অবশেষে বরখাস্ত সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের সেই অধ্যক্ষ
শিক্ষাবার্তায় সংবাদ প্রকাশ
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের সেই অধ্যক্ষ মো. হাসানুল সিরাজী্কে (ইনডেক্স নাম্বার K831027) একই সাথে দুইটি কলেজে অধ্যক্ষ পদে চাকরি, নারী সহকর্মীদের সাথে অসাদাচরণ, দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের দায়ে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কলেজ পরিচালনা পর্ষদ। একই সাথে কলেজটির জ্যেষ্ঠ শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মোঃ আলমগীর হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
রবিবার কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও কালকিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত চিঠিতে তাকে এই সামিয়ক বরখাস্ত করা হয়।
এর আগে চলতি মাসের গত তিন তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (কলজে-৩) তপন কুমার সরকার স্বাক্ষরিত পত্রে, মো: হাসানুল সিরাজীর বিরূদ্ধে একই ব্যক্তি দুই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত থাকায, বিভিন্ন দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও নারী বিদ্বেষী এবং অসাদাচরণ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তার সুপারিশ/সিদ্ধান্তের আলোকে তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। এবং একই সাথে কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতির মতামত চাওয়া হয়।
তার আগে গত ২৫ মে ২০২৩ ইং তারিখে ‘দুই পদে চাকরি করেও বাতিল হয়নি অধ্যক্ষ হাসানুল সিরাজীর এমপিও‘.শিরোনামে শিক্ষাবার্তা’য় একটি অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন তৈরি হয়।
কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি স্বাক্ষরিত বরখাস্তকরণ চিঠিতে বলা হয়, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের কয়েকজন শিক্ষক দূর্নীতি দমন কমিশনে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। দূর্নীতি দমন কমিশন অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য মাউশিকে দায়িত্ব প্রদান করে। সে প্রেক্ষিতে মাউশি কর্তৃক তদন্ত কর্মকর্ত নিয়োগ করা হয় এবং উক্ত নিয়োগকৃত তদন্ত কর্মকর্তা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনীত বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করেন। তদন্তে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অসদাচারণ এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সহ অধ্যক্ষ কর্তৃক নারী শিক্ষকদের প্রতি আচরণ শিষ্টাচার বহির্ভূত ও নারী বিদ্বেষী এবং একই সাথে দুই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এছাড়াও সভাপতি কর্তৃক চার বার শোকজ করা হলেও তার কোনো জবাব প্রদান করেননি।
এতে আরও জানানো হয়, তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদনের আলোকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কেন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না মর্মে মাউশি থেকে সভাপতি, কলেজ পরিচালনা পর্ষদ এর নিকট মতামত চাওয়া হয় এবং ইতোপূর্বে অধ্যক্ষকে ০৩ (তিন) বার কারণ দর্শানো পত্র প্রেরণ সত্ত্বেও জবাব দাখিল না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে বিগত ২৩/১০/২০২৩ খ্রি. তারিখ কালকিনি সৈয়দ আবুল জাতীয় হোসেন কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেহেতু, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে । সেহেতু, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকুরীর শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯ এর ১৭(ক) এর (২,৩,৪,৫,৬,৭ ও ৮) অনুচ্ছেদ মোতাবেক সর্বসম্মতিক্রমে আপনাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এমতাবস্থায়, কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভার সিদ্ধান্তের আলোকে আপনাকে অদ্য ২৯ অক্টোবর ২০২৩ খ্রি. তারিখ হতে সাময়িকভাবে বরখান্ত করা হ’ল। সাময়িকভাবে বরখাস্তকালীন আপনি বিধি মোতাবেক সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন এবং স্বচ্ছ তদন্তের স্বার্থে আপনি মোঃ হাসানুল সিরাজী অধ্যক্ষ পদের দায়িত্ব অত্র কলেজে কর্মরত জ্যেষ্ঠ শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মোঃ আলমগীর হোসেনকে বুঝিয়ে দিবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছিক কলেজটির একাধিক শিক্ষক জানান, এহেন কোন অপকর্ম নেই যা তিনি করেননি। বাধ্য হয়ে কলেজের শিক্ষকরা মিলে অভিযোগ দিতে হয়েছিল। এমন কোনো শিক্ষক নেই যা তার রোষানলে পরেননি। এভাবে চলতে থাকলে কলেজটির শিক্ষার পরিবেশ আর থাকত না। সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীরা সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে তাঁদের দাবি, তদন্তের আলোকে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তিনি পুনরায় যোগদান করলে কলেজটির আর শিক্ষার পরিবেশ থাকবে না।
বরখাস্তের বিষয়ে জানতে চাইলে কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাসানুল সিরাজীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে তিনি শিক্ষাবার্তা’কে বলেছিলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও কালকিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, মাউশি ডিজি কর্তৃক তদন্ত ও মাউশির যে তদন্ত প্রতিবেদন এবং কলেজ পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অমান্য করা, করোনাকালীন ইন্টারমিডিয়েট এর ফরম পূরণের টাকা আমাদের জিবির সিদ্ধান্ত থাকার পরেও সে কোনো কর্নপাত না করে সেসব টাকা ফেরত না দেয়া এতে প্রমাণিত হয় যে তার মধ্যে অনিয়ম দূর্নীতি আছে। তাকে একাধিকবার জিবির পক্ষ থেকে শোকজ করা হয়েছে তার জবাব দেননি এবং সর্বশেষ মাউশি থেকে তাকে শোকজ করা হলেও তারও জবাবও দেননি। এককভাবে কলেজ পরিচালনা করে কলেজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসছে। আমরা সাধারণ শিক্ষকদের সাথে সমন্বয় করে কলেজটা চালানোর কথা বলেছি। আমাদের কলেজের আর্থিক বিষয়ে এক পয়সারও কোনো ইন্টারেস্ট নাই, পার্সোনাল কোনো ইন্টারেস্ট নাই। আমাদের নামে চার আনার কোনো ভাউচারও নাই। এই কারণে তাকে এখন সাময়িক বরখাস্ত করা হোয়েছে। চুরান্ত বরখাস্তের সিদ্ধান্ত আমরা নিব তদন্ত করার পরে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ পরিচালনার যে নিয়ম পদ্মতি আছে সে নিয়ম পদ্মতি অনুযায়ী আমরা এটা করবো
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৯/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়