাগ থেকে কমপক্ষে ২টি, ‘গ’ বিভাগ থেকে কমপক্ষে ১টি এবং ‘ঘ’ বিভাগ থেকে কমপক্ষে ১টিসহ মোট ৭টি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে।
মান ৭০। সময় ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। অর্থাৎ প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্নের জন্য ২১ বা ২২ মিনিট সময় বরাদ্দ। বহু নির্বাচনী প্রশ্ন দেওয়া থাকবে ৩০টি, উত্তরও করতে হবে ৩০টি।
এখানে সময় ৩০ মিনিট। বাংলা প্রথম পত্রে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে।
প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্ন চারটি অংশে (জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা) বিভক্ত থাকে। তাই প্রত্যেক অংশের উত্তর লেখার সময় প্রতিবার নম্বরটি এভাবে লিখবে—যেমন : তুমি ৩ নম্বর প্রশ্নটির উত্তর করবে। সে ক্ষেত্রে ৩ নং প্রশ্নের উত্তর (ক), ৩ নং প্রশ্নের উত্তর (খ), ৩ নং প্রশ্নের উত্তর (গ), ৩ নং প্রশ্নের উত্তর (ঘ) এভাবে লিখলে ভালো।
আর এ লেখাগুলো ভিন্ন রঙের (সবুজ/নীল/মেরুন/বাদামি ইত্যাদি) কালি দিয়ে লিখলে দেখতে অনেক সুন্দর লাগবে।
যেকোনো একটি প্রশ্নের উত্তর লেখা শুরু করলে তার চারটি অংশের উত্তরই ধারাবাহিকভাবে করতে হবে। একটি প্রশ্নের জ্ঞানের উত্তর আরেক প্রশ্নের প্রয়োগের উত্তর এভাবে করা যাবে না। কোনো উত্তর যদি কেউ না পারে, সে ক্ষেত্রে সেটি বাদ দিয়ে তার পরের অংশের উত্তর করতে হবে। জায়গা ফাঁকা রাখার দরকার নেই।
জ্ঞানমূলক প্রশ্নের নম্বর ১। এর উত্তর একটি শব্দে, একাধিক বা একটি বাক্যেও দেওয়া যাবে। তবে এ স্তরের উত্তর একটি পূর্ণাঙ্গ বাক্যে দিলে ভালো। আর এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, জ্ঞানমূলক প্রশ্নে যে তথ্যটি জানতে চাওয়া হয়েছে, সেটির বানান ভুল করলে উত্তর কাটা যাবে এবং শূন্য পাবে। যেমন—‘সোনার তরী’ কবিতার রচয়িতা কে? এখানে ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’-এর নামের বানানটি ভুল করলে উত্তর কাটা যাবে।
অনুধাবনমূলক প্রশ্নের নম্বর ২। কারণ এর মধ্যে একটি নম্বর জ্ঞানের জন্য, আরেকটি নম্বর অনুধাবনের জন্য। তুমি ইচ্ছা করলে জ্ঞান অংশের উত্তর আগে, অনুধাবনমূলক উত্তর পরে অথবা অনুধাবনমূলকের উত্তর আগে, জ্ঞানমূলকের উত্তর পরে লিখতে পারো। তবে জ্ঞানমূলকের উত্তর আগে লিখে অনুধাবনের উত্তর পরে লেখাই ভালো। অনুধাবনের প্রশ্নের উত্তর এক প্যারায়ও লেখা যায়। তবে দুই প্যারায় লেখার চেষ্টা করবে। আর অনুধাবনমূলক প্রশ্নের শুরুতে অযথা কবি/সাহিত্যিককে নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করার দরকার নেই।
প্রয়োগমূলক প্রশ্নের মোট নম্বর ৩। ১ নম্বর জ্ঞানে, ১ নম্বর অনুধাবনে এবং ১ নম্বর প্রয়োগে। যদিও এক প্যারায় সবগুলো তথ্য দিয়ে উত্তর লিখলেও হবে। তবে দু-তিন প্যারা করাই ভালো। প্রয়োগ মানে আমরা জানি শিক্ষার্থী তার পাঠ্য বই থেকে যা জেনেছে এবং যা বুঝেছে, তা নতুন ক্ষেত্রে অর্থাৎ উদ্দীপকে প্রয়োগ করবে। কাজেই উদ্দীপকটি যে ভাব/Theme-এর আলোকে তৈরি করা হয়েছে এবং উদ্দীপকের সাথে সংশ্লিষ্ট গল্প/কবিতার যে দিকটির সাদৃশ্য/বৈসাদৃশ্য থাকে, সেটিই জ্ঞান। তারপর ওই দিকটি/প্রসঙ্গটি পাঠ্য বইয়ের আলোকে বর্ণনা করাই হলো অনুধাবন। দ্বিতীয় প্যারায় অনুধাবন অংশের উত্তর লিখতে পারা এবং সব শেষে ওই দিকটি উদ্দীপকে কিভাবে ফুটে উঠেছে, তা বর্ণনা করাই প্রয়োগ।
উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের মোট নম্বর ৪। ১ নম্বর জ্ঞানে, ১ নম্বর অনুধাবনে, ১ নম্বর প্রয়োগে এবং ১ নম্বর উচ্চতর দক্ষতায়। উচ্চতর দক্ষতা মানেই একটি সিদ্ধান্তের ব্যাপার। প্রশ্নেই সাধারণত একটি অনুসিদ্ধান্ত দেওয়া থাকবে। যদি সিদ্ধান্তটি সঠিক হয়, তাহলে সেটিকেই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে, উদ্দীপকে প্রয়োগ করে প্রমাণ করবে যে সিদ্ধান্তটি সঠিক। আর যদি সিদ্ধান্তটি ভুল হয়, তাহলে কেন ভুল, সেটিও প্রমাণ করতে হবে। অনেক সময় সিদ্ধান্তটি আংশিক সত্য হতে পারে। সে ক্ষেত্রে উদ্দীপকের সাথে পাঠ্য বইয়ের যে অংশটুকুর মিল আছে, তা বর্ণনা করে যে যে ক্ষেত্রে মিল নেই, সেগুলোও বর্ণনা করতে হবে এবং সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দিতে হবে যে বক্তব্যটি/সিদ্ধান্তটি আংশিক সত্য, পুরোপুরি নয়। বিচার-বিশ্লেষণ-সংশ্লেষণ, মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত দেওয়ার নামই উচ্চতর দক্ষতা।
সৃজনশীল পদ্ধতির বহু নির্বাচনী প্রশ্নগুলোও একটু ভিন্ন ধরনের। এর জন্য তোমাদের পাঠ্য বই বেশি বেশি রিডিং পড়তে হবে। কবিতাগুলো মুখস্থ রাখতে পারলে ভালো। বিগত সালের প্রশ্ন থেকে দেখা গেছে, কবিতা থেকে এমন কিছু প্রশ্ন এসেছে, যেগুলোর উত্তর কবিতা মুখস্থ থাকলে দেওয়া সম্ভব হতো।
এবার বাংলা দ্বিতীয় পত্র সম্বন্ধে একটু বলি। এখানেও ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। বাংলা দ্বিতীয় পত্রে সবার আগে ৩০ মার্কসের গ্রামারের কথা আসে। এখানে মোট ৬টি প্রশ্ন। প্রতিটি প্রশ্নের মান ৫। সব প্রশ্নে একটি বর্ণনামূলক এবং এর অথবায় একটি করে নির্ণয়মূলক প্রশ্ন থাকে। আমার মনে হয়, নির্ণয়মূলক প্রশ্নের উত্তর করা ভালো। এতে পূর্ণ মার্কস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং কিছু সময়েরও সাশ্রয় হয়। এই সাশ্রয়ী সময় তুমি প্রবন্ধ রচনায় বা ভাব-সম্প্রসারণে ব্যবহার করতে পারো। তবে এখানে যে বর্ণনামূলক প্রশ্ন আছে (যেমন—উদাহরণসহ ‘এ’ স্বরধ্বনির উচ্চারণের ৫টি নিয়ম লেখো); সেগুলোতেও পুরো মার্কস পাওয়া যাবে। তবে অবশ্যই তোমাকে সঠিক উত্তর লিখতে হবে।
পারিভাষিক শব্দ আর বঙ্গানুবাদ এদের মধ্যে পারিভাষিক শব্দ লেখা অবশ্যই ভালো। বঙ্গানুবাদ লিখলে ১০-এ ১০ পাওয়া অত্যন্ত কঠিন, কিন্তু পারিভাষিক শব্দ লিখতে তুমি ১০-এ ১০ই পাবে, অবশ্য যদি কোনো ভুল না হয়। তবে একটু সচেতন থাকলে এ ক্ষেত্রে পূর্ণ মার্কস পাওয়া সহজ। পারিভাষিক শব্দে ১০টির উত্তর লিখতে বললেও প্রশ্নে থাকবে ১৫টি, এটি একটি বড় সুবিধা বলা যায়।
প্রতিবেদন অথবা দিনলিপি, যেটি তোমার ইচ্ছা লিখতে পারো। এখানে নম্বর ১০। প্রতিবেদন লিখলে বেশি নম্বর আসে বা দিনলিপি লিখলে কম নম্বর আসে—এমন কথার ভিত্তি নেই। তবে যেটি দেখেছি, প্রতিবেদনের বিভিন্ন নিয়ম প্রচলিত থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা বিভ্রান্তিতে পড়ে কিভাবে লিখবে সেটি নিয়ে। এ ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ, সংবাদ ও দাপ্তরিক প্রতিবেদনের দুটি ফরম্যাট খুব ভালো করে শিখে রাখবে এবং সেভাবে উত্তর করবে। আর দিনলিপিও লিখতে পারো। এগুলো মুখস্থের কোনো বিষয় নয়। চর্চার মাধ্যমে এগুলোর মান সুন্দর হয়।
চিঠিপত্র লেখার ক্ষেত্রে আমার যেটি মনে হয়, মানপত্র বা সংবাদপত্রে প্রকাশের উপযোগী পত্র লিখে বেশি সময় নষ্ট না করে দরখাস্ত বা নিমন্ত্রণপত্র বা ব্যক্তিগত পত্র (এখানে অবশ্য বেশি কথা আসতে পারে, তবে সেটি সংক্ষেপেও বলা যায়) লেখা ভালো। এটি কম সময়ে লিখে কিছু সময় বাঁচানো যেতে পারে, যে সময়টুকু তুমি অন্য কোনো প্রশ্নের উত্তরে ব্যবহার করতে পারো। তবে যেটিই লেখো না কেন, সঠিক উত্তর দিলে নম্বরের কোনো হেরফের হবে না। অবশ্য এখানে তুমি চিঠি লিখতেও পারো। এটি খুব ছোট আইটেম। তাই যেন ভেবো না মাত্র এতটুকু লিখলে ১০-এর মধ্যে আর কত নম্বরই বা পাওয়া যাবে!
