ঢাকাঃ গুচ্ছ পদ্ধতিতে দেশের ২২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বাছাই ও ভর্তিতে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে একক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইগ্রেশন বন্ধ করে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন চালুর দাবি করেছেন তারা।
অনিয়ম দূর করে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন চালুর দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৩ আগস্ট শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। এরপর গত ৪ অক্টোবর দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও রাষ্ট্রপতি বরাবর গুচ্ছ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী মো. শাহারিয়ার হোসেন, মোছা. হালিমা সাদিয়া, ইসরাত জাহান ইমা ও মোসা. আফরোজা আক্তার স্মারকলিপি দেন।
শিক্ষার্থী এস এম সাইফুর রহমান সিফাত, মিথিলা ফারজানা, আব্দুল্লাহ আল সারুফ, মো. সামিউল ইসলাম, নাকিব হাসানসহ শিক্ষার্থীরা জানান, মাইগ্রেশন বন্ধ করে আমাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ও পছন্দের বিষয়ে লেখাপড়ার সুযোগ বন্ধ করা হচ্ছে। অথচ মেধা তালিকার যারা পেছনে তারা আগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের চেয়ে ভালো বিশ্ববিদ্যালয় ও ভালো বিষয়ে ভর্তির সুযোগ করে দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা গত ৩ জুন অনুষ্ঠিত হয়। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় মেধাক্রম অনুযায়ী ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চারটি মেরিট (মেধা) ও চারটি মাইগ্রেশন প্রকাশিত হয়। এরপর চূড়ান্ত ভর্তি সম্পন্ন করে ক্লাস শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কিন্তু গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ইতোমধ্যে ২ হাজার ২২০টির বেশি আসন শূন্য হয়।
ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা মেধাক্রম অনুযায়ী গুচ্ছভুক্ত যেকোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে শূন্য আসনে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধ করে শুধু ভর্তি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইগ্রেশনের সুযোগ রাখা হয়। এতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা শূন্য আসনে ভর্তি হতে পারবে না। শুধু যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আছে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি আসন ফাঁকা হয় সে বিষয়ে মাইগ্রেশন করতে পারবে।
অন্যদিকে, ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মেধাতালিকার পরে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের শূন্য আসনের বিপরীতে ‘ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে’ ভর্তির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এতে মেধাতালিকার পেছনে থাকা শিক্ষার্থীরা শূন্য আসনের বিপরীতে অপেক্ষাকৃত ‘ভালো’ বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও বঞ্চিত হচ্ছেন মেধা তালিকায় উপরের দিকে থাকা ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী মিথিলা ফারজানা বলেন, শুধু একক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে মাইগ্রেশন সীমাবদ্ধ থাকায়, চূড়ান্ত ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের তালিকায় থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনোভাবেই যেতে পারবে না।’
এস এম সাইফুর রহমান সিফাত বলেন, ‘মেধা তালিকায় ভর্তি হয়েছি। কিন্তু বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয়ে আসন ফাঁকা হয়েছে সেখানে মাইগ্রেশন করতে পারছি না। একক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে মাইগ্রেশন সীমাবদ্ধ থাকায় আমরা পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে শূন্য আসনের বিপরীতে ভর্তি হতে পারবো না। অথচ আমাদের চেয়ে মেধা তালিকার পরে যারা রয়েছে এখন তারা ভর্তি হতে পারবেন। অথচ আমাদের আগে বলা হয়েছিল— যেকোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইগ্রেশন করা যাবে। ‘
শিক্ষার্থীর এক অভিভাবক মতিউর রহমান রিয়াদ বলেন, যদি শুধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বহাল রাখা হয় তাহলেই শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে। অথচ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান বিষয়ের অনেক শিক্ষার্থী অন্য কোনও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়ে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে চূড়ান্ত ভর্তি হয়নি। বিজ্ঞান বিষয় ছাড়াও আইনের মতো বিষয়ে আসন ফাঁকা হয়েছে এ কারণে। এখন এসব শূন্য আসনে মেধা তালিকার পরে থাকা কম নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থী সুযোগ পাচ্ছেন। অথচ ভর্তি হওয়া মেধা তালিকার উপরে থাকা বেশি নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না— এটা অন্যায়।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে গুচ্ছ ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে একাধিকার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। মোবাইল ফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।
গুচ্ছ ভর্তি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ইমদাদুল হক দেশের বাইরে থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ভর্তি টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাছিম আখতার বলেন, গুচ্ছ ভর্তির সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীবান্ধব। ভর্তির পর আসন ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইগ্রেশন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ শূন্য আসনে ভর্তিও হয়ে গেছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১০/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়