উলিপুরে ৯৩ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক

কুড়িগ্রামঃ জেলার উলিপুরে নদ-নদী বেষ্টিত ৫৬টি চরের ২৫টিসহ ৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। সেই সঙ্গে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৮৯টি। এতে বিঘ্ন ঘটছে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রমে। ব্যাহত হচ্ছে প্রশাসনিক কাজকর্মও।

প্রায় এক যুগ ধরে এ অবস্থা চলছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলসহ মোট বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৬৭টি। প্রধান শিক্ষকের ২৬৭ পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ১৭৪ জন। যার মধ্যে ৯৩টি প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য।

এর মধে চলতি দায়িত্বে রয়েছেন ৩৬ জন। চলতি দায়িত্বে থাকা ১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। এ ছাড়া সহকারী শিক্ষকের এক হাজার ৪৫৬টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন এক হাজার ৩৬৭ জন, সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদ রয়েছে ৮৯টি। দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি ও সরাসরি নিয়োগ বন্ধ থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

চরাঞ্চলের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনোটিতে তিনজনের বেশি শিক্ষক নেই।
সুখের বাতিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শিমুল মিয়ার বক্তব্য, ‘স্যার না আসায় আমাদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা।’ ওই স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নুরবানু বেগম বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদী পাড়ি দিয়ে স্যারেরা চরের স্কুলে আসতে চান না। মাঝেমধ্যে এলেও আমাদের সন্তানদের লেখাপড়ার প্রতি তাঁদের মনোযোগ থাকে না।

দুপুরের পরে নৌকাযোগে বাড়ি ফিরে যান।’

বালাডোবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোছা. জুলেখা জান্নাত বলেন, ‘বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকায় ৯ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। এই বিদ্যালয়ে ছয় শিক্ষকের পদ থাকলেও বর্তমানে আমিসহ দুইজন কর্মরত আছি। প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে আমার পক্ষে প্রায়ই শ্রেণি পাঠদান সম্ভব হয় না। অফিসকে বিষয়টি জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি।’

সুখের বাতিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাজেদুর রহমান জানান, তাঁর বিদ্যালয়ে পাঁচ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক নেই। তিনিসহ দুইজন শিক্ষকের ৮০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদানে হিমশিম অবস্থা।

সাহেবের আলগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোছা. ইশরাত জাহান বলেন, ‘বিদ্যালয়ে ১২ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। সাত পদের বিপরীতে কর্মরত চারজন শিক্ষক দিয়ে সঠিকভাবে পাঠদান সম্ভব হয় না।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি, সরাসরি নিয়োগ বন্ধ এবং মামলা থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চলতি দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষক এবং জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি হলে সংকট অনেকটা কেটে যাবে।’

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৫/১১/২০২৩

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়