ভাব-সম্প্রসারণ লেখার সময় বিশেষভাবে খেয়াল রাখবে, এখানে কোনো উদ্ধৃতি বা কবিতার লাইন ব্যবহার করবে না। তিনটি প্যারায় লেখা শেষ করবে। প্যারায় কোনো শিরোনাম ব্যবহার করবে না। ভাবের সম্প্রসারণ তো, তাই একটু বিস্তারিত অর্থাৎ সাইজে বড় হলে ভালো হয়। মনে প্রশ্ন আসতে পারে, কেমন বড়? এক পৃষ্ঠায় যদি ১৩-১৪ লাইন লেখো, তাহলে কমপক্ষে চার পৃষ্ঠা (দুই পাতা) লেখা ভালো। এখানে সারাংশ/সারমর্ম আছে। ভাব-সম্প্রসারণ না লিখে সারাংশ অথবা সারমর্মও লিখতে পারো। এটি লিখতে কম সময় লাগবে, তাতে তোমার সময় বাঁচবে।
সবর্েশষে থাকবে সংলাপ আর খুদে গল্প। লিখতে হবে যেকোনো ১টি। নম্বর ১০। খুদে গল্প লেখার সময় বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ অনেক সময় গল্প না হয়ে অনুচ্ছেদ হয়ে যায়। এমন হলে তা সম্পূর্ণ ভুল এবং নম্বর শূন্য। গল্পের নিয়ম-কানুন; যেমন—গল্পের কাহিনি, ঘটনা, চরিত্রচিত্রণ ইত্যাদি যদি ঠিকমতো থাকে, তাহলে খুব উন্নতমানের গল্প না লিখতে পারলেও তুমি ভালো নম্বর পাবে। তবে সংলাপের উত্তরও করতে পারো। যেহেতু ১০ নম্বরের প্রশ্নোত্তর, তাই খেয়াল রাখবে খুব ছোট যেন না হয়ে যায়।
এবার প্রবন্ধ রচনার কথা বলি। এটি একটি বড় আইটেম। এটি সবার শেষে লেখা ভালো। এর জন্য তোমাকে কমপক্ষে ৫০/৫৫ মিনিট বা এক ঘণ্টা সময় হাতে রাখতে হবে। যেহেতু এখানে নম্বর ২০, তাই তুমি এক পৃষ্ঠায় যদি ১৩-১৪ লাইন করে লেখো, তাহলে ২০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত লিখতে পারো। রচনা লেখার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই তোমার। এ ক্ষেত্রে তুমি বন্ধনহীন। বলা যায়, ‘আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে তোমারে করেছি রচনা।’ কবিতার লাইন, বাংলা বা ইংরেজি উদ্ধৃতি বা অন্য কিছু, যা তোমার ইচ্ছা অর্থাৎ যত সুন্দর করা যায় ভালো। তবে সময়ের দিকে অবশ্যই তোমাকে খেয়াল রাখতে হবে।
সব শেষে হাতের লেখা সম্বন্ধে একটু বলি।
বাংলা বিষয়ে বেশি নম্বর পেতে সুন্দর হাতের লেখা যত বেশি সহায়ক হবে, অন্য আর কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে তা হবে না। তাই সুন্দর হাতের লেখার প্রতি মনোযোগী হবে। অবশ্য ভয়ের কিছু নেই। লেখা খুব সুন্দর না হলেও বর্ণ/অক্ষরগুলো স্পষ্ট করে লিখলেই চলবে।