শিক্ষাবার্তা ডেস্কঃ ‘বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল আমাকে পড়ালেখা করিয়ে সরকারি বড় কর্মকর্তা বানাবেন। আমি বিসিএস ক্যাডার হবো। আমি বাবার অনুপ্রেরণায় পড়ালেখা করেছি। আজ আমার এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। জিপিএ-৫ পেয়েছি। কিন্তু আজ আমার বাবা নেই। বাবা থাকলে এ রেজাল্ট শুনে অনেক খুশি হতেন। জিপিএ-৫ পেয়েও আজ আমাদের ঘরে আনন্দ নেই।’
চোখে জল নিয়ে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে এভাবেই আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন নুসরাত জাহান শ্রাবণ। তার বাবা জামান কাজল নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় ‘সুলতান ভাই কাচ্চি রেস্তোরাঁ’র ম্যানেজার ছিলেন। তাকে রেস্তোরাঁর মধ্যে গুলি করা হয়। পরে ৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
নিহত জামান কাজল নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়নের শাহ আলমের ছেলে। তিনি বন্দরের নবীগঞ্জ কুশিয়ারা এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।
কাজলের পরিবারে স্ত্রীসহ দুই মেয়ে রয়েছে। এক মেয়ে ইকরা (১০) পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। আর নুসরাত জাহান শ্রাবণ (১৮) এবার এইচএসসিতে ‘এ প্লাস’ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। তিনি নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
নুসরাতের ইচ্ছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন। এজন্য ভর্তি কোচিং করছেন। পড়ালেখা শেষে বাবার স্বপ্ন পূরণে বিসিএস ক্যাডার হবেন। কিন্তু তার বাবা আর নেই। ঘাতকরা গুলি করে হত্যা করেছেন। এখন স্বপ্ন পূরণ নিয়ে শঙ্কায় নুসরাত।
নুসরাত জাহান বলেন, ‘আর পড়ালেখা করতে পারবো কি না তা নিয়ে সন্দিহান। বাবা নেই আমার পড়ালেখার খরচ কে দেবে? কোথা থেকে আমি পড়ালেখার খরচ জোগাড় করবো? যদি বাবা জীবিত থাকতেন তাহলে আমার পড়ালেখার খরচ নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হতো না।’
জামান কাজলের স্ত্রী আসমা জামান বলেন, ‘মেয়েদের পড়ালেখা করাতে পারবো কি না সেই নিশ্চয়তা নেই। আমাদের সংসারে স্বামী ছাড়া উপার্জন করার মতো আর কেউ নেই। তারা শুধু আমার স্বামীকে মেরে ফেলেনি, সঙ্গে আমাদেরও মেরে ফেলেছে। আমাদের অসহায় করে দিয়েছে।’
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বন্দরের কুশিয়ারা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নিহত কাজলের বাড়িতে সুনসান নীরবতা। বাড়ির বড় মেয়ে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছেন তা বোঝার কোনো উপায় নেই। মেয়েরা নির্বাক হয়ে বসে রয়েছেন। স্বজনরা এসে তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
আসমা জামান বলেন, ‘আমার স্বামী ভালো মানুষ ছিলেন। সংসারের প্রতি তার মনোযোগ ছিল। বাসায় না থাকলে ফোন করে খোঁজ নিতেন। মেয়েদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন। মেয়েদের নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন ছিল। পড়াশোনা করিয়ে তাদের উচ্চশিক্ষিত বানাবেন। আজ তিনিই আমাদের মাঝে নেই। আমার বড় মেয়ে এ প্লাস পেয়েছে কিন্তু আমার ঘরে কোনো আনন্দ নেই। আজ যদি আমার স্বামী বেঁচে থাকতেন তাহলে এলাকাজুড়ে মিষ্টি বিতরণ করতেন। আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার চাই।’
রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে চাষাঢ়ায় আংগুরা প্লাজায় ‘সুলতান ভাই কাচ্চি রেস্তোরাঁয় প্রকাশ্যে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হন এক নারীসহ পাঁচজন। তাদের মধ্যে মারা যান কাজল। এ ঘটনায় আংগুরা প্লাজার মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাহার তালুকদার ও আরিফ তালুকদার মোহনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা দুজনে বাবা-ছেলে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতার দুজনকে দুদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৯/০২/২৩