উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা চোখে না দেখলেও দুর্নীতিতে থেমে নেই!
তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা
সুনামগঞ্জঃ জেলার তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আবুল খায়ের চোখে দেখেন না। দাপ্তরিক থেকে ব্যক্তিগত সব কাজই করেন অন্যের সাহায্য নিয়ে। সম্প্রতি ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।
চলতি বছরের ১৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রধান শিক্ষকদের মাসিক সমন্বয় সভায় শিক্ষকরা ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ধরে প্রতিবাদ জানান।
শিক্ষকরা জানান, নিজের সীমাবদ্ধতাকে পুঁজি করে অনুসারী শিক্ষকদের নিয়ে নানা দুর্নীতি আর অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন আবুল খায়ের। দৃষ্টিশক্তি না থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ বিশ্বাস করতে পারেন না অনেকেই।
দুর্নীতি ও দুর্ব্যবহারের কারণে কার্যালয়ে কর্মরত দু’জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তলানিতে। এ ছাড়া সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতির বাইরে গিয়ে তিনি সব কাজ করেন নির্দিষ্ট কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে। এর মধ্যে বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শনের কাজে তাঁর সঙ্গে থাকেন শান্তিগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুসেন আহমদ তৈফুল। সব পরিদর্শন প্রতিবেদনও তৈরি করেন প্রধান শিক্ষক তৈফুল।
শিক্ষকরা জানান, দৃষ্টিশক্তি না থাকায় বিদ্যালয় পরিদর্শন কাজে তাঁর সঙ্গে থাকেন প্রধান শিক্ষক তৈফুল। পরিদর্শন প্রতিবেদনও তৈরি করেন তিনি। একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হয়ে তাঁর অন্য বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন এবং প্রতিবেদন তৈরির বিষয়টি কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। শুধু তাই নয়, বিদ্যালয় পরিদর্শন খাতার লেখাও ওই প্রধান শিক্ষকের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩৪টি বিদ্যালয়ের বাস্তবায়িত বিদ্যালয়ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা থেকে ২ হাজার, ৮৮টি বিদ্যালয়ে বাস্তবায়িত রুটিন মেইনটেন্যান্স পরিকল্পনা থেকে ২ হাজার, ৯টি বিদ্যালয়ে বাস্তবায়িত ক্ষুদ্র মেরামত থেকে ৪ হাজার করে টাকা নিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা। নিজে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে এবং অনেক জায়গায় তাঁর অনুগত শিক্ষকদের মাধ্যমে এ টাকা আদায় করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তর বড়দল ইউনিয়নের একজন নারী প্রধান শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়ের নামে আসা বরাদ্দের টাকা সঠিকভাবে ব্যয় করা হয়েছে। অথচ চাপের মুখে শিক্ষা কর্মকর্তার অফিসে ২ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
উজান তাহিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মইনুল হক জানান, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আবুল খায়ের উৎকোচের টাকার জন্য তাঁর বিদ্যালয়ের বরাদ্দ আটকে রাখেন। পরে ২ হাজার টাকার বিনিময়ে বিলে স্বাক্ষর করেন।
ফয়েজ আহমদ শাহিদাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ৯ নভেম্বর বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। ওই সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন শিক্ষক হুসেন আহমদ তৈফুল। বিদ্যালয়ের পরিদর্শন খাতায় এক পৃষ্ঠার বেশি একটি মন্তব্য লিখেছিলেন তৈফুল।
এ ব্যাপারে শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুসেন আহমদ তৈফুল জানান, পরিদর্শনের সময় সবার সঙ্গে আলোচনা করেই খাতায় লেখা হয়। তবে সবসময় তিনি এসব লেখেন না। অন্যরা লিখে থাকেন।
তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সোহালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম সরোয়ার লিটন জানান, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা চোখে না দেখতে পারায় প্রাথমিক শিক্ষায় সমস্যা হচ্ছে। এ ব্যাপারে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তা ছাড়া একজন শিক্ষকের নিজের কাজ ফেলে অন্য স্কুল পরিদর্শনে যাওয়ার বিষয়টি অবশ্যই আপত্তিকর।
এদিকে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজের স্লিপ ও বিল আটকে রেখে এবং মেরামতের টাকা ছাড় দিতে ঘুষ দাবির অভিযোগের ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আবুল খায়ের বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি।’ তবে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর ব্যাপারে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি ওই কর্মকর্তা। সমকাল
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৬/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়