অবরোধে শিক্ষার্থীদের বাসেও আগুন-হামলা, বাড়ছে শঙ্কা

শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সমমনা দলগুলো দ্বিতীয় দফায় অবরোধের ডাক দিয়েছে। এবার তারা রবিবার (৫ নভেম্বর) থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি করছে। অবরোধের আগের দিন শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত মাত্র আড়াই ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীতে পৃথক স্থানে চারটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একটি গ্রিন ইউনিভার্সিটির বাস।

এরপর মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সাইনবোর্ড এলাকায় আরও একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। প্রথম দফা অবরোধে গত ৩১ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় অল্পের জন্য রক্ষা পান বাসে থাকা শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, বছরের শেষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বার্ষিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন চলছে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সেমিস্টার ফাইনালসহ বিভিন্ন পরীক্ষা রয়েছে। এমন সময়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি ও সহিংসতায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

অভিভাবকরা বলছেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এবং সরকার নিজ নিজ অবস্থানে অনড়। তারা শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাবেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো হরতাল-অবরোধের আওতার বাইরে রাখার ঘোষণা দিলে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা আরও বাড়তো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর সব সরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় অবরোধেও সশরীরে ক্লাস চালু রয়েছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ক্লাস হচ্ছে। হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ভার্চুয়ারি ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়নি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেও শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ফলে রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যেও ঘর থেকে বের হতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

জানা গেছে, রোববার ভোর থেকে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর সারাদেশে দ্বিতীয় দফার অবরোধ কর্মসূচি শুরু হবে। তবে শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রাজধানীতে অন্তত চারটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে মাত্র ৩০ মিনিটের ব্যবধানে রাজধানীর নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড ও সায়েদাবাদে তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। সর্বশেষ রাত ১০টায় গুলিস্তান আন্ডারগ্রাউন্ড মার্কেটের সামনে আরেকটি বাসে আগুনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে এলিফ্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল্যান সিটি সেন্টারের সামনে গ্রিন ইউনিভার্সিটির বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

রাত পৌনে ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ সাইনবোর্ড এলাকায় অনাবিল পরিবহন নামের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে আদমজী ফায়ার স্টেশনের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভায়।

প্রথম দফায় বিএনপির তিনদিনের অবরোধের প্রথম দিনে গত ৩১ অক্টোবর সকালে জুরাইনের গেন্ডারিয়া স্টেশন এলাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নচূড়া নামে একটি বাসে হামলা চালানো হয়। বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাসটি নারায়ণগঞ্জ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসছিল। শিক্ষার্থীরা সেদিন ক্লাস করতে ক্যাম্পাসে আসছিলেন। বাসে ১৮-২০ জন শিক্ষার্থী ছিলেন।

এছাড়া অবরোধের সমর্থনে জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা দেন। পরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেই তালা ভেঙে ভবন খুলে দেন। এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল সন্দেহে দুই শিক্ষার্থীকে মারধরও করেন ছাত্রলীগের নেতারা। এতে ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের শঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে।

একই পরিস্থিতি হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানার ক্যাম্পাসের আশপাশে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রদল। তাদের বিক্ষোভের পরই অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। ফলে ছাত্রসংগঠনগুলোর মুখোমুখি অবস্থানে দেশের উচ্চশিক্ষাঙ্গনও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।

গ্রিন ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘শুনলাম আমাদের ভার্সিটির বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এটা শোনার পর আব্বু-আম্মু ক্যাম্পাসে যেতে নিষেধ করেছেন। বন্ধুদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। সবাই ভয় পাচ্ছে।’

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী নওমি শারমিন। তার বাবা নিয়ামুল করিম বলেন, ‘নভেম্বরটা স্বাভাবিকভাবে গেলে ভালো হতো। মেয়ের বার্ষিক মূল্যায়নটা শেষ হয়ে যেতো। ৯ নভেম্বর থেকে মূল্যায়ন শুরু। মেয়েকে নিয়ে ওর মা রোজ সকালে বের হয়। যতক্ষণ না বাসায় ফেরে অফিসে বসে দুশ্চিন্তায় সময় কাটাতে হয়।’

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ‘রাজনৈতিক এ হানাহানিতে কোনো শিক্ষার্থীর যদি ক্ষতি হয়, তার দায় নেবেন কে? কেউ তো নেবেন না। যার যাবে, যে হারাবেন সেই বুঝবেন শুধু। যদি এমন পরিস্থিতিতেও স্কুল-কলেজ খোলা রাখতে হয়, তাহলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের যাতায়াতের শতভাগ নিরাপত্তাও সরকারকে দিতে হবে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সোলেমান খান বলেন, ‘এসব (হরতাল-অবরোধ) কর্মসূচির মধ্যে যতদূর জানি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না। কেউ নিরাপত্তার কারণে যেতে না পারলে অনুপস্থিত দেখানোও হবে না। তবে সময়টা তো এমন যে এখন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখলে শিক্ষার্থীরা আবার পিছিয়ে যাবে।’ সূত্রঃ জাগো নিউজ

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৫/১১/২০২৩  

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়