অজিদের শোচনীয় হার, ফাইনালে ইংল্যান্ড

খেলা ডেস্ক :

পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে হারিয়ে চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে ইংল্যান্ড। এতে ২৭ বছর পর ফাইনালে উঠলো ক্রিকেটের আবিষ্কারকরা। আগামী ১৪ জুলাই লর্ডসের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি স্বাগতিক ইংল্যান্ড। এজবাস্টনে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে টস জিতে ব্যাটিংয়ে ২২৩ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। টার্গেট তাড়া করতে নেমে ১০৭ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের জয়ে বিশ্বকাপের ১২তম আসরের ফাইনালে উঠে যায় ইংল্যান্ড।

পাঁচটি শিরোপা জিতে বিশ্বকাপে সবচেয়ে সফল অস্ট্রেলিয়া। ভারত জিতেছে দুটি বিশ্বকাপ। নিউজিল্যান্ডের কাছে প্রথম সেমিফাইনালে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে কোহলির দল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বাজেভাবে হেরেছে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া। এতে ২০১৯ বিশ্বকাপ বরণ করে নিচ্ছে নতুন চ্যাম্পিয়নকে।

এ নিয়ে মোট পাঁচবার বিশ্বকাপ আয়োজন করলো ইংল্যান্ড। তিনবার ফাইনালে উঠলেও কখনও শিরোপার উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতে পারেনি ক্রিকেটের আবিষ্কারকরা। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের এটা দ্বিতীয় ফাইনাল। গতবারের ফাইনালে তারা হার মেনেছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছ। ১৪ ‍জুলাই লর্ডসে শিরোপা লড়াইয়ে কিউইদের মুখোমুখি টুর্নামেন্টের স্বাগতিকরা। ক্রিকেট বিশ্ব পেতে যাচ্ছে নতুন চ্যাম্পিয়ন।

লিগ পর্বে অস্ট্রেলিয়া আর শ্রীলঙ্কার কাছে টানা দুই ম্যাচ হেরে বাদ পড়ার শঙ্কায় পড়ে যায় ইংল্যান্ড। কিন্তু ভারত আর নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে মরগানের দল।

অন্যদিকে শেষ চারে ধুঁকতে ধুঁকতে উঠেছে নিউজিল্যান্ড। দারুণভাবে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও এক সময় পথভ্রষ্ট নিউজিল্যান্ড হেরে যায় লিগ পর্বের শেষ তিন ম্যাচে। পাকিস্তানের সমান পয়েন্ট হলেও রান রেট তাদের এনে দিয়েছে শেষ চারের টিকিট। সেমিফাইনালে হট ফেভারিট ভারতকে হারিয়ে উইলিয়ামসন-বোল্টদের সামনে এখন শিরোপার হাতছানি!

টস জিতে স্বাগতিকদের ফিল্ডিংয়ে পাঠায় অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। ফিল্ডিংয়ে এসেই অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরে ইংল্যান্ড। ১৪ রানেই অজিদের তিন উইকেট তুলে নিয়েছে ইংলিশরা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই ফিঞ্চকে ফিরিয়ে দেন জফরা আর্চার। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ফিঞ্চ। সাজঘরে ফিরলেন খালি হাতেই। আর তৃতীয় ওভারে ওয়েকসের বলে স্লিপে বেয়ারস্টোর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ওয়ার্নার। ১১ বলে তিনি করেছেন ৯ রান। সপ্তম ওভারে ওয়েকসের বলে বোল্ড হয়েছেন পিটার হ্যান্ডসকম্ব। ১২ বলে হ্যান্ডসকম্ব করেছেন ৪ রান।

তৃতীয় উইকেট জুটিতে স্টিভেন স্মিথ ও অ্যালেক্স ক্যারি ১০৩ রান যোগ করে প্রাথমকি চাপ সামাল দেন। ৪৬ রান করা ক্যারি আদিল রশিদের বলে জেমস ভিন্সের তালুবন্দি হন। একই ওভারে মার্কাস স্টোইনসকে (০) ফেরান এই লেগস্পিনার।

এরপর গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ফিরিয়ে নিজের দ্বিতীয় উইকেট তুলে নেন জোফরা আর্চার। ২৩ বলে দুটি চার ও একটি ছক্কায় ২২ বরে ইয়ন মরগারের কাছে ক্যাচ দেন ম্যাক্সওয়েল। এরপর আদিল রশিদের তৃতীয় শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন প্যাট কামিন্স (৬)। সতীর্থদের যাওয়া-আসার মধ্যে উইকেটের একপ্রান্ত ধরে খেলতে থাকেন তিন নম্বরে নামা স্মিথ। তাকে সঙ্গ দেন পেসার মিচেল স্টার্ক। এই জুটিতে আসে আরও ৫১ রান।

ইনিংসের ৪৮তম ওভারে রানআউট হওয়ার আগে স্মিথ করেন ৮৫ রান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি মিস করা স্মিথের ১১৯ বলে সাজানো ইনিংসে ছিল না কোনো ছক্কার মার, ছিল ছয়টি বাউন্ডারি। স্মিথের বিদায়ের পরের বলেই ফেরেন ৩৬ বলে একটি করে চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে ২৯ রান করা স্টার্ক। নাথান লায়ন ৫, জেসন বেহেরনড্রফ ১ রান করেন। ৪৯ ওভারেই সবকটি উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ২২৩ রান।

জোফরা আর্চার ১০ ওভারে ৩২ রান খরচায় তুলে নেন দুটি উইকেট। স্পিনার আদিল রশিদ ১০ ওভারে ৫৪ রানের বিনিময়ে পান তিনটি উইকেট। বেন স্টোকস ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। ৮ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন লিয়াম প্লাংকেট। ক্রিস ওকস ৮ ওভারে ২০ রান খরচায় তুলে নেন তিনটি উইকেট। মার্ক উড ৯ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে একটি উইকেট পান।

২২৪ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত শুরু পেয়েছে ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন দুই ওপেনার জেসন রয় ও জনি বেয়ারস্টো। দুজনের জুটিতে উঠেছে ১২৪ রান। ইনিংসের ১৮তম ওভারে স্টার্কের বল এলবির শিকার হন বেয়ারেস্টো। রিভিও নিয়ে বাঁচতে পারেনি ইংলিশ এই ওপেনার। ৪৩ বলে ৩৪ রান করে ফিরেছেন তিনি। দলীয় ১৪৭ রানে স্টার্কের বলে ক্যারির ক্যাচ হয়ে ফিরলেন রয়। ৬৫ বলে ৮৫ রান তুলেছেন এই ওপেনার।

দলীয় ১৪৭ রানের মাথায় ‘বিতর্কিত’ এক ক্যাচে বিদায় নেন জেসন রয়। তার আগে ৬৫ বলে ৯টি চার আর ৫টি ছক্কায় করেন ৮৫ রান। এরপর ইয়ন মরগানকে সঙ্গে নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন জো রুট। তিন নম্বরে নামা জো রুট ৪৬ বলে আটটি চারে ৪৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। চার নম্বরে নামা দলপতি ইয়ন মরগান ৩৯ বলে আটটি চারে ৪৫ রান করে অপরাজিত থাকেন।