উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাস শুরু আজ

উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ক্লাস আজ শুরু হচ্ছে। তবে শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনই রয়েছে দুঃসংবাদ। গত বছরের তুলনায় শিক্ষার্থীদের এবার বেশি দামে পাঠ্যবই কিনতে হবে। কোনো কারণ না থাকা সত্ত্বেও জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এ স্তরের বইয়ের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে অভিভাবকদের পকেট থেকে দুই কোটি টাকার বেশি চলে যাবে। এ টাকার ভাগ পাবে কে বা কারা সেই বিষয়টি নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন।

এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। গত বছর ভর্তি না হওয়া প্রায় পৌনে দুই লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। সে অনুযায়ী এবার কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ১৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর ভর্তি কার্যক্রমে অংশ নেয়ার কথা। কিন্তু ভর্তির জন্য ১৩ লাখ ১৩ হাজার ৩২৫ জন রেজিস্ট্রেশন করেছে। অন্যদিকে, কারিগরি বোর্ডের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য প্রায় পৌনে দুই লাখ শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। সেই হিসাবে শুধু এ বছরেই পাস করা প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত কোথাও আবেদন করেনি। এসব শিক্ষার্থীর ড্রপআউট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত বছর ভর্তি না হওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মেলালে এ সংখ্যা প্রায় সোয়া চার লাখ।

কোনো কারণ ছাড়াই পাঠ্যবইয়ের দাম বাড়ানোয় খোদ এনসিটিবির ভেতরে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেসব ‘প্যারামিটার’ বিবেচনায় নিলে বইয়ের দাম বাড়ানো যায় সেসব ধরেই দাম বাড়ানো হয়েছে। এ ব্যাপারে কমিটি আছে, তারা কাজ করেছে। প্যারামিটারগুলো কী- জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তবে জানা গেছে, বইয়ের কোনো প্যারামিটার বা উপাদানেরই দাম এবার বাড়েনি। গত বছরের চেয়ে এবার এনসিটিবি কম দামে কাগজ কিনেছে। বাজারে কাগজ তৈরির পাল্পের (মণ্ড) দাম কমেছে। প্লেট, কালি, গ্লুসহ বই ছাপানো ও বাঁধাইয়ের অন্য উপাদানের দামও গত বছরের তুলনায় কম। অপরদিকে বইয়ের পৃষ্ঠা সংখ্যাও বাড়েনি। এমনকি সরকারের তত্ত্বাবধানে থাকা তিনটি বইয়ের মধ্যে একটির দাম গত বছরের মতোই আছে। প্রশ্ন উঠেছে, দরকার থাকলে শুধু একটির বইয়ের দাম বাড়ানো হল না কেন?

এবার বাংলা বইয়ের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪২ টাকা, যা ছিল ১৩০ টাকা। আর বাংলা সহপাঠের (উপন্যাস ও নাটক) দাম ৭২ টাকা, যা ছিল ৬৩ টাকা। উভয় বইয়ের দাম যথাক্রমে সোয়া ৯ ও সোয়া ১৪ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বইয়ের দাম গত বছরও বাড়ানো হয়েছিল। তখন এ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন এবং আপত্তি উঠেছিল। ২০১৭ সালে বাংলা বইয়ের দাম ছিল ১১৩ টাকা। আর ২০১৭ সালে সহপাঠের দাম ছিল ৫৫ টাকা। এমনভাবে ইংরেজি বইয়ের দাম ২০১৭ সালে ৮১ টাকা থাকলেও গত বছর ৯৩ টাকা হয়। ২০১৬ সালে আরেক দফা দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন এক লাফে বাংলা বইয়ের দাম ৪৫ টাকা থেকে ১১৩ টাকা করা হয়েছিল। অন্য বইয়ের দামও একই হারে বাড়ানো হয়। বইয়ের দাম বাড়ানোর জন্য এনসিটিবিতে একটি কমিটি আছে। এবার ওই কমিটিতে ছিলেন সদস্য (অর্থ) মির্জা তারিক হিকমত। এ ব্যাপারে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে কমিটির সদস্য সচিব ও এনসিটিবির কস্টিং অফিসার আবদুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। কোনো তথ্য জানাতেও অপারগতা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সদস্যের (পাঠ্যপুস্তক) সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। এ ব্যাপারে সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, তিনি কয়েকদিন আগে ওই পদে যোগ দিয়েছেন। বইয়ের দাম নির্ধারিত হয়েছে আগেই। কোন প্রক্রিয়ায় কীভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে বিষয়টি তার জানা নেই।