অবহেলিত প্রাথমিক শিক্ষকদের আশার আলো!

ঢাকাঃ  বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে দেখা যায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অত্যন্ত সম্মানীয় ব্যক্তি। তাদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন সুবিধা আকর্ষণীয়। এ ছাড়া পদোন্নতি পেয়ে তারা জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশের চিত্র উল্টো। প্রাথমিকের শিক্ষকরা অবহেলিত। অথচ সারা দেশে ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন প্রায় চার লাখ। তাদের বেশির ভাগের চাকরি জীবন শেষ হয় পদোন্নতি ছাড়া। ফলে তারা হতাশায় ভোগেন। তবে আশার কথা হলো, তাদের সেই হতাশার অবসান হতে যাচ্ছে।

জানা যায়, তিন বছর ঝুলে থাকার পর চূড়ান্ত হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নতুন বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি হবে। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সহকারী শিক্ষক হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকরা জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সহকারী প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক পদেও পদোন্নতি পাবেন। প্রধান শিক্ষকদেরও পদোন্নতির সুযোগ তৈরি হবে। তারা পর্যায়ক্রমে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) দু’টি পরিচালক পদে পদোন্নতি পাবেন।

শিক্ষকদের পদোন্নতির ব্যবস্থা না থাকায় একটি স্থবিরতা তৈরি হয়েছিল। এ অবস্থা কাটাতে ২০২০ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগে নতুন বিধিমালা তৈরির কাজ শুরু হয়। নানা জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে চূড়ান্ত হয়েছে বিধিমালা।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্র জানায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনেক আগের একটি সিদ্ধান্ত ছিল, প্রধান শিক্ষকের পদ অবসরজনিত কারণে শূন্য হলে ওই পদে নতুন নিয়োগ না দিয়ে বরং সহকারী শিক্ষককে পদোন্নতি দিয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণ করা হবে। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের ৬৫ শতাংশ পদ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৩৫ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হয়। লক্ষণীয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অনেকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগদানের পর দীর্ঘ ৩৮-৩৯ বছরেও পদোন্নতি পাননি। একই পদে থেকে চাকরি জীবন শেষ হয়েছে। পদোন্নতির সুযোগ না থাকায় অনেকে কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। কিংবা পেশায় শতভাগ মনোযোগ দিতে চান না।

একজন শিক্ষক যে পদে চাকরিতে যোগ দিলেন শেষ জীবনে এসেও ওই একই পদে থেকে বিদায় নেবেন এটি কোনো পদ্ধতি হতে পারে না। ৩৮-৩৯ বছর একই পদে থেকে চাকরি করতে হলে হতাশা জন্ম নেয়া স্বাভাবিক। তাদের কাজের আগ্রহ না থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়। আসলে এটিই বাস্তবতা। এ কারণে মেধাবীরা এ পেশায় আসতে চান না। তবে নতুন বিধিমালায় পদোন্নতির সুযোগ তৈরি হওয়ায় সব শিক্ষকের মধ্যে একটি আগ্রহ তৈরি হবে বলে আশা করা যায়।

আমরা মনে করি, প্রাথমিকের শিক্ষকদের জন্য নতুন এই বিধিমালা বাস্তবায়ন হলে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার অবসান হবে। পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় এ পেশার প্রতি মেধাবীদের আগ্রহ আগের চেয়ে বাড়বে। আর প্রাথমিকে মেধাবীরা বেশি করে এলে আশা করা যায়, প্রাথমিক শিক্ষার দুর্দশা কেটে গিয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে, শিক্ষার মানও বাড়বে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/৩১/০৮/২০২৩    

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়