অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: একটি ভিডিও দেখলাম। সেখানে বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলার মাঝিহট্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসকেন্দার আলী সাহানা গত ১৬ আগস্ট দামগাড়া সৈয়দ মিনা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক মিটিংয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একজনের উপর চড়াও হন। উত্তেজিত কণ্ঠে জানতে চান, কেন তার বক্তব্যে চেয়ারম্যানকে সম্বোধন করেনি, কেন তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেনি। আর সেজন্য উত্তেজিত হয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এবার বলেন এই ধরনের মানুষ যদি স্কুল পরিচালনা কমিটির নেতা হন তাহলে ওই স্কুলের কোন শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষকের ক্ষমতা আছে তার ছেলেকে ধারাবাহিক মূল্যায়নে খারাপ গ্র্যাড দেওয়ার? যেখানে শিক্ষক ও প্রধানশিক্ষকরা এমন মানুষের অধীনে থাকে সেই স্কুল কেমন করে ভালো চলে বা চলবে?
আর নতুন আরেকটা ফেনোমেনা বের হয়েছে। কেউ কিছু হলে দল বেঁধে তাকে ফুলের মালা দেওয়ার হিড়িক পরে যাওয়া। শুধু দল বেঁধে না এককভাবেও গিয়ে দেখা করে তার আনুগত্য ও গোলামিত্বের প্রমাণ দিয়ে আসে। এটা এখন অফিস, আদালত, স্কুল কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও চালু হয়েছে। পুলিশের বা প্রশাসনের কেউ বড় কোনো পদে আসীন হলে ওরে আল্লারে ফুল দেওয়ার ছবি দিয়ে ফেসবুক ভেসে যায়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও দেখি শুধু ফুল দেয় আবার দিয়েছে যে সেটা সবাইকে দেখানোর জন্য ফেসবুকেও পোস্টাইয়া দুনিয়াকে জানিয়ে দেয় যেন সবাই জানে এবং কেউ যেন ভবিষ্যতে ভুল না বুঝতে পারে।
আজ থেকে অনেক বছর আগে ঢাকার এক উপনির্বাচনে একজন এমপি হয়। তাকে ফুল দিয়ে বরণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এক নেতা চলে গিয়েছিলেন দেখা করতে। তখন সেটা কদাচিৎ ঘটতো। এখন এইটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আজ পর্যন্ত আমি কাউকে কোনোদিন ফুল দিয়ে বরণ করতে যাইনি। কারো কাজে মুগ্ধ হলে তার বিদায়ের সময় গিয়ে ফুল দিয়ে বিদায় জানতাম। কিন্তু সেইরকম কাউকে এখনো পাইনি। কেউ যখন আমাকে ফেভার দেওয়ার মতো বড় পদে নিযুক্ত হন আমি সাধারণত তাকে ফুল দিয়ে বরণ করতে যাই না পাছে তার মনে হয় আমি কিছু চাই। আমি আজ পর্যন্ত কারো ফেভার নিয়ে কোনো কিছু নিইনি। যা কিছু হতে পেরেছি নিজ যোগ্যতায় অর্জন করেছি। আর এখন এমন পজিশনে আছি সেটাকে আমার সর্বোচ্চ বড় পদ মনে হয়। আমি একজন অধ্যাপক। আমি ক্লাসে পড়াতে পারি। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আমার কথা শুনে। আমি গবেষণা করতে পারি। শিক্ষার্থীরা আমার সাথে গবেষণার কাজ করতে পারে এবং তাদের সাথে মিলে নতুন জ্ঞান সৃষ্টিতে সামান্য হলেও ভূমিকা রাখতে পারি আর কি চাই? কোনো প্রশাসনিক পদে গেলে কি এসব করতে পারব? প্রশাসনিক পদ চাইলে শিক্ষকতা পেশাতেই আসতাম না।
সমাজটা আসলে দিন দিন অসুস্থতার দিকে যাচ্ছে। তোষামোদীদের সংখ্যা যত বাড়বে, তোষামোদি ছাড়া টিকে থাকা ততো কঠিন হবে এবং হচ্ছে। সমাজে অসৎ মানুষের সংখ্যা যতো বাড়বে, সৎ হয়ে টিকে থাকা ততো কঠিন হবে এবং হচ্ছে।
লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৫/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়