আঁখি আমজাদঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হওয়ার সুবাদে আমার প্রাইমারি, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয় সব পর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষক সম্পর্কে কিছুটা বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমরা জানি মা-বাবার পরে যদি কোনো ব্যক্তি একজন মানুষের সার্বিক কল্যাণ চান তবে সেই ব্যক্তি হলেন শিক্ষক। শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। হযরত আলী (রা.) শিক্ষকের প্রতি মর্যাদা দানের প্রেক্ষিতে বলেছেন- ‘আমি যার কাছে একটি অক্ষরও শিখেছি, আমি তার দাস।’ শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতায় দেখতে পাই, একজন শিক্ষকের অবস্থান কত উঁচুতে। কিন্তু কতিপয় মুখোশধারী শিক্ষকের আচরণে সমাজে শিক্ষকের ওপর ভরসা থাকছে না। কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে শিক্ষকের নৈতিকতা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।
প্রাইমারিতে পড়াকালে খুব অল্প হলেও মনে আছে, ম্যামরা কত আদর করে পড়াতেন। কখনো কোনো নেতিবাচক দিক আমার মনে আসেনি, যেহেতু বয়সটাও কম ছিল বোঝার জন্য। কিন্তু যত বড় হয়েছি কতিপয় কিছু শিক্ষকের আচরণে মর্মাহত হয়েছি বারবার। মাধ্যমিকে পড়ার সময় বুঝতে পারলাম কিছু শিক্ষক, এই শিক্ষকতা পেশার নাম বিক্রি করে টাকা উপার্জন করছেন। ক্লাস টিচার বা অমুক বা তমুক স্যারের কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষার খাতায় নম্বর দিতেন না। যতদূর জানি এই কালচারটা এখনো চলে আসছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে এমনও শিক্ষক ছিলেন যিনি ব্যবহারিক পরীক্ষার যে নম্বরটা তা টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতেন। গার্লস স্কুলে পড়ার সুবাদে দেখেছি একজন শিক্ষক কীভাবে একটি মেয়ের শরীরে স্পর্শ করছেন, অহেতুক কারণে গভীর রাতে মেয়েদের আপত্তিকর বার্তা প্রেরণ করছেন, ক্লাসে অনেক নীতিবান বক্তব্য দিয়ে, পারিবারিক বা ব্যক্তিজীবনে নীতিহীন কার্যকলাপে যুক্ত হচ্ছেন। আমাদের সমাজে সেই মুখোশধারী ব্যক্তিটিই সর্বেসর্বা। আফসোস। কিন্তু সেই স্কুলের এমনও শিক্ষক ছিলেন যারা কিনা নিজেদের মেয়ের চোখে দেখতেন, শুধু পড়াতেনই না পাশাপাশি কীভাবে ভালো মানুষ হবো, পরিবার, সমাজ, দেশের কল্যাণে কাজ করব, জীবনে ভুল করলে কীভাবে তা পুষিয়ে নিয়ে এগিয়ে যাব, তা শিখিয়েছেন। তাদের দোয়ায় আজ আমি হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হতে পেরেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে আমি দ্বিতীয় বর্ষে অনেক ক্লাস করতে পারিনি, তাই নিয়ম অনুযায়ী আমি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছিলাম না। একজন মহৎ হৃদয়বান শিক্ষকের কাছে গিয়ে আমি সমস্যার কথাগুলো বলি, তিনি আমাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দেন। আমি চিরকৃতজ্ঞ সেই মহান ব্যক্তির কাছে যিনি আমাকে একটি সুযোগ দেন ঘুরে দাঁড়ানোর।
শুধু সনদপত্র থাকলেই আপনি একজন শিক্ষিত বা আদর্শ শিক্ষক নন, একজন শিক্ষকের কী কী নৈতিকতা থাকা উচিত, তা আপনি একজন শিক্ষক আপনি আমার থেকে ভালো জানেন। সেই নৈতিক গুণাবলিগুলো চর্চা করুন। মুখোশধারী মানুষ হয়ে কি দিনশেষে একটুও অনুতাপ হয় না যে আপনার ব্যক্তিজীবনের এই কাজগুলো আপনার পেশার সঙ্গে যায় না।
আমি বলছি না যে মাধ্যমিকের শিক্ষকরা খারাপ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ভালো। ভালো-খারাপ সব জায়গাতেই আছে। আমি
আশা ব্যক্ত করব একজন শিক্ষক যিনি মানুষ গড়ার কারিগর, তার থেকেই আমরা অনুপ্রাণিত হয়ে জীবনে অনেক কিছু শিখব। তাই একটি আদর্শ পেশার মানুষ হয়ে আপনি সেই নৈতিকতার চর্চা করুন।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২২/০৯/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়