আমাদের জাতীয় পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন দরকার: শিক্ষা উপমন্ত্রী

শিক্ষাবার্তা ডেস্কঃ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, ‘সমাজ পরিবর্তন না হলে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতের মতো বিষয়গুলোতে নারীর অংশগ্রহণ অনেক কঠিন হবে। প্রথমে কাঠামোগত সমস্যা দূর করতে হবে।’

‘উদ্ভাবনের নারী: জ্ঞানে বিজ্ঞানে, প্রযুক্তি ও সমাধানে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন উপমন্ত্রী।  সোমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে একশনএইড বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, নারী কী করবে, পুরুষ কী করবে তা আমরা পাঠ্যপুস্তকেই নির্ধারণ করে দিচ্ছি। এটিই বড় সমস্যা। বিদ্যালয়ে নারীদের পড়ানো হয় গার্হস্থ্য অর্থনীতি। পাঠ্যপুস্তকে বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে রাখা হয়েছ। লিঙ্গভিত্তিক স্টেরিওটাইপিং ও শক্তিশালী শিক্ষাব্যবস্থার অভাব মূল বাধা। আমাদের জাতীয় পাঠ্যক্রমের ব্যাপক পরিবর্তন দরকার।’

মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে আমরা বাংলাদেশের ষোলো বছর বয়স পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর জন্য বিজ্ঞানশিক্ষা বাধ্যতামূলক করার পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের পাঠ্যক্রম লিঙ্গসংবেদনশীল, তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা লিঙ্গবিশেষজ্ঞ নিয়োগ করেছি।’

অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী বলেন, ‘গবেষণার জন্য দীর্ঘ সময় প্রয়োজন; কিন্তু নারীদের পারিবারিক দায়িত্বও পালন করতে হয়, তাই তাঁরা এই পেশায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। আমরা যদি এই ক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখতে চাই, তবে পারিবারিক সমর্থন এবং উৎসাহ গুরুত্বপূর্ণ।’

একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘নারীরা শতবছর আগে তাঁদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছিল এবং ২০২৩ সালেও সমতার অভিপ্রায়ে তা চালিয়ে যাচ্ছে।’

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক নোভা আহমেদ বলেন, ‘পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জনসংখ্যার দিক থেকে নারী ও পুরুষের অনুপাত প্রায় একই। এমনকি বাংলাদেশে উচ্চমাধ্যমিক অধ্যয়ন সমাপ্তির হার উভয় লিঙ্গের মধ্যেই সমান। তবে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। কর্মক্ষম জনসংখ্যার মাত্র এক–চতুর্থাংশ নারী। মূলত নারীদের নিরাপত্তার অভাব এবং দক্ষতা সম্পর্কে আত্ম-সন্দেহ নারীদের স্টেম থেকে দূরে রাখছে।’

নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের সহকারী কমিশনার সুরঞ্জনা সাহা বলেন, সাইবার ক্রাইম ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে অনলাইন সহিংসতা রোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় নারীদের অংশগ্রহণও নগণ্য। সামগ্রিক পরিবর্তন আনতে আমাদের এই পেশায় আরও নারী দরকার।

অনুষ্ঠানে একশনএইড বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটির নির্বাহী বোর্ড সদস্য মিরাজ আহমেদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে তৃণমূল পর্যায় থেকে চার নারীকে তাঁদের অনবদ্য কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘নাসরীন স্মৃতি পদক-২০২৩’ পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন মোসাম্মৎ গোলসানারা বেগম (পরিবেশবান্ধব কৃষিতে নারীর ভূমিকা), হোমায়রা আহমেদ জেবা (জলবায়ু সুবিচার ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় নারী নেতৃত্ব), পারভীন ( প্রথাগত পেশা থেকে বেরিয়ে এসে ভিন্ন পেশায় নারী) এবং সানজিদা ইসলাম (যৌন হয়রানি, নির্যাতন ও বাল্যবিয়ে বন্ধে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী)।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৭/০৩/২০২৩   

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়