উপবৃত্তির নামে প্রতারণার ফাঁদ

রাজশাহীঃ নগদ ও বিকাশের গোপন পিন নম্বর বের করে নিতে ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে একটি চক্র। এ জন্য উপবৃত্তি পেতে মোবাইলে এসএমএস করা হচ্ছে। সেখানে যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বরও দেওয়া হচ্ছে।

এসএমএসগুলো পাঠানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি গ্রহণের অ্যাকাউন্ট খোলা আছে এমন নম্বরে। তবে উপজেলা শিক্ষা অফিস বলছে, প্রতারণার উদ্দেশ্যেই এমন মেসেজ পাঠানো হচ্ছে।

গত সোমবার দুপুরে এমন মেসেজ পেয়েছে শিমুল ইসলাম নামে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। সে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার রাওথা এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে। গত সপ্তাহে একই এসএমএস এসেছে পিরোজপুর গ্রামের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবরিনা আক্তার, নিমপাড়ার সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাসেল সরকারসহ অসংখ্য শিক্ষার্থীর অভিভাবকের ফোনে। মেসেজে উল্লেখ করা হয়, উপবৃত্তির ৪২০০ টাকার জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭৬৮৪৭৫৪২২ নম্বরে। প্রচারে– শিক্ষা বোর্ড।

শিক্ষার্থী শিমুলের বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, উপবৃত্তির এসএমএস দেখে ওই নাম্বারে ফোন করলে জানানো হয়, প্রতি মাসে ছেলে ৪২০০ টাকা করে উপবৃত্তি পাবে। বিনিময়ে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ২ হাজার টাকা পাঠাতে হবে। এ সময় তারা ফোনে পাঠানো মেসেজের কোড নম্বরটি দিতে বলে। নম্বরটি দিলেও ২ হাজার টাকা কাছে না থাকায় তখন পাঠাইনি। পরে স্থানীয় এক শিক্ষককে জানালে তিনি বিষয়টি ভুয়া বলে জানান। প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ার পর ওই নম্বরে কল করে জানালে তাৎক্ষণিক ফোন বন্ধ করে দেয়। এরই মধ্যে আমার নগদ অ্যাকাউন্টে থেকে ১১০০ টাকা উধাও হয়ে গেছে। পরে জানতে পারি এভাবে বহু শিক্ষার্থীর টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস জানায়, চারঘাট উপজেলায় প্রাথমিক পর্যায়ে ২০ হাজার ৫০৫ জন শিক্ষার্থী এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ৮ হাজার ১৯৬ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পাচ্ছে। উপবৃত্তির টাকা সরাসরি তাদের দেওয়া বিভিন্ন মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সেবা (বিকাশ, নগদ, রকেট) অ্যাকাউন্টে জমা হয়। টাকা পেতে কোনো নম্বরে যোগাযোগ কিংবা ফোনে তথ্য দেবার কোনো প্রয়োজন নেই।

এদিকে পৌর এলাকার বাসিন্দা স্বপ্না খাতুন জানান, তাঁর দুই মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। এমন মেসেজ তাঁর মোবাইলেও এসেছে। সেই নাম্বারে ফোন দিয়ে কথাবার্তা শুনে সন্দেহজনক মনে হলে তিনি আর যোগাযোগ করেননি।

এদিকে উপবৃত্তির জন্য অভিভাবকদের দেওয়া ০১৭৬৮৪৭৫৪২২ নাম্বারে ফোন করে তার পরিচয় এবং এ বিষয়ে জানতে চাইলে অপর পাশের ব্যক্তি বাজে ব্যবহার করে ফোন কেটে বন্ধ করে দেয়। পরে একাধিকবার ফোন করেও খোলা পাওয়া যায়নি।

উপজেলা সদরের মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট নির্মল কুমার বলেন, শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা এসএমএস পেয়ে প্রতারকদের তথ্য দেবার পর তাদের কথামতো টাকা ওঠানোর জন্য আমাদের কাছে আসছেন। তবে এসব মোবাইল অ্যাকাউন্টে টাকা মিলছে না। বরং অ্যাকাউন্টের আগের টাকাগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে।

চারঘাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামিমা সুলতানা বলেন, এমন মেসেজের কথা অনেক অভিভাবক জানিয়েছেন। অভিভাবক সমাবেশগুলোতে তাদের সতর্ক করছি। ফোনে কাউকে কোনো তথ্য দিতে নিষেধ করছি।

এ বিষয়ে চারঘাট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠানো এসব ভুয়া এসএমএস। শিক্ষার্থীদের টাকা অ্যাকাউন্টে এমনিতেই চলে আসবে। কোনো ধরনের মেসেজ পাঠিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হবে না। প্রতারকদের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা।

মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রতারণার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে থানায় জিডি করতে হবে, যাতে ওই প্রতারককে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা যায়। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো মেসেজ পেলে তা যাচাই-বাছাই করে টাকা লেনদেন করতে হবে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৯/১১/২০২৩ 

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়