ঢাকাঃ রাজধানীর মহাখালীর খাজা টাওয়ারে আগুন লাগার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে ইন্টারনেট সেবা। শুক্রবারও স্বাভাবিক হয়নি পরিস্থিতি। মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও বেশ কিছু এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা, বিশেষ করে কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। নিরবচ্ছিন ইন্টারনেট সেবা পেতে এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএসপিএ)।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর মহাখালীর আমতলীর খাজা টাওয়ারের সামনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সংগঠনটির সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, আজ আমরা ভেতরে ঢুকে সেখানকার ইকুইপমেন্টগুলোর প্রায় সবই ভালো অবস্থায় দেখতে পেয়েছি। বিশেষ করে ডাটা সেন্টারের ইকুইপমেন্টগুলো মনে হচ্ছে ভালো আছে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা পাওয়ার না দেব, লাইভে না যাব ততক্ষণ পর্যন্ত বলতে পারছি না আমাদের ইকুইপমেন্টগুলো সক্রিয় আছে কি না কিংবা কাজ করছে কি না।
ইকুইপমেন্টগুলো বাইরে নিয়ে বা অন্যকোনো ডাটা সেন্টারে স্থাপন করতে হলে ইন্টারনেট লাইভ করতে অনেক সময় লেগে যাবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এটা করা হলে ইন্টারনেট স্বাভাবিক হতে প্রায় এক সপ্তাহ লেগে যাবে। কেননা আমরা ডাটা সেন্টারেও পর্যাপ্ত স্পেস পাচ্ছি না। বিল্ডিং এখন যে অবস্থায় আছে, ডাটা সেন্টার লাইভ করা সম্ভব। কিন্তু এ জন্য আমাদের বিদ্যুৎসংযোগ ও সরবরাহ দরকার। এটা করা হলে আজকের মধ্যেই আমারা পূর্বের ন্যায় ইন্টারনেট সেবা দিতে পারব। তবে মালিক পক্ষ ভবনে এত দ্রুত বিদ্যুৎসংযোগ নেওয়া ও ভবনে অবস্থিত ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ঢুকতে দিতে চান না। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সময় নিয়ে ভবনে কাজের পরিবেশ ফেরাতে চান। এর আগে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘ঢাকা কোলো’র নাজমুল হক শুক্রবার সকালে ভবনে ঢোকার সুযোগ পান। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, আগুনটা মূলত লেগেছে চার তলা থেকে। সেটা ওপরের দিকে উঠেছে এবং একেবারে ১৩ তলা পর্যন্ত পুড়ে গেছে। ১১ তলায় আইআইজি, এনআরবি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাকিদের ইকুইপমেন্ট সেফটি ভালো থাকায় তেমন ক্ষতি হয়নি। ১০ তলায় ঢাকা কোলো। সেখানে আগুন লাগলেও কক্ষের ভেতরে বেশি পুড়েনি। পুড়েছে ফ্লোরের লবির সরঞ্জাম।
এ বিষয়ে জানতে ডাক ও টেলিযোগাযো মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের মোবাইল ফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) ভাইস চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, খাজা টাওয়ারে আগুন লাগার কারণে কিছু এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে সমস্যা হচ্ছে। কিছু মোবাইল অপারেটরও এফেকটেড (আক্রান্ত) হয়েছিল। তার মধ্যে কিছু ঠিক হয়েছে। তিনি বলেন, রিকভারির জন্য সকাল থেকে একটা টিম কাজ করছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিকভারির চেষ্টা চলছে। পুরোটা রিকভার করতে কয়দিন লাগবে বলা যাচ্ছে না। চেষ্টা চলছে যাতে দ্রুত হয়ে যায়। সবাই তো দেখছে, একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। এখন কে কী বলে এটা আমি বলতে পারি না।
এদিকে শুধু ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটই নয়, মোবাইল ইন্টারনেট ও ভয়েস কল সমস্যা নিয়েও অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, বৃহস্পতিবার যখন আমাদের নেটওয়ার্ক টিম সিগন্যাল পাচ্ছিল যে ওখানে একটা ঝামেলা হচ্ছে, তখনই আমরা বিকল্প আইপি দিয়ে ট্রাফিক পাস করে দিয়েছি। আমাদের নেট কিন্তু ২০ মিনিটের মধ্যে ঠিক হয়ে গেছে। আমাদের ইন্টারনেটে কোনো সমস্যা ছিল না। সমস্যা ছিল আমাদের অফনেট কলে। ওখানে (খাজা টাওয়ার) আমাদের আন্তঃসংযোগ এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) ছিল। আইসিএক্সের টেকনিক্যাল কারণে আমাদের সঙ্গে অন্য দুই (জিপি-বাংলালিংক) অপারেটরেরও ট্রাফিকগুলো বাইপাস করতে হবে। আমি চেঞ্জ করলাম, কিন্তু ওই দুই অপারেটর করল না, তা হলে হবে না। তাই একটু সময় লেগেছে। আমরা যতটুকু শুনেছি, বোরাক টাওয়ারে আমাদের কোনো একটা অপারেটরের ট্রান্সমিশন লিংকে সমস্যার কারণে ওদের প্রায় ঘণ্টা দুয়েক লেগেছিল, এরপর ঠিক হয়ে গেছে। আমাদের থেকে কোনো কল অন্য অপারেটরে গেলে সেখানে কোনো অসুবিধা হয় না। একটা অপারেটর থেকে আমরা এখনও কিছু সমস্যা পাচ্ছি।
তিনি বলেন, আর একটা বিষয় হলো পুরোটা কিন্তু আমাদের হাতে না। আইআইজিরা যদি ব্যান্ডউইথ চাপিয়ে দেয় তা হলে কিন্তু ইন্টারনেট স্লো হয়ে যেতে পারে। কারণ ব্যান্ডউইথ আমাদের ওদের কাছ থেকেই আনতে হয়।
এদিকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যেখানে আইএসপিএবির সভাপতি বলছেন দেশের ষাট শতাংশ ব্যান্ডউইথ নাকি খাজা টাওয়ার থেকেই সরবরাহ করা হয়, সেখানে হঠাৎ এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড এবং নেটওয়ার্কের বিঘ্ন সৃষ্টি জনমনে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তাই সরকারের উচিত একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা এবং দ্রুত দেশে নেটওয়ার্ক পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে আনার জন্য সমন্বিত জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা ৫৮ মিনিটে খাজা টাওয়ারে আগুন লাগে। টাওয়ারটিতে থাকা আন্তঃসংযোগ এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) অপারেটরদের সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকরা। আগুন লাগায় শুরুতেই ওই এলাকা ও পাশের কয়েটি এলাকার ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আগুন লাগায় ঝুঁকিতে পড়েছে ওই ভবনে থাকা ২টি ডাটা সেন্টার এবং ২টি আইআইজিসহ বেশ কয়েকটি ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান।
সূত্রমতে, খাজা টাওয়ারের ৩য় তলায় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ৪র্থ তলায় গ্রামীণফোন ডাটা সেন্টার, ১০ তলায় আর্থ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড, রেস অনলাইন, অরবিট টেলিকম। ১১ তলায় এনআরবি টেলিকম, ঢাকা কোলো এবং এনআরবি ডাটা সেন্টার। আরও আছে ২টি আইইজির পপ এবং ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আর্থ, রেস, ভার্গো, আইপি কমিউনিকেশনের অফিস। এ ছাড়া ভবনের বাকি ৭টি ফ্লোরে সাইফ পাওয়ার টেক গ্রুপ।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৯/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়