উপাচার্য-কোষাধ্যক্ষ ছাড়াই চলছে পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকাঃ দেশের পাঁচটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদ ফাঁকা রেখে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এসব পদ ফাঁকা রেখে শিক্ষা ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা অবৈধ। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ নিতে এসব পদ ফাঁকা রাখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, দেশে মোট ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে পাঁচটিতে একই সঙ্গে উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদ ফাঁকা। এ ছাড়া অন্তত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই দুটি পদের একটি খালি।

ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ওমর ফারুক বলেন, একাডেমিক কার্যক্রমের মানোন্নয়নে এবং আর্থিক কর্মকাণ্ড স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালনার স্বার্থে পদ দুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এ কারণে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পদ দুটিতে নিয়োগের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার অন্তত চার মাস আগে বিশ্ববিদ্যালগুলো থেকে প্যানেল পাঠানোর বাধ্যবাধকতা দিয়েছে ইউজিসি। অথচ কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন, আবার কোনোটিতে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এসব পদ ফাঁকা।

শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক দিকগুলো দেখাশোনা করেন উপাচার্য।

অন্যদিকে আর্থিক কর্মকাণ্ড সম্পাদন করেন কোষাধ্যক্ষ। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক এই দুই পদে নিয়োগকৃত কর্মকর্তা না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজের ইচ্ছানুযায়ী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে অবকাঠামো উন্নয়নে আর্থিক অনিয়মের আশঙ্কা বেড়ে যায়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নর্থ প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, যা এনপিআই বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ নিয়োগে প্যানেল (নিয়োগ সুপারিশের তালিকা) ইউজিসিতে পাঠানো হয়নি।

রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে শুরুতে একজন উপাচার্য থাকলেও ২০২১ সালের ২৬ নভেম্বর তাঁর মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর উপাচার্য নিয়োগেও কোনো প্যানেল পাঠানো হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদ দুটি ফাঁকা রেখেই চলছে একাডেমিক ও আর্থিক কার্যক্রম।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শামসুর রহমান খান বলেন, ‘উপাচার্যের জন্য অনেক আগেই মন্ত্রণালয়ে প্যানেল জমা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের আপত্তি থাকায় তা আর এগোয়নি। কোষাধ্যক্ষের পদের জন্যও আগে একবার প্যানেল জমা দেওয়া হয়। তাদের (মন্ত্রণালয়) দৃষ্টিতে এই তালিকায় একজনের যোগ্যতায় সমস্যা থাকার কারণে তা বাতিল হয়েছে। ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্তের বিষয়ে অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা আছে। এ বিষয়ে ইউজিসি তদন্ত করছে। বিষয়টির সমাধান হলে আমরা নতুন করে প্রস্তাব পাঠাব।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এনপিআইসহ মোট পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষবিহীন অবস্থায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অন্য চার বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, দ্য পিপল’স ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ও ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া। ইউজিসি সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ওই দুটি পদ শূন্য থাকলেও তা পূরণে প্যানেল পাঠায়নি বা কোনো উদ্যোগ নেয়নি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউজিসির এক কর্মকর্তাকে বলেন, উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদের কোনোটি খালি আছে, এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ২০টি। এর মধ্যে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় প্যানেল প্রস্তাব পাঠিয়েছে, আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় প্রক্রিয়াধীন। তবে প্যানেল পাঠালেও অনেক সময় অযোগ্য ব্যক্তিদের নাম তালিকায় পাঠানোর কারণে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয় না।

ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, ‘উপাচার্য নিয়োগে অনেক ক্ষেত্রে অযোগ্য প্রার্থীদের নাম দিয়ে প্যানেল প্রস্তাব করা হয়। এটি ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত হতে পারে। এই নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল করে নতুন করে প্যানেল ও নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনেক সময় লাগে। ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ নিয়োগ বন্ধ রাখতে চাইলে তারাও হয়তো অযোগ্য প্রার্থীদের নাম দিয়ে থাকে। আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় দেখেছি, প্রতিষ্ঠার সময় থেকে কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়নি। এসব প্রতিষ্ঠানের সব আর্থিক কার্যক্রম আমরা অবৈধ ঘোষণা করেছি।’ ভবিষ্যতে যারা এসব পদে নিয়োগে কালক্ষেপণ করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৮/১০/২০২৩   

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়