বগুড়াঃ বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে প্রতারণার শিকার সেই ২৫ শিক্ষার্থী আগামী বছর বিশেষ বিবেচনায় এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন।
বিষয়টি নিশ্চত করেছেন রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সচিব হুমায়ুন কবির।
সচিব বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসব শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য বিশেষ বিবেচনায় ভর্তিসহ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে বলেছে। চলতি বছরের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
এমন খবরে প্রতারণার শিকার রাশাদুল ইসলাম বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য ভালো খবর এবং ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। সংশ্লিষ্টদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। না হয় আমাদের শিক্ষা জীবন শেষ হয়ে যেতো।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে এসএসসি পাসের পর ২৫ জন ছাত্রছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হতে নিয়ম অনুসারে অনলাইনে আবেদন করেন। আবেদনে বগুড়ার একাধিক কলেজের নাম দিলেও একটিতেও আসেনি। পরে তারা জানতে পারেন, সরকারি শাহ সুলতান কলেজে অফলাইনে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি করা হচ্ছে। তারা কলেজের মাস্টাররোলে কর্মরত অফিস সহকারী হারুনুর রশিদ ও আবদুল হান্নানসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন ভর্তির কথা বলে তাদের কাছ থেকে ১৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন হারুনুর রশিদ ও আবদুল হান্নান এবং তাদের সহযোগীরা। সেইসঙ্গে পরীক্ষা ও ফরম পূরণসহ বিভিন্ন সময়ে কলেজে ও বোর্ডে জমা দেওয়ার কথা বলে আরও টাকা নেন। পরে শিক্ষার্থীরা পোশাক বানিয়ে নিয়মিত ক্লাস করার পাশাপাশি টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও ফরম পূরণ করেন। গত ১৭ আগস্ট পরীক্ষার আগে প্রবেশপত্র আনতে গিয়ে জানতে পারেন, তারা এই কলেজের শিক্ষার্থী নন। ভর্তির রশিদসহ যেসব কাগজ তাদের দেওয়া হয়েছিল, তার সবই জাল।
এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুল আলম তখন বলেছিলেন, ‘তারা আমাদের কলেজের শিক্ষার্থী নন। ঘটনাটি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ঘটনা তদন্ত করতে কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল জলিলের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেন অধ্যক্ষ। একই সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। গত ১৯ আগস্ট কলেজে এসে তদন্ত করে শিক্ষাবোর্ডের এই তদন্ত কমিটি। এদিন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সচিব হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে আসা সদস্যরা শিক্ষার্থীদের লিখিত জবানবন্দি নেন।
ওই দিন বিকালে সরকারি শাহ সুলতান কলেজ চত্বর থেকে প্রতিষ্ঠানের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বগুড়ার সাবগ্রাম এলাকার বাসিন্দা জালাল উদ্দিন মন্ডলের ছেলে আমিনুল ইসলাম, হরিগাড়ি ইসলামপুরের ইয়াকুব আলীর ছেলে আবদুল হান্নান এবং শাজাহানপুরের লতিফপুর কলোনির আবুল হোসেনের ছেলে হারুনুর রশিদকে গ্রেফতার করে র্যাব ও পুলিশ। এ ঘটনায় শাজাহানপুরের শ্মশানকান্দির বাসিন্দা প্রতারণার শিকার রাশাদুল ইসলাম ১৯ আগস্ট রাতে সদর থানায় চার জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও পাঁচ জনকে আসামি করে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। গ্রেফতার তিন জনকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পলাতক আসামি কাওছার আলী নিজেকে অফিস স্টাফ পরিচয় দিয়ে ভর্তি বাণিজ্য করেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে, শিক্ষাবোর্ডের চার সদস্যের কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন ২১ আগস্ট জমা দিলেও কলেজ অধ্যক্ষের কমিটি আজ পর্যন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। এ বিষয়ে কমিটির এক সদস্য বলেছেন, ‘আসামিরা কারাগারে থাকায় জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। এজন্য তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া যায়নি।’
শাজাহানপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভর্তি জালিয়াতির মামলায় কাওছার আলীসহ অপর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৯/০৯/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়