গাইবান্ধাঃ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের মধ্য সাহাবাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
কয়েক বছরে ঘাঘট নদীর ভাঙনে শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি, আবাদি জমি, সবজি ক্ষেত এবং বাঁশঝাড় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এবারের ভাঙনে বিলীন হতে যাচ্ছে ওই স্কুলটি। এ ছাড়াও ভাঙনের মুখে রয়েছে বিদ্যালয়ের আশপাশের অর্ধশত পরিবারের বসতবাড়ি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিসহ ভাঙনের মুখে পড়া পরিবারগুলোকে রক্ষায় এখনই স্থায়ী পদক্ষেপ নেয়ার জোর দাবি স্থানীয়দের।
সরজমিনে উপজেলার মধ্য সাহাবাজ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঘাঘট ক্ষরস্রোতা না হলেও মধ্য সাহাবাজ গ্রামের এই অংশে এ নদী যেন রাক্ষসী রূপ নিয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে ওই এলাকার একমাত্র মধ্য সাহাবাজ সরকারি প্রাথমিক বিদালয়। এ ছাড়া অর্ধশত পরিবারসহ শত বছরের পুরোনো মিয়ার ভিটা মাজার, আহলে হাদীস মসজিদও পড়েছে ভাঙনের মুখে।
নদীর চলমান ভাঙনের মুখে থাকা বেশ কয়েকটি পরিবারের ইতোমধ্যে অর্ধেক বসতভিটা বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে; যেখানে ছিল বিভিন্ন জাতের গাছ-গাছালি, বাঁশঝাড় গোয়ালঘর ও সবজি ক্ষেতসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো।
স্থানীয়রা জানান, শুধু এ বছরই নয় গত কয়েক বছর থেকেই আগ্রাসী রূপ নিয়েছে ঘাঘট। ঘাঘট এই অংশে তার গতিপথ পরিবর্তন করে অন্তত ৩০০ গজ পূর্বে সরে গিয়ে এখন স্থানীয়দের মালিকানা জমির ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে। যেখানে বিভিন্ন সময়ে বিলীন হয়েছে শতাধিক বসতবাড়ি, শতাধিক বিঘা ফসলি জমি, অসংখ্য গাছগাছালি, বাঁশঝাড়, মসজিদ, মক্তব ও কবরস্থান। দীর্ঘদিন নদী খনন (ড্রেজিং) না করাকেই দুষছেন তারা।
তাদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের নেতাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দফায় দফায় নদী ভাঙনের বিষয়ে বলা হলেও কোনো কাজে আসেনি, এগিয়ে আসেনি কেউই।
ঘাঘট পাড়ের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, ২০১৮ সালের পর থেকেই ঘাঘটের ভাঙনে এই এলাকার বহু বসতভিটা, ফসলি জমি, বাড়িঘরসহ অনেক সবজি ক্ষেত নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। পানি বৃদ্ধির পর কমতে থাকায় এবারে এই এলাকার একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও ভাঙনের মুখে পড়েছে।
তিনি বলেন, এ ছাড়া আশপাশের অর্ধশত পরিবারের বসতভিটাও রয়েছে ভাঙনের মুখে। ভাঙন রোধে এখনই এবং স্থায়ী পদক্ষেপ নেয়া গেলে হয়তো রক্ষা করা যাবে বিদ্যালয়টিসহ মধ্য সাহাবাজ গ্রামের বাসিন্দাদের। অন্যথায় সবই বিলীন হবে নদীতে। তাতে মুখ থুবড়ে পড়বে এই এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থা।
মধ্য সাহাবাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সজিব মিয়া বলে, নদী ভাঙতে ভাঙতে এখন স্কুল মাঠের সঙ্গে লেগেছে। বল খেলার সময় নদীতে বল যায়। নদীতে পড়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকদিন ধরে খেলাধুলা বন্ধ করে দিয়েছেন স্যারেরা।
ভাঙনের মুখে পড়া মধ্য সাহাবাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, এ বছর নদীর ভাঙন একেবারেই স্কুল মাঠের কাছাকাছি এসেছে। খেলাধুলার সময় খেলার বিভিন্ন উপকরণ নদীতে পড়ে যায়। এ ছাড়া অসাবধানতাবশত বাচ্চারাও নদীতে পড়ে যেতে পারে। আমাদের মাঝে সবসময়ই আতঙ্ক কাজ করছে।
বিদ্যালয়টি রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এই শিক্ষক।
ঘাঘটের ভাঙনের মুখে পড়া মধ্য সাহাবাজ গ্রামের বাসিন্দা অন্ধ ইসমাঈল হোসেন মন্ডল বলেন, রাক্ষসী ঘাঘটের ভাঙনে বসতভিটা বিলীন হয়েছে বহুবার। যেভাবে ভাঙছে দুই-একদিনের মধ্যে আবারও সরাতে হবে। না হলে ঘরবাড়িসহ ঘাঘটের পেটে চলে যাবে। এ সময় তার চোখে-মুখে ছিল সহায়-সম্পদ হারানোর করুণ ছাপ।
এসব বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম বলেন, খুব দ্রুতই সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা-১) আসনের সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে ফোন করা হলে তিনি সরকারি কাজে বাইরে থাকার কথা জানিয়ে মেসেজে বলেন, দ্রুতই লোক (প্রতিনিধি) পাঠাচ্ছি। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইমার্জেন্সি জিও ব্যাগ ফেলানোর ব্যবস্থা করবেন।
তিনি বলেন, আমি এলাকায় এসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ ঘাঘট নদীর ওই এলাকা পরিদর্শন করে স্থায়ী সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ঘাঘট নদীর সুন্দরগঞ্জ অংশের ওই এলাকাটি ইতোমধ্যে পরিদর্শন করা হয়েছে। পানি কমে যাওয়ায় ভাঙন কিছুটা বেড়েছে। ভাঙনরোধে স্থায়ী পদক্ষেপের জন্য আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বরাদ্দ আসলেই খুব দ্রুত ভাঙন রোধে কাজ করা হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৪/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়