অদক্ষ শিক্ষক মানবসম্পদকে বোঝায় পরিণত করবে!

আবদুল কাদের নাগিব: দেশে বিভিন্ন এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ না দিয়ে বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে আবার কেউ কেউ স্বজনপ্রীতি বা রাজনৈতিক ক্ষমতার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও যোগ্যতার বিচার হচ্ছে না। বিভিন্ন সময় দেশের বেশ কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির খবর দেশের মানুষকে চরম হতাশায় ফেলেছে তাদের সন্তানদের।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতা নয়, রাজনৈতিক বিবেচনা এবং ব্যক্তিপছন্দকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের অভিযোগ, নিয়োগে এই অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির কারণে অযোগ্য ও অনুপযুক্ত ব্যক্তিরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেছেন। এতে শিক্ষার মানে যেমন অবনতি ঘটছে, তেমনি উপযুক্ত জ্ঞানবান ডিগ্রিধারীর সংখ্যাও হ্রাস পাচ্ছে। ভাইস চ্যান্সেলর বা প্রভাবশালী শিক্ষকরা তাদের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সিলেকশন কমিটি ও সিন্ডিকেটগুলোকে বাধ্য করছেন তাদের পছন্দের প্রার্থীদের মনোনীত করতে। এক্ষেত্রে তারা আইন-বিধি ও প্রথার কোনো তোয়াক্কা করছেন না। অনেকে মনে করেন, অযোগ্য ও অনুপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগ হওয়ার বড় কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাপকভিত্তিক রাজনীতিকীকরণ। সরকার ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ করে নির্বাহী নির্দেশের মাধ্যমে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ নিয়োগ হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। আর রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসিরা রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে পারেন না। শিক্ষকই কেবল নয়, অন্যান্য নিয়োগ, শিক্ষকদের পদায়ন, দায়িত্ব বণ্টন ও প্রমোশনের ক্ষেত্রেও রাজনীতিই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। একটা সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো। এখন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় তার নাম থাকে না। বহির্বিশ্বে এক সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের যথেষ্ট সুনাম ছিল। সুনাম ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ আরও কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার আশায় বিভিন্ন দেশ থেকে ছাত্রছাত্রী আসত। এখন শিক্ষার মান, গবেষণার মান, পরিবেশের মান কমে যাওয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থী বলতে গেলে আসেই না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীতে সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, প্রকৌশল ইত্যাদি বিষয়ে বিশ্বমানের গবেষণা হয়েছে। এখন গবেষণা কমতে কমতে কার্যত প্রান্তিক অবস্থায় পৌঁছেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণার জন্য বরাদ্দ অবিশ্বাস্য রকম কমেছে। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, তাতে হতবাক ও বিস্মিত হতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ থেকে শুরু করে নির্মাণ কাজ, ঠিকাদারি, ক্যান্টিন পরিচালনা পর্যন্ত সর্বত্র এই দুর্নীতি বিস্তার লাভ করেছে। অন্যান্য ক্ষেত্রের দুর্নীতিকে মানুষ যেভাবে দেখে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিকে সেভাবে দেখে না কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক দুর্নীতি তাদের গভীরভাবে আহত করে।

কেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে? বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির সর্বশেষ খবর এসেছে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অভিযোগ উঠেছে ভাইস চ্যান্সেলর অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ দিয়েছেন। ছেলেকে সেকশন অফিসার ও মেয়েকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন। স্ত্রীকে অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। অন্যান্য নিযুক্তিতেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ইতোপূর্বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ইউজিসির তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া ৩৪ শিক্ষকের নিয়োগ স্থগিত হয়েছে। এর আগেও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তার পূর্ণ তদন্ত ও প্রতিবিধান হয়নি।

দুর্নীতির সঙ্গে অযোগ্যতার একটা নিকট সম্পর্ক রয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত অযোগ্যরা যেমন দুর্নীতি করে, তেমনি দুর্নীতির লালন ও বিস্তার ঘটায়। নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা, যোগ্যতা, উপযুক্ততা এবং পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড বিবেচনায় নিলে নিয়োগ যথার্থ ও ন্যায়ানুগ হবে। দুর্নীতি রোধে সরকারকে আরও গুরুত্ব দিয়ে এসব আমলে নিতে হবে।

শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৫/০৮/২০২৩  

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়