অবৈধ শাখা, তবুও ৩৭ শিক্ষককে এমপিওভুক্তি

ঢাকাঃ রাজধানীর আইডিয়াল স্কুলের বনশ্রী ও মুগদা শাখা পরিচালনার কোনো অনুমতি নেই। এই দুটি শাখা ছাড়া মূল ক্যাম্পাসের মাধ্যমিকে ব্যবসায় শিক্ষা শাখা, বিভিন্ন শ্রেণির একাধিক শাখা, ডাবল শিফট, ইংরেজি ভার্সন, প্রাথমিকের প্রথম স্বীকৃতি ও ইংরেজি ভার্সনের ডাবল শিফট খোলার অনুমিত নেই। নিয়ম অনুযায়ী যেসব শাখা ও শিফটের অনুমিত নেই সেখানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক নিয়োগের বিধান নেই। তবুও বনশ্রী শাখায় ৩৭ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ও ঢাকা বোর্ডকে ম্যানেজ করে নিয়োগের পুরো কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। অবৈধ শাখায় নিয়োগ হলেও শিক্ষকরা বেতন-ভাত পান সরকারি বিধি অনুসারে। অবৈধ এ শাখায় সরকারি টাকায় বহুতল ভবনও নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে অর্থ আদায় করা হয়। আদায়কৃত অর্থ থেকে গত এক দশকে অন্তত ১০০ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে।

অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়াসহ দুর্নীতি বন্ধে নানা সুপারিশ করেছে ডিআইএ।

ডিআইএ’র তদন্তে বলা হয়েছ, আইডিয়ালের বনশ্রী শাখা ১৯৯৬ সালের ১ জুলাই এক দশমিক ৮১৩৬ একর নিজস্ব জমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পার হলেও নেওয়া হয়নি সরকারের অনুমোদন। এ শাখা ক্যাম্পাসটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই চলছে। অনুমোদন না থাকলেও বাংলা ভার্সনের ৩৫ জন ও ইংরেজি ভার্সনের দুই জন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। তারা সরকারি বেতন-ভাত পান। ২০১৪ সালে ১০তলা একটি ভবন করা হয়েছে সরকারি টাকায়।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত রয়েছেন ২১২ জন শিক্ষক, সাতজন তৃতীয় শ্রেণির ও ৫৩ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে বেতন দেওয়া হয়। তবে যথাযথ নিয়ম মেনে তা পরিশোধ করা হচ্ছে না। এ শাখা ক্যাম্পাসে নিয়োগ দেওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের ভবিষ্যতে এমপিও না দিতে সুপারিশ করেছে ডিআইএ তদন্ত কমিটি। এছাড়া মতিঝিল মূল ক্যাম্পাসের ১০৫টি শ্রেণি শাখার মধ্যে ৩২টি ও মুগদা শাখার ৫৬টি অতিরিক্ত শ্রেণি শাখার অনুমোদন নেই।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর বেলাল হোসাইন বলেন, প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ছাড়া শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির সুযোগ নেই। এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই এমপিও বাতিলসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অনুমোদন ছাড়া এত বছর ধরে কীভাবে চলছে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে ব্যাখ্যা আমি দিতে পারব না। প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয় বোর্ড ও মন্ত্রণালয়।

বনশ্রী শাখা ক্যাম্পাসে বর্তমানে প্রভাতি ও দিবা শাখায় প্রাথমিক স্তরসহ মাধ্যমিকের (বিজ্ঞান ও ব্যবসা শিক্ষা) বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। প্রতি বছর এসব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সরকারি বিধিমালা না মেনে টিউশন ফিসহ নানা খাতে আদায়কৃত ১৪ কোটি ৯০ লাখ পাঁচ হাজার ৪১ টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে কর্তৃপক্ষ হাতে রেখে খরচ করেছে। নিয়ম অনুযায়ী দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা নগদ রাখার নিয়ম রয়েছে।

প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১০০ কোটি আত্মসাতের কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অবকাঠামো নির্মাণ, জ্বালানি খরচ, গভর্নিং বডির (জিবি) নির্বাচন ও তাদের সম্মানীসহ নানা খাতে হরিলুট হয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার বলেন, প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাসের অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। বোর্ড থেকে কোনো শাখা ক্যাম্পাসের অনুমোদন দেওয়া হয় না। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কোনো নির্দেশনা দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/১০/২০২৩    

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়