ঢাকাঃ রাজধানীর মতিঝিলে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে আট বছরে অবৈধভাবে ৩৪২ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিন ধাপে এসব শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। শিক্ষকরা বেতন-ভাতা বাবদ এ পর্যন্ত ৫৫ কোটি ৯০ লাখ ৬৫ হাজার ৭৫৯ টাকা উত্তোলন করেছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
গত ১৭ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, নিয়োগ দেওয়া এসব শিক্ষকের মধ্যে ৪২ জনের নিবন্ধন নেই। অন্তত ১৩ জনের বিএড সনদ অবৈধ। এ ছাড়া ভুয়া সনদে অন্তত আরো ১৩ জন নিয়োগ পেয়েছেন।
ডিআইএ কর্মকর্তারা জানান, বিধিবহির্ভূত নিয়োগ, অস্থায়ী নিয়োগ দিয়েও পূর্ণকালীন শিক্ষকদের সমান বেতন স্কেল ও বিভিন্ন সম্মানীর নামে এই বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। এসব নিয়োগ বাতিলসহ আদায়কৃত অর্থ ফেরত দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ডিআইএ পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর বলেন, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মসহ আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করে প্রতিবেদন আকারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর) এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে মন্ত্রণালয়।
তদন্তের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সমন্বয়ে একটি বৈঠক হবে। সেখানে বিচার-বিবেচনা শেষে মন্ত্রণালয় পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন শাখায় অস্থায়ী ভিত্তিতে ৫৯ জন শিক্ষক ও চারজন ল্যাব সহকারী নিয়োগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। অন্যদিকে গভর্নিং বডির (জিবি) অনুমোদনে ১১১ জন শিক্ষক ও একজন ল্যাব সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়। অর্থাৎ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই অতিরিক্ত ৪২ জন শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
নিয়োগের ক্ষেত্রে মাউশি মহাপরিচালকের (ডিজি) একজন প্রতিনিধি থাকা বাধ্যতামূূলক। অথচ প্রতিনিধি ছাড়াই ৪০ জনের নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা অবৈধ হলেও সম্পূর্ণ নিয়োগ এই কমিটির মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়েছে। ফলে পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়াটি অবৈধ। খণ্ডকালীন নিয়োগ দেওয়া হলেও তাঁদের পূর্ণকালীন শিক্ষকদের মতো বেতন স্কেল ছিল আট হাজার টাকা। তদন্তকালে ৯৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে কর্মরত অবস্থায় পাওয়া যায়। অবৈধ নিয়োগের কারণে তাঁদের নিয়োগ বাতিলসহ বেতন-ভাতা বাবদ আদায় করা ২৬ কোটি ৮৮ লাখ ৪৪ হাজার ৪০০ টাকা ফেরত দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
জিবির চাহিদা অনুযায়ী ২০১৩ সালে ৯৪ জন শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব ছিল। সেখানে ১৪২ জন শিক্ষক ও তিনজন কর্মচারীসহ মোট ১৪৫ জন নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে অতিরিক্ত ৪৮ জন শিক্ষক নিয়োগ পান। নিয়োগের ক্ষেত্রে ১৫ দিন আবেদনের সময় রেখে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের শর্ত থাকলেও মাত্র এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছিল, যা অগ্রহণযোগ্য। নিয়োগের ক্ষেত্রে ডিজি প্রতিনিধি মনোনয়নের চিঠি থাকলেও কোন শাখায় কত পদে নিয়োগ হবে, তা উল্লেখ ছিল না। ফলে এই পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়াটি ছিল অবৈধ। এসব নিয়োগ বাতিলসহ তাঁদের বেতন-ভাতা হিসেবে নেওয়া ২৩ কোটি ৬৯ লাখ ৭১ হাজার ৪৪০ টাকা ফেরত দিতে হবে।
২০১৮ ও ২০১৯ সালে মোট ৮৯ জন শিক্ষককে বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে ২০১৫ সালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র মানা হয়নি। এসব শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল সুপারিশসহ বেতন-ভাতা বাবদ আদায়কৃত পাঁচ কোটি ৩২ লাখ ৪৯ হাজার ৯১৯ টাকা ফেরত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তাদের মতে, নিয়োগে অনিয়মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—শূন্য বা সৃষ্ট পদের কোনো তালিকা প্রণয়ন না করা, বিধি অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করা, নিয়োগ বোর্ড গঠন প্রস্তাব সংরক্ষণ না করা, ডিজি প্রতিনিধির চিঠি সংরক্ষণ না করা, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফলাফল শিট সংরক্ষণ না করা, নিবন্ধন সনদবিহীন নিয়োগ, শিক্ষক-কর্মচারীরা তাঁদের উত্তোলিত বেতন সম্পর্কে না জানা, বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ।
বিভিন্ন শাখায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ
তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিভিন্ন শাখায় ১৪ কোটি ৬১ লাখ ২৫ হাজার ৭৫০ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। পরিদর্শকরা জানান, গভর্নিং বডির সভা বাবদ সম্মানী নেওয়া ছাড়াও বড় অঙ্কের আপ্যায়নসহ অন্যান্য খরচ রয়েছে। প্রতিটি শাখায় এভাবে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়েছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২২/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়