অবাধে চলছে ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিকের অবৈধ বানিজ্য

পটুয়াখালী প্রতিনিধি।। কলাপাড়ায় দীর্ঘ দিনেও বন্ধ হয়নি নিয়ম বহির্ভূত ভাবে গড়ে ওঠা ১২টি ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও ৪টি প্রাইভেট ক্লিনিক। চিকিৎসা সেবার নামে এসব প্রতিষ্ঠানের অপচিকিৎসার খবর গনমাধ্যমে প্রকাশের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালকের নেতৃত্বে একটি পরিদর্শন টিম ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর দিনভর এসব প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার পরিদর্শন করেন। এরপর গনমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে এসকল প্রতিষ্ঠানের রোগী নিয়ে বানিজ্য বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই পরিদর্শন টিম। কিন্তু রহস্যজনক কারনে আজও বন্ধ হয়নি এসব প্রতিষ্ঠান।
সূত্রমতে জানা যায়, কলাপাড়ার উপকূলীয় এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কতিপয় চিকিৎসক, ষ্টাফ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সমন্বয়ে পরিচালিত ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিকের চিকিৎসা সেবা নিয়ে বানিজ্যের তথ্য গনমাধ্যমে প্রকাশের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক ডা: কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন, উপ-পরিচালক ডা: শরীফ, সদস্য সচিব ডা: মেহেদি হাসান ও সদস্য ডা: মাসুদ করিম এর নেতৃত্বে একটি পরিদর্শন টিম ৫ অক্টোবর ২০১৭ এসকল ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিক পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের সময় কলাপাড়ার কোন ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ যথাযথ কাগজ প্রত্র প্রদর্শন করতে পারেনি। এমনকি এসকল প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের কর্তব্যরত চিকিৎসক, ব্রাদার, নার্স ও টেকনিশিয়ান তাদের যথাযথ প্রশিক্ষন সনদসহ প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল দেখাতে পারেনি পরিদর্শন টিমকে। এমনকি এসকল প্রতিষ্ঠান গুলো যে সকল শর্ত পূরনের অঙ্গীকারে লাইসেন্স পেয়েছে তার একটি শর্ত ও পূরন করতে পারেনি অদ্যবধি। শীঘ্রই এগুলো বন্ধ করার প্রয়োজনীয় উদ্দোগ সহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবার মান নিশ্চিত করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানানোর কথা জানায় পরিদর্শন টিম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে পরিচালক মহোদয়ের নেতৃত্বে পরিদর্শন টিম বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী জেলার সরকারী ও বে-সরকারী স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান গুলো পরিদর্শন করে। ওই টিমের সদস্যরা প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের বিপক্ষে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কতিপয় অসাধু চিকিৎসক, ষ্টাফ ও কতিপয় প্রভাবশালীদের সমন্বয়ে পরিচালিত ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সেবার নামে হয়রানীর শিকার হচ্ছে সাধারন মানুষ। এমনকি প্রভাবশালী এসকল প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার মালিকদের পোষা দালালদের হাতে অসুস্থ্য রোগী ও তার স্বজনদেরকে শারিরীক ভাবে লাঞ্চিত করারও অভিযোগ রয়েছে। এসব ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে কর্মরত নার্স, ব্রাদার, টেকনিশিয়ান ও ল্যাব সহকারীদের মধ্যে অনেকেরই যথাযথ প্রশিক্ষন সনদ নেই। এসকল প্রতিষ্ঠান গুলোর দালালরা অফিস টাইমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরে ও গেটে অবস্থান নিয়ে রোগী বাগিয়ে নেয়ার বিষয়ে তৎপর থাকে সর্বদা। মাঝে মাঝে রোগী নিয়ে টানা হেঁচড়া সহ দালালে দালালে হাতা-হাতি ও চুলো-চুলির ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এসকল ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিক গুলোতে অবৈধ গর্ভপাত করা সহ অন্যরকম বানিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রায় আড়াই ল জনসংখ্যার এ উপজেলায় চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে মাত্র ৫জন সরকারী চিকিৎসক রয়েছেন। এদের প্রত্যেকেরই নামে-বেনামে রয়েছে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের সাথে যোপাযোগ। তাই অফিস সময়ে সরকারী টিকিটের পরিবর্তে রোগীদের এরা প্রভাবিত করেন তাদের প্রাইভেট ক্লিনিকে নিতে। এদের মধ্যে খোদ স্বাস্থ্য প্রশাসক ডা: চিন্ময় হাওলাদার রাত ১১টা পর্যন্ত রোগী দেখেন তার হাসপাতাল কোয়ার্টারে। আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: জেএইচ খান লেনিন প্রাইভেট রোগী দেখেন মেডিল্যাব ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে , তার স্ত্রী ডা: তাসলিমা ফেরদৌসি রিমা’র মালিকানায় চলে রয়েল ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এবং ডা: আশরাফুল ইসলাম রোগী দেখেন লাইফ কেয়ার ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে।